‘অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত’ নারীবিষয়ক সুপারিশমালা অবিলম্বে বাতিল ঘোষণা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়েত ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
রোববার (২০ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে জামায়েত ইসলামীর সেক্রেটারি বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা পবিত্র কোরআনের বিধানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের অস্তিত্বের ওপর একটি সুপরিকল্পিত আঘাত। এ প্রস্তাবনার মাধ্যমে দেশের ধর্মীয় ভারসাম্য, পারিবারিক কাঠামো ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ১৯ এপ্রিল শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হকের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, তা ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়।
তিনি বলেন, কমিশনের সুপারিশমালার ২৫ পৃষ্ঠায় মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিল করে নারী-পুরুষকে সমান সম্পত্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন মূলত আল্লাহর নির্ধারিত উত্তরাধিকার বিধান দ্বারা রচিত। এটিকে বাতিল করার অর্থ সরাসরি কোরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। এটি শুধু শরীয়তের অবমাননাই নয়, বরং মুসলিম পরিচয়ের মূলে কুঠারাঘাত।
গোলাম পরওয়ার বলেন, পবিত্র কোরআনে যিনাকে (বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক) মহাপাপ ও ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ প্রদত্ত সুপারিশমালায় যিনাকে উৎসাহিত এবং বিবাহকে নিরুৎসাহিত করে সরাসরি পবিত্র কোরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, আমরা মনে করি, এ ধরনের প্রস্তাবনা সমাজে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। সমাজকে অস্থিতিশীল করার সর্বনাশা করার চক্রান্তে কারা কলকাঠি নাড়ছে এবং মুসলিম পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন নিয়ে কারা ছিনিমিনি খেলছে, জাতির সামনে অতি দ্রুত তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
তিনি বলেন, কমিশনের সুপারিশমালার ৯ম পৃষ্ঠায় সব ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে; যা বাস্তবায়ন করা হলে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সবাইকে ধর্মীয় পারিবারিক বিধান থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি ধর্মহীন কাঠামোয় আসতে বাধ্য করা হবে। এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন। ৯ম পৃষ্ঠায় আরও বলা হয়েছে, জাতিসংঘ প্রণীত CEDAW সনদের অধীনে বিবাহ ও পারিবারিক ক্ষেত্রে আইনের বাস্তবায়ন করা দরকার।
তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য হলো, CEDAW-এর অনেক শর্ত সরাসরি ইসলামবিরোধী; যেখানে বিয়েকে শুধু একটি সামাজিক চুক্তি হিসেবে দেখা হয় এবং ইসলামী নিকাহ ও অভিভাবকত্বের মতো মৌলিক ধারণাগুলোর বিরোধিতা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সুপারিশমালার ৯ম পৃষ্ঠার আরেক জায়গায়, নারী-পুরুষের পারিবারিক ভূমিকাকে অভিন্নভাবে দেখার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের ইসলামিক স্কলাররা মনে করেন, ইসলাম নারী-পুরুষের মর্যাদা সমান মনে করলেও, তাদের ভূমিকায় প্রাকৃতিক পার্থক্যকে স্বীকার করে। তাই ‘নারী-পুরুষের পারিবারিক ভূমিকাকে অভিন্নভাবে দেখার’ প্রস্তাবটি ইসলামী সমাজব্যবস্থাকে বিকৃত করার অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, এমতাবস্থায় দেশের আলেম সমাজসহ আমরা মনে করি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উপরোক্ত বিষয়াদি সুবিবেচনায় নিয়ে জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন এবং দেশের সব ধর্মের নাগরিকদের ধর্মীয় বিধান সমুন্নত রেখে এ অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত সুপারিশমালা অবিলম্বে বাতিল ঘোষণা করবেন।
এদিকে, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল চেয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার কাকরাইলে হেফাজতে ইসলামের কার্যনির্বাহী কমিটির বিশেষ সভা শেষে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এ দাবি জানান।
মামুনুল হক বলেন, আমরা দেখেছি, নারী অধিকার সংস্কার কমিশন কর্তৃক কিছু প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে এবং সেটি ঐকমত্য কমিশনে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দাখিল করা হয়েছে। সেখানে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে ধর্মীয় বিধিবিধান, বিশেষ করে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন এবং ইসলামিক পারিবারিক আইনকে বাংলাদেশে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এই প্রস্তাবনাকে চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু এই প্রস্তাবনা বাতিল নয়, বরং এ ধরনের বিতর্কিত ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাতকারী কটাক্ষপূর্ণ প্রস্তাবনা দেওয়ার কারণে এ কমিশনকে বাতিল করার দাবি করছি।
তিনি আরও জানান, এ ঘোষণা প্রত্যাহার দাবিতে আগামী ৩ মে মহাসমাবেশ করা হবে। যদি এর আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নারী অধিকার কমিশনের প্রস্তাবনাকে প্রত্যাহার এবং ইসলামকে কটাক্ষপূর্বক এ ধরনের প্রস্তাবনা দেওয়ার দায়ে এ কমিশনকে বাতিল না করা হয়, তাহলে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :