দেশের বেসরকারি খাতে অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী আবুল খায়ের গ্রুপ এখন নানা অনিয়ম, দখল, দুর্নীতি ও রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে জর্জরিত। এক সময়ের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে পুঁজি করে গ্রুপটি দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি, নদী, খাল, এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয় দখল করে একপ্রকার ‘দখলের সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছে।
প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাস শুরু চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় ১৯৫২ সালে বিড়ির ব্যবসা দিয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি সিমেন্ট, স্টিল, সিরামিক, ঢেউটিন, দুধ, সিগারেটসহ বিভিন্ন খাতে কার্যক্রম বিস্তার করে। তবে এত বড় পরিসরে পৌঁছার পেছনে আইন, নৈতিকতা কিংবা সুশাসনের চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ‘শর্টকাট’ পথ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বলপ্রয়োগ, এমনটাই অভিযোগ।
সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আবুল খায়ের গ্রুপের বিরুদ্ধে জমি দখলের অসংখ্য অভিযোগ। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে শাহ সিমেন্টের নামে অন্তত ৬০০ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে যেখানে মাত্র ২০ বিঘা ছিল প্রকৃত মালিকানাধীন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, গাজীপুর, কালীগঞ্জ, মিরেরসরাইসহ বহু জায়গায় নদী, খাল, হালট ও ফসলি জমি ভরাট করে কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে সরকারি জমি ও নদীর জায়গা দখল করে কারখানা তৈরি করা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের পরও আবার তা দখলে নেওয়ার অভিযোগ আছে। একইভাবে সরকারি হালট দখল করে ১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়।
শুধু সরকারি সম্পত্তিই নয়, মসজিদ-মন্দিরের জমিও ছাড় পায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, আবুল খায়ের গ্রুপ গাজীপুরের বালীগাঁও এলাকায় মসজিদ এবং মন্দিরসংলগ্ন পুকুর দখল করে ফেলে নির্মাণকাজ চালিয়েছে। প্রশাসনের কাছে একাধিক অভিযোগ দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এছাড়া, পেট্রোবাংলার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঘুষের বিনিময়ে অবৈধভাবে তিনটি সংযোগে লোড দ্বিগুণ করে নেওয়ার পাশাপাশি ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকার বকেয়া বিলের তথ্য গোপন করেছে গ্রুপটি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৮ মে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হলেও নিরাপত্তা জামানত পরিশোধের দিন অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে বর্ধিত লোড কার্যকর করে রাজস্ব ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে ন্যূনতম মাসিক গ্যাস বিল যথাযথভাবে আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিক্রয় জোন-৮ থেকে আবুল খায়ের স্টিল লিমিটেডের শিল্প খাতের ও ক্যাপিটিভ খাতের আলাদা দুটি ছায়ানথি উপস্থাপন করা হয়।
রাজস্ব ডিপার্টমেন্টের হিসাবের আলোকে সংশোধিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী গ্রাহকের কাছ থেকে ন্যূনতম বিলের ভিত্তিতে ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতে পাওনা চার কোটি ৩৬ লাখ ৩১ হাজার ৭৮ টাকা এবং শিল্প খাতে পাওনা সাত কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ২৬৬ টাকা। এ টাকা আদায়ের জন্য জোন-৮ থেকে ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গ্রাহককে পত্র দেওয়া হয়।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। একাধিক মোবাইল কোর্ট জরিমানা এবং স্থাপনা সরানোর নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আবুল খায়ের গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে গ্রুপটির ফ্যাক্টরি ইনচার্জ ইমরুল কাদের ভূঁইয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইদানীং অভিযোগ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কারণ অভিযোগকারীরা আমাদের কাছ থেকে সুবিধা নিতে চায়। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজন যেসব অভিযোগ করেছে, তা মিথ্যা বরং তাদের কমপক্ষে ৩০ জন আমাদের কারখানায় কাজ করেন।’
আপনার মতামত লিখুন :