যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির কারণে এ পর্যন্ত ৩০ জন পুরুষ ও ১ জন নারীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
রোববার (২০ এপ্রিল) পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে শুরু করে। ফেরত আসা অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশের ৩০ পুরুষ ও একজন নারীর নামও আছে। অভিবাসন-সংক্রান্ত মামলায় হেরে যাওয়ার পরও তারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন।
তবে অভিবাসীদের মধ্যে যারা অবৈধ এবং বিভিন্ন মামলায় সাজা হয়েছে এমন ব্যক্তিদেরই ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো তালিকার তিনজনকে বিশেষ নিরাপত্তাসহ পৌঁছে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরা। বাকি বাংলাদেশিদের সাধারণ যাত্রীর মতো পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে পাঁচ বাংলাদেশিকে। ফ্লাইটটি একই ধরনের যাত্রী নিয়ে নেপাল হয়ে বাংলাদেশে আসে।
ফেরত আসা শাহাদত নোয়াখালীর বাসিন্দা। তিনি ৯ মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান এবং সাধারণ অ্যাসাইলাম চেয়েছিলেন। তবে তা মঞ্জুর না করায় ফেরত পাঠানো হয় তাকে।
শাহাদত জানান, ৯ মার্চ তাকে ফেরত পাঠানো হয় বাংলাদেশে। তবে বিমান খরচ যুক্তরাষ্ট্র সরকার বহন করেছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে এমিরেটস এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তুলে দিয়েছিল। কোনো অসম্মানজনক আচরণ করেনি। হাতকড়া পরানো বা বাজে কোনো ব্যবহার করেনি। আমি সাধারণ যাত্রীর মতোই এসেছি।’
এসবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশি নাগরিকদের যাতে সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠানো হয় এ ব্যাপারে শুরু থেকেই জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে সরকার। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকেও এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।’
বাংলাদেশের অনুরোধ এবং বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার কারণে বাংলাদেশি কাউকে হাতকড়া পরানো হয়নি বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। অনেক দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে সামরিক বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশিদের সাধারণ ও চার্টার্ড বিমানে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসী এবং গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের পর্যায়ক্রমে নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। তবে ভারতীয় নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে সামরিক বিমানবোঝাই করে পাঠানোর ঘটনা গণমাধ্যমে এলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
কয়েক দফায় এ পর্যন্ত ৩১ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রতিবারই আগে থেকে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে এবং শাহজালাল বিমানবন্দরে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের হস্তান্তর করা হয়। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে রেজিস্টারে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।
একাধিক সূত্র বলছে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস আগেই বাংলাদেশ সরকারকে অবৈধ হয়ে পড়া নাগরিককে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি অবহিত করেছে। এ নিয়ে সরকারকে কূটনৈতিক পত্রও দেওয়া হয়।
২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পর ২৯ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হয়। এতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর তথ্য এই প্রথম প্রকাশ পেল।
তথ্যসূত্রঃ সমকাল
আপনার মতামত লিখুন :