লন্ডনে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে পালিয়ে আসা আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রীদের ভূরিভোজে অংশ নিতে দেখা গেছে। একদিকে দেশে-বিদেশে দলীয় নেতা-কর্মীরা ভয়ে আতঙ্কে দিন পার করছেন, অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রীরা উৎসবের আমেজে মত্ত।
তারা পোলাও-কোরমা দিয়ে হাসিমুখে ভূরিভোজে অংশ নিচ্ছেন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। এতে সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
রোববার (২০ এপ্রিল) লন্ডনের ওটুর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুকের ছেলের বিয়েতে একসঙ্গে মিলিত হয়ে ভূরিভোজ সারতে দেখা গেছে দলটির নেতা-কর্মীদের।
আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ক্ষমতায় থাকাকালীন বিদেশে তৈরি করা সেকেন্ড হোমে আশ্রয় নিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। সেখান থেকেই এখন সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা এবং বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে মিলিত হতেও দেখা যাচ্ছে এসব নেতা-কর্মীকে।
বিয়েতে অংশ নেওয়ার তালিকায় রয়েছেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমান, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব।
এর আগে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা সারব আলীর ছেলের আকদ অনুষ্ঠানেও নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, ‘এদের লজ্জা বলতে কিছু নেই। দলের নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর না রেখে লন্ডনে বসে বিয়েবাড়িতে মজা করে ভূরিভোজে অংশ নেয়। এমন নেতাদের কর্মী যারা, তাদের এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে, এদের পরিহার করে তারা যেন সঠিক ও যোগ্য নেতার ছায়াতলে আসে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা বলেন, ‘বিয়েতে অংশ নেওয়া কোনো অপরাধ নয়। এটি ছিল আওয়ামী লীগের একটা মিলনমেলা। কারণ এখানে দলের শীর্ষ নেতাদের দেখে দলীয় অন্য নেতা-কর্মীরা কিছুটা মনোবল পেয়েছে।’
ওই নেতা আরও বলেন, ‘দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এতে অংশ নিয়েছে। তারা দলের সাবেক মন্ত্রীদের কাছে পেয়ে কিছুটা তৃপ্ত ছিল।’
যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিফতাহুজ্জামান সুহেল বলেন, ‘লন্ডনের অভিজাত এলাকায় যেখানে অনুষ্ঠান করা ব্যয়বহুল, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছেলের বিয়ে সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরা কতটা নিষ্ঠুর যে, দলের এই অবস্থায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাসিখুশি হয়ে যোগ দিতে পারে, তা সহজে অনুমেয়। সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে পালিয়ে আসা নেতাদের সম্পর্কে তাদের কর্মীদের ভাবা দরকার।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করে অনেকে লেখেন, ‘দল থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। যারা আমাদের ব্যবহার করেছে, তারা আজ কতটা নিরাপদ আশ্রয়ে সুন্দর জীবনযাপন করছে। মন্ত্রী-এমপি কয়জন মিছিল সমাবেশে মারা যায়? সাধারণ কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের প্রিয় সংগঠনের জন্য মাঠে নামছে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে এই প্রথম একসঙ্গে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল। তবে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর লন্ডনে শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল সমাবেশে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা যায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুর রহমান এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীকে।
এ ছাড়াও ২ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে লন্ডনে আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশে দেখা যায়।
৩০ মার্চ লন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে আসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। যদিও গুঞ্জন ছিল তিনি বেলজিয়ামে ছিলেন। তবে লন্ডনে অধ্যয়নরত ছেলের সঙ্গে ঈদ করতে তিনি লন্ডনে আসেন।