রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত ব্যবসায়িক এলাকায় দেড় কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- ঢাকা, সিটি ও আইডিয়াল কলেজ। তিন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ২০ থেকে ২৫ হাজার। কিন্তু এই তিনটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বছরজুড়ে সংঘর্ষ-মারামারি যেন লেগেই থাকে।
গত ৬ মাসে এ তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১২০ বার মারামারি-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে, প্রতি মাসে ঢাকা কলেজ ৭ থেকে ৮টি, সিটি কলেজ ৬ থেকে ৭টি আর আইডিয়াল কলেজ ৫ থেকে ৬টি মারামারি ও সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এসব সংঘর্ষ প্রাথমিকভাবে কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করা, চায়ের দোকানে বসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, প্রেমঘটিত বিষয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্যের মতো অপ্রত্যাশিত কারণে ঘটছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইগো ও হিরোইজম থেকে সংঘাতের সূত্রপাত। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, জড়িতদের টিসি দেওয়ার পাশাপাশি এ তিন কলেজে যাতে ভর্তি না হতে পারে সে-ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর পুলিশ বলছে, সংঘর্ষ হলেই এখন থেকে মামলা করা হবে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি থেকে মাঝে মাঝেই রণক্ষেত্রে রূপ নিচ্ছে মিরপুর সড়কের নিউমার্কেট মোড় থেকে সায়েন্সল্যাব মোড় পর্যন্ত। কখনো কখনো ছড়িয়ে পড়ছে সড়কের দুই পাশের গলিতেও।
কোনোভাবেই এ থেকে তাদের নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। মানুষের কৌতূহল, কী নিয়ে তাদের মধ্যে এত ঘনঘন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় তিন কলেজ এলাকার বাসিন্দারাও। ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা।
কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, ‘কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রের কারণে পুরো কলেজের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এর পাশাপাশি, এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’
সংঘর্ষ থামাতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, দায়বদ্ধতা আছে অভিভাবকদেরও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘এই তিন কলেজের বিষয়টি এখন তিক্ততার পর্যায়ে চলে গেছে। প্রধান দায়টা হলো সরকারের। যারা এখন ক্ষমতায় আছে, যাদের কাজ এখন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা, সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার।’
কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘শিক্ষার্থীদের মারামারি বন্ধে তিন কলেজ মিলে কমিটি গঠন করে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। তদন্তে দোষী হলে নেওয়া হচ্ছে কঠোর ব্যবস্থাও।’
ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক পারভীন সুলতানা হায়দার বলেন, ‘প্রতিটি ক্লাশে ক্লাশে গিয়ে তাদের বোঝানো হয়েছে। তাদের বোঝানো হয়েছে যে, তোমরা মারামারি-বিবাদ এসবের মধ্যে জড়িও না। তোমরা তোমাদের নিরাপদ রাখো এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করো, বাবা-মাকে স্বস্তিতে রাখো এবং দেশবাসীকেও।’
আইডিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ রেযওয়ানুল হক বলেন, ‘সংঘর্ষে জড়িত প্রমাণ হলেই শিক্ষার্থীকে আমরা সরাসরি টিসি দিয়ে দিচ্ছি। একটা সমস্যা হলো ধরুন সিটি কলেজ থেকে কাউকে টিসি দেওয়া হলো, সে গিয়ে আইডিয়ালে ভর্তি হচ্ছে, আবার আইডিয়াল থেকে টিসি দেওয়া হচ্ছে সে গিয়ে অন্য কলেজে ভর্তি হচ্ছে। এ শিক্ষার্থীরা কিন্তু এ এলাকার মধ্যে থাকছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বসতে যাচ্ছি। এ ৫ কলেজের মধ্যে কোনো ছাত্রকে টিসি দেওয়া হয়, তাহলে তাকে কেউ এ ৫ কলেজের মধ্যে তাকে ভর্তি নেবে না।’
সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক এফএম মোবারক হোসেন বলেন, ‘ঢাকা ও আইডিয়াল কলেজের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। যৌথভাবে মহড়া দেওয়া হচ্ছে এবং একটি টিমও গঠন করা হয়েছে। তারাও দায়িত্ব পালন করছে।’