অবশেষে সবচেয়ে মূল্যবান বনানীর ২০ বিঘা প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পাঁচ নেতাকে প্লট দিতে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। বনানী ২ নম্বর রোডে প্রকল্পের অবস্থান। এই প্রকল্পে ৫৪টি প্লট রয়েছে। যে পাঁচ বিএনপি নেতা এই প্রকল্পের প্লট পেতে যাচ্ছেন, তারা হলেন-খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, এহসানুল হক মিলন, এম নাসের রহমানের পক্ষে হাবিবুর রহমান এবং মেহেদী হাসান ও মহিউদ্দিন খান যৌথভাবে পাচ্ছেন একটি প্লট। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম।
রাজউকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এই পাঁচজনসহ বেশ কিছু রাজনীতিককে বনানীর ওই প্রকল্পের ৫৪টি প্লটের সব কয়টিই বরাদ্দ দেওয়া হয়। ভাগ্যবান ওই ৫৪ জনের মধ্যে ৪১ জনই বিএনপির নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। এর বাইরে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের দুই সাংসদকেও প্লট দেওয়া হয়।
বরাদ্দপ্রাপ্তরা হলেন-বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও মন্ত্রী আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক তথ্যমন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলাম, সাবেক মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা বরকত উল্লাহ বুলু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন, সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল, সাবেক সাংসদ মজিবুর রহমান সারোয়ার, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক সাংসদ নাজিমুদ্দিন আলম, ফজলুল হক মিলন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সেলিমা রহমান, আব্দুল হাই, নিখোঁজ ইলিয়াস আলী, প্রয়াত নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, খায়রুল কবির খোকন, মজিবুর রহমান মঞ্জু, মশিউর রহমান, জামায়াতের সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের ড. হামদিা বানু শোভা। হলফনামায় তথ্যে গরমিল থাকার অভিযোগে কয়েকজনের আবেদন বাতিল করা হয়।
২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে এসব প্লটের বরাদ্দ স্থগিত করে। এরপর ২০১৫ সালের ১৩ মে পূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে ‘কেইস টু কেইস’ বিবেচনায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় রাজউককে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর ২০১৫ সালেই আবেদন মূল্যায়নের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। তৎকালীন সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) কমিটির আহ্বায়ক নিযুক্ত হন।
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বর্তমান রাজউক চেয়ারম্যান আট সদস্যের কমিটি পুনর্গঠন করেন।
পদাধিকারবলে পুনর্গঠিত কমিটির আহ্বায়ক হন বর্তমান সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম। পরদিন কমিটির প্রথম সভায় বরাদ্দপ্রাপ্ত ৫৪ জন প্লট গ্রহীতার মধ্য থেকে সাতজনের আবেদনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দু’জনের আবেদন আপাতত স্থগিত করা হয়। স্থগিত করা দুই আবেদনকারীর মধ্যে রয়েছেন সেলিমা রহমান ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। বাকি পাঁচজনের আবেদন আমলে নিয়ে কমিটি প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশ করে বোর্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) ও কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কমিটি শুধু সুপারিশ করতে পারে, আর কিছু নয়। দেওয়া ও না-দেওয়ার এক্তিয়ার বোর্ডের।
তিনি আরও বলেন, ‘যে পাঁচ আবেদন বিবেচনা করা হচ্ছে, সেগুলো সম্পর্কে দুদক ও এনবিআর ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এরপর ক্রমান্বয়ে বাকি আবেদন নিষ্পত্তিতে হাত দেব।’
এদিকে রাজউকের নির্ভরযোগ্য ওই সূত্র দাবি করেছে, এই পাঁচ আবেদনকারীর প্লট প্রাপ্তিতে কার্যত এখন আর বাধা থাকছে না। কারণ কমিটির সুপারিশ থাকলে বোর্ড সাধারণত তাতে আর হস্তক্ষেপ করে না।
আপনার মতামত লিখুন :