২০১৫-১৬ অর্থবছরে কক্সবাজার বিমানবন্দরে জেনারেটর সরবরাহে পুকুরচুরির ঘটনা ঘটেছে। জেনারেটর সরবরাহ না করেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকাদার ৬০ লাখ টাকার বিল তুলে নিলে চার দিকে হৈ-চৈ পড়ে যায়। এ নিয়ে কেলেঙ্কারীর হোতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জেল খাটেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আশ্চর্যের বিষয় হলো, জেল থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর গুরুদণ্ড না দিয়ে উল্টো লঘুদণ্ড প্রত্যাহার করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) তাদের চাকুরিতে পুনর্বহাল করে এবং বিভিন্ন বিভাগে পদায়ন করে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কক্সবাজার বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১টি জেনারেটর সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। সর্বনিম্ন ৯০ লাখ টাকা দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পান ঢাকা ইন্টারন্যাশনালের মালিক শাহাবুদ্দিন। দরপত্রের শর্তানুযায়ী তিনি জেনারেটর সরবরাহে ব্যর্থ হন। কিন্তু হতবাক করে দেওয়ার মতো খবর হলো, বিমান বন্দরের সেই সময়কার ব্যবস্থাপক হাসান জহির, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজ, নির্বাহী প্রকৌশলী মিহির চাঁদ দে, সহকারী প্রকৌশলী ভবেশ চন্দ্র পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদার শাহবুদ্দিনকে ৬০ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করে দেন। বলা যায়, বিমানবন্দরের সকল কর্মকর্তার পেটেই চলে যায় এই বিপুল পরিমাণ সরকারী অর্থ। এই অভূত ঘটনা গণমাধ্যমে শিরোনাম হলে দুদক, কক্সবাজার স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা দায়ের করে।
মামলা নং-৮৬১/২০১৯। দীর্ঘ সময় ধরে অনুসন্ধানের পর দুদক ’২৩ সালে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। শুরু হয় বিচার। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গঠন করা হয় চার্জ। এই চার্জের বিরুদ্ধে বিমানবন্দরের সাবেক ব্যবস্থাপক হাসান জহির উচ্চ আদালতে রিভিউ মামলা দায়ের করেন। শুনানির পর উচ্চ আদালত মামলার বিচার কার্যক্রমের ওপর প্রথম ৬ মাস, এরপর আরও ৬ মাস এবং সবশেষে ১ বছর স্থগিতাদেশ দেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) যেনো তর সইছিল না। ঘটিয়ে বসে আরেক তুঘলকি কান্ড। মামলা নিষ্পত্তি না হতেই তারা তড়িঘড়ি কক্সবাজার বিমানবন্দরের সাবেক ব্যবস্থাপক হাসান জহিরের লঘুদণ্ড অর্থাৎ সাময়িক বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়ে তাকে ফায়ার বিভাগে পদায়ন করে। একইভাবে একে একে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজ, নির্বাহী প্রকৌশলী মিহির চাঁদ দে এবং সহকারী প্রকৌশলী ভবেশ চন্দ্রের সাময়িক বরখাস্তাদেশও প্রত্যাহার করে নিয়ে তাদের বিভিন্ন বিভাগে পদায়ন করা হয়।
এদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলী মিহির চাঁদ দে জন্ম দেন এক হাস্যরসাত্মক ঘটনার। তিনি সবার সানপেনশন চ্যালেঞ্জ করে বেবিচকের বিরুদ্ধে ঠুকে দেন মামলা। মামলা নং- ৪৪৫/২০২৩। এ মামলার ফলে তাদের বেতন-ভাতা যখন আটকে যেতে বসে, তখন মিহির মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন।
বেবিচক সূত্র বলছে, এ কারণেই হয়তো পুরস্কার হিসাবে গড়পড়তা তাদের সবার সানপেনশন তুলে নেয় বেবিচক। ওদিকে দুদকের মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় পিআরএলে চলে যান সহকারী প্রকৌশলী ভবেশ চন্দ্র। তিনি আবেদন করেন তাকে যেনো ৮০ ভাগ পেনশন দেওয়া হয় কিন্তু বেবিচক আগ বাড়িয়ে তাকে শতভাগ পেনশন দিয়ে দেয়। আইনের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এ ধরনের সেচ্চাচারিতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঔদাসিনের কথাই বুঝিয়ে দেয়।
আপনার মতামত লিখুন :