ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি, ২০২৫

অস্থিরতার মাঝে আশার আলো

মাইনুল হক ভূঁঁইয়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪, ১২:৫৯ এএম

অস্থিরতার মাঝে আশার আলো

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সম্ভাবনার দোলাচলে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সাল পার করেছে দেশের আবাসন খাত। বলতে গেলে বছরজুড়েই অস্থিরতায় কেটেছে এই খাতের। একদিকে পট পরিবর্তন, অন্যদিকে ড্যাপ সংশোধনের অপেক্ষা দুই মিলে সেবা খাতকে অস্থির করে তোলে। তার ওপর যোগ হয়েছে রড-সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রীর বাড়তি দাম। সব মিলে সেবা খাতটির জীবনপ্রদীপ টিমটিম করে জ্বলেছে। এর মাঝেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টার পাশাপাশি বেঁচে থাকার নিরন্তর লড়াইয়ে খাতটি রীতিমতো পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। ত্রিশঙ্কু এই অবস্থার মধ্যেও ৩ লাখের বেশি পরিবার খুঁজে পেয়েছে আপন ঠিকানা। অর্থাৎ, পেয়েছে নিজ ফ্ল্যাটের মালিকানা। এ তথ্য রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাবের।

তাদের তথ্যমতে, উচ্চ নিবন্ধন ব্যয়, ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ড্যাপ সংশোধনের বিলম্ব আবাসন খাতে স্থবিরতা তৈরি করে। অপ্রতুল কর্মসংস্থানের কারণে দিনে দিনে বেকারত্বের মিছিল বাড়ছে। নতুন প্রকল্প গ্রহণে সমস্যা হওয়ায় নতুন ফ্ল্যাট নির্মাণ শূন্যের কোটায় এসে ঠেকেছে। তবু হাল ছাড়েনি কর্তৃপক্ষ। সেবা খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে ছোট ছোট মেলা করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া রিহ্যাবের পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলায় অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়ায় আবাসন খাতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, মেলায় ৪০৩ কোটি ১২ লাখ ৭৪ হাজার টাকার প্লট, ফ্ল্যাট, বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রি ও বুকিং হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ফ্ল্যাট বিক্রি ও বুকিং হয়েছে ২৩০ কোটি টাকার আর ৯৬ কোটি টাকার প্লট এবং ৭৭ কোটি ১২ লাখ ৭৪ হাজার টাকার বাণিজ্যিক স্পেশ বিক্রি ও বুকিং হয়েছে। এ ছাড়া মেলায় গৃহঋণ পেতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা ঋণপ্রাপ্তির আলোচনা হয়েছে ক্রেতাদের। হিসাব অনুযায়ী, মেলায় দর্শনার্থী এসেছে ১৭ হাজার ৭২৯ জন।

অস্থিরতার কারণ : নির্মাণ খাতের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি। ফলে চাপে পড়ে দেশের আবাসনশিল্প। অনেকে মনে করেন, পূর্বেকার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এই শিল্পে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে হাউজিং শিল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। হাউজিং কোম্পানিগুলোর প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রি নেমে আসে প্রায় অর্ধেকের কোঠায়। ইস্পাত উৎপাদনে প্রায় ৬৫ শতাংশ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ে রডের দামও। প্রতি টন রডের দাম বাড়ে গড়ে ২ হাজার টাকা।

এদিকে ডলারের দামের ওঠানামা ভয়ানক সমস্যায় ফেলে। কারণ, ইস্পাত খাতের কাঁচামাল, রাসায়নিক ও যন্ত্রাংশের ৮৫ ভাগই আমদানিনির্ভর। অন্যদিকে খুচরা পর্যায়ে ব্র্যান্ড-ভেদে বস্তাপ্রতি সিমেন্টে বাড়তি দামে ৫০০ থেকে ৫৬০ টাকায় বিক্রি হয়। কখনো কখনো তা ৬০০-৬৩০ টাকায় গড়ায়। তার ওপর কাঁচামাল আমদানির সংকটেও কমবেশি পুরো খাতে ছায়া পড়ে। শুধু তাই নয়, রড-সিমেন্টের মতো বালু, পাথর, গ্রিল, রেলিং ও শ্রমিকের মজুরি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। প্রতি ফুট এলসি পাথর ২১৫ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়। অবস্থাভেদে বাড়ার অঙ্কে যোগ হয় ৫-১০ টাকা। ১৫-২০ টাকা বেড়ে পাইলিংয়ের পাথর বিক্রি হয় ১৯০ টাকা। ১০-১৫ টাকা বেড়ে প্রতি সিএফটি লাল বালু বিক্রি হয় ৫৫-৬০ টাকা। ৫-১০ টাকা বেড়ে সাদা বালু বিক্রি হয় ২০-৩০ টাকা। লোকাল সাদা বালুর দাম ছিল ১৭ টাকা। ভরাট বালুর দাম বেড়ে দাঁড়ায় সিএফটি প্রতি ১২ টাকা। উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি নিবন্ধন ব্যয়, সুদের হার বৃদ্ধি এবং রাজউক প্রণীত ড্যাপ সংশোধনী বিলম্বের কারণে গোটা আবাসন খাতকে অস্থিরতায় ফেলে।

আরবি/জেডআর

Link copied!