ঢাকা: কোটা সংস্কারের জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়, সরকারের দমন-নিপীড়নের মুখে তা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস ভূমিকার কারণে কয়েকশ নিরস্ত্র নাগরিকের মৃত্যু হয়। আহত হয় হাজারো ছাত্র-জনতা। ফলশ্রুতিতে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন আমল।
গণঅভ্যুত্থান ঘিরে পুরো জুলাই এবং আগস্টে সারা দেশের পুলিশ বাহিনী যেখানে সরকারের নির্দেশ পালনে ছাত্র-জনতার উপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। একই সাথে, তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণের অভিযোগ রয়েছে।
সেখানে, স্রোতের বিপরীতে গিয়ে বিবেকের তাড়নায় নিজের বাহিনীর বিরুদ্ধে দাড়িয়ে, গণমাধ্যম, সোশাল মিডিয়ায় সরব ভূমিকা পালন করে গেছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। যার জন্য পেয়েছেন অনেক হুমকিও! তবুও দমে যাননি তিনি!
এই পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে জানান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান, ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য সালেহ আহমেদ। তিনি বলেন, অকুতোভয় সেই পুলিশ কর্মকর্তার নাম ফরহাদ কবির। ফরহাদ ৩৩ তম বিসিএস (পুলিশ) এ মেধায় চাকরি পান। ২০১৪ সালে একাডেমি ট্রেইনিং-এ ৩য় হয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে চাকরি জীবন শুরু করেন।
সালেহ আহমেদ জানান, ফরহাদ একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় চাকরি জীবনের শুরু থেকে পুলিশ সদর দপ্তরের আইসিটি শাখায় এক পদেই তাকে দায়িত্বে রাখা হয়। গত ১০ বছরের চাকরি জীবনে কেবল মাত্র এক চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। যে বিষয়টি হয়তো বাংলাদেশে বিরল ঘটনা। তবুও তিনি হতাশ না হয়ে কাজ করে গেছেন, এবং এখনো কাজ করছেন দেশের জন্য।
ফরহাদ, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯, অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, করোনার সময় `মুভমেন্ট পাস` ইত্যাদি কাজের টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট করে নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন করেন। ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন এর মাধ্যমে পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌছানোর জন্য কাজ করে গেছেন। তদবির সংস্কৃতিতে, গাঁ না ভাসানোয় স্বৈরাচার সরকার তাকে কখনোই ফিল্ড পুলিশিং এ পোস্টিং দেয়নি ।
২০২১ সনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য GMAT পরীক্ষা দিয়ে, বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সর্বোচ্চ স্কোর ৮০০ এর ভিতর ৭৭০ (৯৯%) পান। ফলে তিনি, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ও ইউএস নিউজের টপ ১৫ র্যাংকিং এ থাকা এমআইটি স্লোন স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট, নিউইয়র্ক স্টার্ন স্কুল অব বিজনেস ও ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া মার্শাল স্কুল অব বিজনেস সহ প্রায় ৭ টি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফুল টাইম এমবিএ তে অধ্যয়নের সুযোগ পান।
ফরহাদ ফুল ফান্ডেড ডীন্স স্কলারশিপ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া মার্শাল স্কুল অব বিজনেস হতে ২০২৩ সনে এমবিএ সম্পন্ন করেন।
এদিকে, পড়াশোনা শেষ হলে ২০২৩ এর অক্টোবর মাসে যোগদানপত্র দেওয়া ছাড়াই ফরহাদকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে নিয়মবহির্ভূতভাবে তাকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে পদায়ন করা হয়।
ফরহাদ ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরনকারী ও গনতন্ত্র হত্যার ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারী আরো একটি প্রহসনের নির্বাচনে সরকারী নির্দেশ মেনে যে কোন অনৈতিক কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে চেয়েছিলেন।
যারফলে, পুলিশের এই অফিসার সেই পদায়ন গ্রহণ না করে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। পরবর্তীতে পড়াশোনা শেষে অপশনাল প্র্যাক্টিক্যাল ট্রেইনিং হিসেবে সিলিকন ভ্যালি বেইসড একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে কাজ করা শুরু করেন।
পরবর্তীতে জানুয়ারী, ২০২৪ এর ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় সেই আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসায় তিনি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেন যে এই অবৈধ আওয়ামী সরকারের আর চাকরিতে প্রত্যাবর্তন করবেন না।
পুলিশ কর্মকর্তা ফরহাদ কবির ৫ ই জানুয়ারীর পর থেকে দেশের মানুষের পক্ষে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নানা অন্যায় জুমুলের বিরুদ্ধে সরব ভুমিকা রাখেন। চাকরির মায়া না করে কথা বলেছেন, গণমাধ্যমে করেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা।
ফরহাদ কবির জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে বিশেষ করে, আবু সাইদের হত্যার দিন (১৬ জুলাই) থেকে ছাত্রদের পক্ষে লিখে গেছেন নিজের ফেইসবুক ওয়ালে। আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ইন্টারনেট শাটডাউন করে গনহত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য সিনেটর টিম কেইনসহ অন্যান্য অনেক সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করেন ফরহাদ।
এ বিষয়ে, ফরহাদ কবিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম, যে কারণে আমার উপর বিদায়ী সরকারের দোষরদের দ্বারা নানা চাপে থাকতে হয়েছে। তবে, আমি আমার কর্তব্য অটল ছিলাম এবং আছি।
উল্লেখ্য, পুলিশ অফিসার ফরহাদ কবির ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন পাবলিক আলোচনায় কিভাবে পুলিশকে আরো স্বচ্ছ এবং আধুনিক করা যায় সে বিষয়ে নানা যুক্তি ও প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। তিনি মনে করেন যে, সামনের দিনগুলোতে সাইবার ক্রাইমই হবে বেশি।
বিগত ১৫ বছর বিরোধী মতকে দমনে ব্যস্ত থাকায় সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশ পেশাদারী সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশে ফিরে তিনি পুলিশের কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিজিটালাইজেশন করে বিশেষ করে সাইবার ক্রাইম দমন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে অপরাধ প্রবনতা দমনে দেশের ।
আপনার মতামত লিখুন :