গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে পতন হয় ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকারের। এরপর দেশের দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই রদবদল শুরু হয় প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের প্রায় প্রতিটি অঙ্গনে। সেই সঙ্গে এই সরকারের তিন মাসে উপদেষ্টা পরিষদেও রদবদল হয়েছে একাধিকবার।
সর্বশেষ গত রোববার (১০ নভেম্বর) নতুন করে ৩ জন উপদেষ্টা শপথ নেয়। যে তিনজন উপদেষ্টা হলেন, তারা হলেন- শিল্পগোষ্ঠী আকিজ-বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
আর এই নতুন তিন উপদেষ্টা শপথ নেয়ার পর থেকে আবারও অস্বস্তিকর এক পরিবেশ সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। বিশেষ করে, সেখ বশির উদ্দিন ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এ বিষয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ সমন্বয়ক-শিক্ষার্থী ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা বিভিন্ন মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়ে বলছেন, স্বৈরাচারের দোসরদের নানাভাবে পুনর্বাসন করা হচ্ছে, ‘যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি’। এমনকি প্রতিবাদস্বরূপ আবারও নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি লাল করেছেন তারা।
নতুন তিন উপদেষ্টা নিয়োগের পর সর্বপ্রথম আবারও ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার আহ্বান জানান সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য। তিনি তার ফেসবুকে লিখেন, ‘জুলাই শেষ হয় নাই। আসেন আমরা আমাদের প্রোফাইল ফটো আবারো লাল করে রাখি।’ আরেক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘আজকে ১৩৬ জুলাই’।
এরপরই শুরু হয় প্রোফাইল লাল করার হিড়িক। এরপর নিজের ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি লাল করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। সোমবার (১১ নভেম্বর) রাত ১০টা ৫২ মিনিটে প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে তিনি ক্যাপশনে লিখেন, ‘সাঈদ ওয়াসিম মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। ১৩৪ শে জুলাই, ২০২৪।’
এর আগে আরেকটি পোস্টে হাসনাত লিখেন ‘বশির-ফারুকীকে উপদেষ্টা করার প্রতিবাদ সভা থেকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা চরম ফাইজলামি। এগুলা ভণ্ডামি। আপনেরা হাসিনা হয়ে ওঠার চেষ্টা কইরেন না। হাসিনারেই থোরাই কেয়ার করছি, উৎখাত করছি। আপনেরা কোন হনু হইছেন?’
আরিফুল ইসলাম নামক এক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘সবার ভেতরে থাকা লাল, আবার টগবগ করুক। চিরচেনা সেই উষ্ণতা, আবার ফিরে আসুক। হাজার হাজার প্রোফাইল লাল হওয়ার পরও যদি উপদেষ্টা পরিষদের টনক না নড়ে, তাহলে রাজপথ লাল হতে দেরি নাই।’
প্রতিবাদস্বরূপ ফেসবুক প্রোফাইল লাল করেছেন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরও। সেইসঙ্গে উপদেষ্টা নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ১১টি প্রশ্নের উত্তরও চেয়েছেন তিনি। সেগুলো হলো— উপদেষ্টাদের কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয় এবং কারা নির্বাচিত করেন? উপদেষ্টারা কি কোন বিশেষ ব্যক্তির নিয়োগ সুপারিশ করতে পারেন, কিসের ভিত্তিতে সুপারিশ করা হয়? ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তিনজন সমন্বয়ক ছাত্রকে কোন যোগ্যতায় উপদেষ্টা নির্বাচিত করা হয়েছে? এই আন্দোলনে জনতার পক্ষের যারা স্টেক হোল্ডার তাদের একজনও কেন উপদেষ্টা মণ্ডলীতে নেই?
আলোচিত এই সাংবাদিক প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু সরকারে তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই কেন? উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রিকশাচালক এই আন্দোলনে নিহত হয়েছেন, তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই কেন? আওয়ামী লীগের পদলেহনকারী সেনা কর্মকতারা এখনো কীভাবে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন, তাদের কেন বরখাস্ত করা হচ্ছে না? ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গ্রামীণ ব্যাংকের অবদান কি? গ্রামীণ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের কিসের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে? আলী ইমাম মজুমদারের মতো একটা আওয়ামী ভৃত্য কেন সরকারের অংশ? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তৌহিদকে কার পরামর্শে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং কেন?
এর আগে আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা করার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে ‘তাওহিদি ছাত্র জনতা’ -এর ব্যানারে আয়োজিত এক সভা পণ্ড হয়ে গেছে। সোমবার এই সভা থেকে পাঁচ জনকে আটক করে পুলিশ। আটকদের মধ্যে চার জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন– শিবলী নোমান, ওসামা, মবিন ও তওকীর।
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে ফেসবুক প্রোফাইল লাল করেছিলেন হাসনাতসহ অন্য সমন্বয়করা।
আপনার মতামত লিখুন :