ঢাকা রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

আন্দোলনকালে শিশুদের নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৭:৫২ পিএম

আন্দোলনকালে শিশুদের নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থ

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাকক্ষে শিশু অধিকার ও শিশুশ্রম বিষয়ক থিমেটিক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহত শিশুদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম নিরসন, আইনি কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ নিয়ে চেয়ারম্যান বক্তব্যে প্রাধান্য দেন। আলোচনায় বলা হয়, আন্দোলনকালে শিশুদের নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে।

সভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশুর মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করা হয়। উপস্থিত সকলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তাঁদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। নিহত শিশুদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি নিহত ও আহতদের পরিবারসমূহকে ক্ষতিপূরণ ও সার্বিক সহায়তা নিশ্চিতকরণ ও নিরাপত্তা বলয়ে আনতে একটি বোর্ড গঠনসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা পেশ করেন আলোচকগণ।

শিশুদের অধিকার সুরক্ষা, একটি স্বাভাবিক ও নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠার নিশ্চয়তা ও শিশুশ্রম নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করা হয় সভায়। এ সময় শিশুদের বিভিন্ন রাজনৈতিক মিটিং, মিছিল ও নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার প্রতিরোধ করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে নয়, বাস্তবে এর প্রয়োগ দেখতে কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানান আলোচকবৃন্দ।

আলোচনাকালে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন শিশুর মৃত্যুর ঘটনাগুলো দুর্ভাগ্যজনক এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিলো সকলকে নিরাপত্তা প্রদান করা, যা করতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে প্রতিটি ঘটনা পৃথকভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনাপূর্বক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে শিশু সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় সকল ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আন্দোলনকালীন সহিংসতায় শিশুদের উপর যেসব নেতিবাচক শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়েছে তা দ্রুত কাটিয়ে উঠার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি শিশুদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে সেসব দ্রুত নিরসন ও নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আহত শিশুদের ব্যক্তি ভিত্তিক তালিকা ও বিবরণ প্রস্তুত করে অতসত্বর তাঁদের যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করতে হবে এবং নিহতদের পরিবারের পক্ষে সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে সহায়ক ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাল্যবিবাহ বিষয়ে আলোচনাকালে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এসডিজির ৫.৩ নং অনুচ্ছেদে বাল্যবিবাহ ও জোরপূর্বক বিবাহ নিরসনে যে অভীষ্ঠ লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সে বিষয়ে লক্ষ্যনির্ভর ও সুনির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক কর্মপন্থা নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এটি দুর্ভাগ্যজনক যে বিশ্বব্যাপী বাল্যবিবাহ হারের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ সারিতে অবস্থান করছে। বাংলাদেশে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ের হার ৫১ শতাংশ যা এশিয়ার মধ্যে সর্বাধিক। বাল্যবিবাহের বহুমাত্রিক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। প্রচলিত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি এবং মনস্তত্ত্ব বিদ্যমান রেখে শুধু আইন প্রণয়নে বাল্যবিবাহ নিরসন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমাদের একেবারে প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে। বাল্যবিবাহ নির্মূলে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ইতিবাচক ধারণা সৃজন করতে হবে এবং ধারণাগুলো সমাজের সকল স্তরে অনুধাবন ও প্রতিপালনের মত করে গ্রহণের জন্য মানসিকতা তৈরিতে ব্রতী হতে হবে।

এদিকে বিদ্যমান শ্রম আইনের বিভিন্ন দিক বিবেচনাপূর্বক এটি সংশোধন ও আরও শক্তিশালী  করার আহ্বান জানান চেয়ারম্যান। শিশুশ্রমের জন্য বয়স ও কর্মঘণ্টা বিষয়ক আইনের বিদ্যমান বিতর্ক নিরসনপূর্বক সরাসরি শ্রমে নিয়োজন ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম হতে বিরত থাকার বিষয়ে বিধান রাখার প্রতি গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানান তিনি। অন্যদিকে, কমিশন ইতোমধ্যে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইনের খসড়া ও গৃহকর্মী (কল্যাণ ও সুরক্ষা) আইনের খসড়া মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে। এই আইনের কার্যকর ব্যবহার শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন চেয়ারম্যান।  

উল্লেখ্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও একাধিক বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কক্সবাজারের রামুর দুর্গম এলাকায় চারটি গ্রাম, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার কয়েকটি গ্রামসহ ৩টি উপজেলার কয়েকটি (৯টি) গ্রাম বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি,  ১৩২৩টি গ্রাম বর্তমানে বাল্যবিবাহমুক্ত করার ঘোষণার জন্য প্রস্তাবিত রয়েছে। এগুলো কমিশন গভীর অভিনিবেশ সহকারে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিয়মিত সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নিয়ে সভা ও সেমিনার আয়োজন করে যাচ্ছে যাতে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে বাল্যবিবাহ নিরোধ করা করতে পারে।

 

আরবি/এস

Link copied!