ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: এম. সাখাওয়াত

মাইদুর রহমান রুবেল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ০৬:৪৬ পিএম

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: এম. সাখাওয়াত

ছবি সংগৃহীত

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা যায়নি বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের কথা থাকলেও গত দেড় দশকে সবচে বেশি উপক্ষিত ছিলো ভোটাররাই। একের পর এক একতরফা নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ থেকে জনগনকে বঞ্চিত করেছে আওয়ামীলীগ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরচার হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো।

দীর্ঘদিন ভোটের বাইরে থাকলেও এবার ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে দেশের মানুষ। আর তার জন্য  সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন কিভাবে করা যায় তার জন্য আয়োজিত এই সংলাপে ডেমোক্রেসি ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তালেয়া রহমান বলেন সিস্টেম ঠিক না করে নির্বাচন কমিশনে ফেরেশতা বসিয়ে দিলেও বাংলাদেশে সুষ্টু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, এই দেশে যে সরকার ক্ষমতায় যায় তারাই চায় তাদের পছন্দের লোক নিয়ে নির্বাচক কমিশন গঠন করতে ফলে যা হবার তাই হয়।

বাংলাদেশে জামায়েত ইসলামি বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আখন্দ বলেন, ক্ষমতায় থাকা বা যাওয়ায় প্রবনতা বন্ধ না হলে গুনগত পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ১৭ বছর দেশের মানুষ ভোটের বাইরে ছিলো, তারা এখন ভোট দিতে চায়। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি দক্ষ সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবও দেন তিনি। জনগণ সবচে বড় শক্তি জনগনের বাইরে কিছু নেই। বলপ্রয়োগ করে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া যায় কিন্তু মানুষের মনে জায়গা পাওয়া যায় না। সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দল এই তিন পক্ষের সদিচ্ছা ছাড়া ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইন ছিলো কি ছিলো না তা অনেকেরই অজানা। সংবিধানে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হলেও তারা আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর ছায়াতে থেকে তাদের লক্ষ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে এসেছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা ক্যাডার হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় স্বতন্ত্র করা প্রয়োজন এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই করা উচিত। সংসদ দ্বিকক্ষ বিষিষ্ট হলে জবাবদিহিতার পরিধি বাড়বে। সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান সংস্কা প্রয়োজন। এই (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকার সিস্টেমের পরিবর্তন করতে না পারলে কোন রাজনৈতিক সরকার এটি আর পরিবর্তন করতে পারবেনা। এবং এর জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়া প্রয়োজন।

বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এটা সত্যি যে দেশটা এমন একটা জায়গায় আওয়ামীলীগ পৌছে দিয়েছে যেভাবে ফেরেশতা বসিয়ে দিলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এখন পালিয়ে গেছে আওয়ামীলীগ। দেড় মাস আগেও আওয়ামীলীগ ছাড়া কাউকে দেখা যেত না। এখন কোথায় তারা দুরবীন দিয়েও এখন আওয়ামীলীগের নেতাদের খুজে পাওয়া যায় না। আমার মনে হয় ক্ষমতায় ওই চেয়ারটাতেই সমস্যা। আমার মনে হয় ওই চেয়ার পরিবর্তন করার সময় এসেছে। মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি মনে করেন, নির্বাচনে পেশিশক্তি একটি বড় সমস্যা। আওয়ামীলীগ যতদিন ক্ষমতায় ছিলো তারা তাদের সর্বশক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন, সবকটিতে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তার কোন নমুনা দেখিনি আমরা রাজনীতিবিদরা। নির্বাচন সচিবালয় থেকে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করে। এজন্য নির্বাচন সচিবালয়ে নিয়োগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান মনে করেন, রাষ্ট্র সংস্কার অল্পদিনের কাজ নয়, তারজন্য দরকার রাজনৈতিক সরকার। নবীন প্রবীনের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারলে সুষ্টু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সৎ যোগ্য সাহসী নির্বাচন কমিশনের কোন বিকল্প নেই। আওয়ামীলীগের নেতারা তখন বলেছিলো আওয়ামীলীগ গেলে কে আসবে, দেখে যান কে এসেছে, ড. ইউনুস চালাচ্ছে দেশ। আপনাদেরচে ভালোভবেই চালাচ্ছে। নির্বাচনের সময় ডিসি এসপিরা অনেক চাপে থাকে এটা সত্য। তাদের চাপ মুক্ত করতে হবে। যাতে করে নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারে।

নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা দুর করা সম্ভব। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কি প্রক্রিয়ায় হবে তার একটি প্রক্রিয়া আমরা অনেক আগেই করেছি, তার খসড়া তৈরি করা আছে। আগের সরকার সেটি দেখতেই চায়নি। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে আউয়াল কমিশন গঠন করা হয়েছিলো তার ফল তো দেখলেন। নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। কিভাবে গঠন করা হলো সবাই যাতে দেখতে পারে।

বিগ্রেডিয়ার শাখাওয়াত হোসেন তার বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের সময় কেউ কারো কথা শুনতে চায় না। সবার লক্ষ্য থাকে কিভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন, কিন্তু তার প্যাকটিস নাই। দলীয় সরকার চায় তাদের মতো নির্বাচন করতে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেই সংস্কার করা প্রয়োজন। কাল যে সংস্কার করা হবে, তা যে আজীবন থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সুষ্ঠু সির্বাচন করতে চাইলে নির্বাচন কমিশনকে কাজ করতে দিতে হবে।  

পুলিশকে মানব থেতে দানব বানিয়েছে আওয়ামীলীগ সরকার। ছাত্র বিক্ষোভে পুলিশের হাতে যে অস্ত্র দেখেছি আমি জানতে চেয়েছি তারা এসব মরনাস্ত্র কোথায় পেল, কে দিয়েছে তাদের হাতে। অথচ আমাকে ভুল কোড করা হয়েছে। পুলিশের হাতে ৭.৬২ অস্ত্র আসার কথা নয়। এই অস্ত্র দিয়ে গুলি করলে বুকে লাগলে প্রাণ চলে যাবে। আর হাত পায়ে লাগলে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এই অস্ত্র এবার ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশের হাত থেকে এই অস্ত্র দুবৃত্তদের হাতে চলে গিয়েছিলো। এটা খুবই ভয়ংকর।  

অন্তর্বতী সরকার চাইলে রাজনৈতিকদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।

আরবি/এস

Link copied!