ঢাকা: বিগত ১৬ বছর একটানা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে প্রশাসনে ফ্যাসিদবাদের দোসরদের শিকড় অনেক গভীর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। আমরা সচিব পর্যায়ে পরিবর্তন করছি, বিভিন্ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পরিবর্তন করছি কিন্তু প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান তিন মাস পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘রাষ্ট্র ও প্রশাসনের সর্বস্তরে বৈষম্য নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম মূল্যায়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, বিগত সময়ে যে ফ্যাসিবাদি সরকার ছিল তাদের পলিসি ডিসিশনগুলোই ছিল জনবিরোধী, গণতন্ত্র হত্যাকারী। প্রশাসনের মধ্যে থাকা তাদের দোসররা সেটি বাস্তবায়ন করেছে। অনেকক্ষেত্রে প্রশাসনের মধ্যে থাকা কিছু কিছু অফিসার দলীয় নেতাদের থেকেও বেশি রাজনৈতিকভাবে সে দায়িত্বগুলো পালন করেছে। বিগত সরকারের সময় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ একজনের কিছু তথ্য পেয়েছিলাম। সেখানে তিনি বিভিন্ন জেলার এসপিদের নির্দেশনা দিচ্ছেন, যে কোথায় কোথায় গুলি করতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, অন্যান্য সেক্টরে যারা ছিলেন তারাও দলীয় কর্মীদের মতো সরকারের বাহিনীগুলোতে গুলি করার নির্দেশনা দিয়েছেন ছাত্র-জনতাকে হত্যা করার জন্য। পেশাদারিত্বের যে অবক্ষয়টা ঘটেছে এবং সেগুলোকে প্রশ্রয় দিয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকার। সেই অবক্ষয় যাতে ভবিষ্যতে আর কখনও না ঘটে সেটা আপনাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে।
অফিসার্স ক্লাবে উপস্থিত সরকারের বর্তমান ও সাবেক আমলাদের উদ্দেশ্য করে আসিফ মাহমুদ বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেটা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে আপনারা মতামত দিবেন। কীভাবে সংস্কার করলে বা কাঠামোগত পরিবর্তন করলে ভবিষ্যতে আর কখনও প্রশাসনে এতটা দলীয়করণ সম্ভব হবে না, ভবিষ্যতে এতোটা দলদাসের মতো কার্যক্রম হবে না, জনবিরোধী অবস্থান নিবে না, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আপনাদের মতামত দেবেন। শুধু আমরা ২৪ জন উপদেষ্টা এবং একজন প্রধান উপদেষ্টাই সরকার না। আপনারা সরকারের অন্যতম অংশ। আমাদের পলিসি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আপনাদের।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, এই অভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছে তারা কেউ ক্ষমতার পালাবদলের জন্য জীবন দেয়নি। তারা একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য আত্মত্যাগ করেছে। একটা সুষ্ঠু রাষ্ট্র কাঠামো যাতে আমরা দিয়ে যেতে পারি। যাতে করে পরবর্তী প্রজন্মকে আর কখনও এভাবে জীবন দিতে না হয় সেজন্য তারা নিজেদের জীবন দিয়ে গেছেন। আপনারা নিজেদের কাজের মাধ্যমে শহীদদের প্রত্যাশা পূরনে প্রকৃত অভিভাবকের মতো পরিচয় দিবেন, সেই প্রত্যাশা থাকবে। জনকল্যাণমুখী কোনো কাজের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেখানো যাবে না। আমরা অনেক ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছি। সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য।
আপনার মতামত লিখুন :