ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
শিগগিরই ডিসি পদায়ন

ফিটলিস্ট প্রণয়নে শুরু হয়েছে সাক্ষাৎকার

মেহ্দী আজাদ মাসুম

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৪, ১০:১৮ পিএম

ফিটলিস্ট প্রণয়নে শুরু হয়েছে সাক্ষাৎকার

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: শিগগগিরই দেশের সব জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়নে ফিটলিস্ট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই লক্ষ্যে নেওয়া শুরু হয়েছে সাক্ষাৎকার। মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মকর্তা নিয়োগে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬১৭ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবে সরকারের নির্ধারিত যাচাই-বাছাই কমিটি। 

শনিবার সচিবালয়ে দুপুর ১২টা থেকে প্রথম দিনে তালিকাভুক্ত ৬০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশের প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয় নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবীদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যেই সচিবালয়সহ মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তন শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে রদবদল করা হয়েছে। অনেককে অবসরেও পাঠানো হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পদেই পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে প্রায় ৩০ কর্মকর্তাকে। সব জেলার এসপি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ডিএমপির ৫০ থানার ওসিদের পরিবর্তন করা হয়েছে।

দুপুর ১২টা থেকে দুপুর দেড়টা, দুপুুর ২.৩০ থেকে ৪টা ও ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ২০ জন করে ৬০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়নে ফিটলিস্টে তালিকাভুক্ত হতে সাক্ষাৎকারের জন্য যাদের ডাকা হয়েছিল, তারা হচ্ছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব শাব্বির আহমেদ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নজরুল ইসলাম নজরুল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রীর পিএস রফিকুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল আমিন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফরিদুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আলাউদ্দিন আলী, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের উপসচিব তানিয়া রহমান চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসচিব আহসান হাবিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব মুফিদুল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আলম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব মো. শরিফুজজামান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কে.এম এনামুল করিম, পরিকল্পনা বিভাগের উপপ্রধান মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, বিসিকের আঞ্চলিক পরিচালক কাজী মাহবুবুর রশিদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রাজ্জাকুল ইসলাম, আইএমইডির উপসচিব আনোয়ার ইমাম, অর্থ বিভাগের উপসচিব রুহুল আমিন, দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক মোহা. আব্দুল আওয়াল, পরিকল্পনা বিভাগের উপসচিব মোহা. আলমগীর হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক আইনুর আক্তার পান্না, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহা. সাইফুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার মোহা. আনিসুর রহমান, বিমান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আহমেদ জামিল, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমান, উপদেষ্টার একান্ত সচিব আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব বনানী বিশ্বাস, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব লোকমান হোসেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের ম্যানেজার নাজমুল হাসান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব সাবেত আলী, অর্থনৈতিক বিভাগের উপসচিব অহিদুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের মাহবুবা আইরীন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আলমগীর হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক মিজানুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব নাহিদ ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এ কে এম মুনিরুজ্জামান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনির হোসেন হাওলাদার, অর্থ বিভাগের উপসচিব খন্দকার সাদিয়া আফরিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিচালক মোস্তাক আহমেদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মাদ মঞ্জুরুল ইসলাম, তথ্য যোগাযোগ বিভাগের উপসচিব শাহীনুর আলম, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব হাবীবুর রহমান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক মাসুদ হোসেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শারাবান তাহুরা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আশরাফুর রহমান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব শাহ আবদুল সাদী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব ইসতিয়াক আহমেদ, উপসচিব আব্দুল ওয়াদুদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহা. মহসিন উদ্দিন, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এস এম শফিক, ওয়ারপো এর পরিচালক বদরুল হাসান লিটন, শিক্ষা একাডেমির পরিচালক জিয়া আহমেদ সুমন, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক মোয়াজ্জম হোসেন, পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক রবিউল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব জেসমীন পারভীন ও অর্থ বিভাগের উপসচিব আব্দুর রহমান।

ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছেন ডিসিরা

জেলা প্রশাসকারা দেশের সব জেলা প্রশাসনের প্রধান হিসেবে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি হলেও বেশিরভাগ জেলার এসপিরা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে থাকেন অনুপস্থিত। ফলে সভা অনেকাংশে ফলপ্রসূ হয় না। এমন অভিযোগ বিগত সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ খোদ জেলা প্রশাসক সম্মেলনে উত্থাপন করা হয়েছিল। এরপরও পালিয়ে যাওয়া সরকার আমলে নেয়নি বিষয়টি। যে কারণে জেলা প্রশাসক কমিটির প্রধান হয়েও জেলার আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কে অনেকক্ষেত্রে পরিপূর্ণ অবগত থাকতে পারেন না। অথচ জেলার সকল উ্ন্নয়ন অগ্রগতিসহ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে উপস্থাপন করতে হয়। 

অতীতে দেখা গেছে, প্রতিটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ডিসিরা সংক্ষিপ্ত বিচারসহ ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) কয়েকটি ধারার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়ে এসেছেন। পাশপাশি তারা আরো উল্লেখ করেন, অতীতে জেলা প্রশাসকরা পুলিশ সুপারের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) লিখতেন। যে কারণে জবাবদিহিতা থাকত। অন্যদিকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সমস্যা হচ্ছিল। এ বিষয়ে সংস্কারের লক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতি নির্ধারকরা আলোচনায় বসেছিলেন। শিগগিরই এটি সংস্কার হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। 

অতীতের মতো পুলিশ সুপারের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যায় কিনা সেটি বিবেচনায় আনার দাবি করেছেন তারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে। এ সরকারের মেয়াদকালেই প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগের সংস্কার হতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!