ঢাকা শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪

না ফেরার দেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৪, ০৯:২৭ এএম

না ফেরার দেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী

ফাইল ছবি

সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ চিকিৎসক অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত পৌনে তিনটায় উত্তরা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি বলেন, ‘স্যার আর নেই।  স্যার আমাদের ছেড়ে রাত তিনটা ১৫ মিনিটে চলে গেছেন।’

ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় গত বুধবার (২ অক্টোবর) ভোরে বারিধারার বাসা থেকে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে তার প্রতিষ্ঠিত মহিলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রাত দেড়টায় তার মেয়ে ডা. শায়লা চৌধুরী জানান, ‘‘ অবস্থা সংকটজনক। বাবাকে লাইভ সাপোর্টে নেয়া হয়েছে। উনার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।”

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৪ বছর। তিনি স্ত্রী হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী, এক ছেলে দুই মেয়ে রেখে গেছেন। বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী পেশায় একজন ব্যারিস্টার, ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী পেশায় চিকিৎসক এবং উত্তরা উইমেন মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন। ছেলে মাহী বি চৌধুরী রাজনীতিবিদ যিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব, মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

জানাজা ও দাফন : পরিবারের সদস্যরা জানান, বি চৌধুরীকে ৬ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের মজিদপুর দয়হাটায় পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হবে।

তার প্রথম জানাজা সকাল ৮টায় উত্তরা উইমেন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রাঙ্গনে, দ্বিতীয় জানাজা বাদ জোহর বারিধারায় ৮ নং সড়কে বায়তুল আতিক জামে মসজিদে, ৬ অক্টোবর সকাল ১০টায় মুন্সিগঞ্জ স্টেডিয়ামে তৃতীয় জানাজা, বাদ জোহর গ্রামের বাড়ি মজিদপুর দয়হাটায় চতুর্থ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হবে।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে (প্রখ্যাত ‘মুন্সেফ বাড়ি) নানাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৪৭ সালে ঢাকার সেনট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করার জন্য ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস, এডিনবার্গ ও গ্রাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো এফআরসিপি এবং এসসিপিএস লাভ করেন। ঢাকায় মেডিসিন বিভাগের খ্যাতিমান চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘদিন মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।

বি চৌধুরী বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘আপনার ডাক্তার’ একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান খ্যাতিমান এই চিকিৎসককে রাজনীতিতে যুক্ত করতে ১৯৭৮ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রথম মহাসচিব নির্বাচিত করেন। বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকারে তিনি উপ প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকারে শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বিএনপির সাথে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।

পরে বি চৌধুরী বিএনপি ছেড়ে ২০০৪ সালের ৮ মে ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।  মৃত্যুর শেষ পর্যন্ত তিনি দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।

আরবি/জেআই

Link copied!