ঢাকা; বৈশ্বিক পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে মাত্র ১৯ শতাংশ সফল হয়েছে বাংলাদেশ। এখানে ইনভেস্ট নেই, যার কারণে এসডিজির উন্নতিও নেই। আগে বলা হতো, কেউ পেছনে থাকবে না। এখন বলছি, কাউকে পেছনে রাখা যাবে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সোশ্যাল প্রটেকশন এবং রিভল্যুশন না হলে কিছুই হবে না। লক্ষ্য অর্জনে একই সঙ্গে চাই বিশুদ্ধ ডেটার নিশ্চয়তা এবং সঠিকভাবে বিনিয়োগ।
বাংলাদেশ ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ (ভিএনআর) ও নাগরিক অংশগ্রহণ সংলাপে গতকাল রোববার এসব কথা বলেন বক্তারা। সংলাপ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ভিএনআর প্রস্তুতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের অংশগ্রহণ, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশের ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ (ভিএনআর) ও নাগরিক অংশগ্রহণ’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস সরকারের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার, নাগরিক প্ল্যাটফর্ম কোর গ্রুপ সদস্য ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী, সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী, গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোহাম্মদ আবদুল লতিফ, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান, কোর সদস্য শাহীন আনাম, জাতিসংঘের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিদলের প্রতিনিধিরা।
সম্মানীত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সোশ্যাল প্রোটেকশন বিভাগে সুশাসন না এলে কোনো কিছুই অর্জন সম্ভব নয়। ভিএনআর এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অন্যতম মূল স্তম্ভ। এসডিজি শুধু ঘোষণা দিলেই হয় না, রাষ্ট্রকেও দায়িত্ব দিলে হয় না, জবাবদিহির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সংলাপে এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ বলেন, থ্রি জিরো ইস্যু নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। যার অর্থ হলোÑ জিরো কার্বন নিঃসারণ, জিরো দারিদ্র্য এবং জিরো বেকারত্ব। আর তা অর্জন করতে চাই তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসা। টেকসই উন্নয়নে থ্রি জিরো ইস্যু সফল হতেই ভিএনআর (ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ) প্রস্তুতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, দেশের এনজিওগুলো নাগরিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনেক তথ্য দিয়েছে। তারা পরামর্শ ও ধারণাও দিয়েছে। বর্তমানে এনজিওগুলো কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। তবে তারা সরাসরি এসডিজি বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। আমরা তাদের কাজকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।
সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফসল এই সরকার। অনেককে হারিয়েছি এবং নতুন একটি প্রজন্ম আমরা পেয়েছি। এই প্রজন্ম আমাদের অবাক করে দিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তারা অতীতকে আর ভবিষ্যৎ হিসেবে চায় না। তারা খাদ্য-বস্ত্র-শিক্ষা বা অন্য কিছু চায় না। তারা চায় সাইবার অ্যাক্ট।’
তিনি আরও বলেন, বৈশি^ক পর্যায়ে এসডিজি অর্জনে মাত্র ১৯ শতাংশ সফল হয়েছে বাংলাদেশ। এখানে ইনভেস্ট নেই, তাই সফলতাও নেই। এখানে বাণিজ্যে বিনিয়োগ ও অর্থায়নের দারুণ ঘাটতি রয়েছে। আগে বলা হতো, কেউ পেছনে যাবে না। এখন আমরা বলছি, কাউকে পেছনে রাখা যাবে না। এখানে পার্বত্য অঞ্চল নিয়েও কথা এসেছে। সেখানকার বাস্তাবতা এবং সরকার কী ভাবছে দুটোর সমন্বয় দরকার।
ডেটার বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ডেটার সোর্সের সংকট। এখানে শুধুই গভর্নমেন্ট দরকার। আমাদের দেশে পিছিয়ে রাখা হয় তাদের। যেমন; বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, এসব বিষয় রুখতে হবে আমাদের। এসডিজি অর্জনে গুড গভর্ন্যান্স ও অর্থায়ন খুবই জরুরি।
সংলাপে সুজনর বদিউল আলম মজুমদার বলেন, লোকাল গভর্নমেন্ট এসডিজিতে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। লোকাল কমিউনিকেশন বাড়াতে হবে। কারণ যেভাবে পণ্যের দাম বাড়ছে, সে ক্ষেত্রে তাদের অন্তর্ভুক্তি জরুরি।
জলবায়ুর প্রতিঘাত উল্লেখ করে শাহীনা আলম বলেন, ‘আমাদের সবার লক্ষ্য এক হলে অবশ্যই অর্জন সম্ভব। বিশেষত ছয়টি গোষ্ঠী নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। বিশেষ করে শিশু, তরুণ, দলিত ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিপন্ন মানুষের জন্য।’
সভায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এনজিও প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। তাদের অভিযোগ, বিশুদ্ধ ডেটার ভীষণ অভাব। বিগত সরকারের আমলে যেসব ডেটা উপস্থাপন করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। তাদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানে কিছু ডেটার বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জাতিসংঘের সমন্বয়ক হুয়েন উইচ।
আপনার মতামত লিখুন :