শুরু থেকেই জাতীয় পার্টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিল বলে মন্তব্য করেছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকেল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীস্থ কার্যালয়ের মিলনায়তনে জরুরী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে একটি চক্র জাতীয় পার্টিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধী শক্তি হিসেবে পরিচিত করতে অপচেষ্টা করছে। অথচ, জাতীয় পার্টি শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিল। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে রংপুরে মহানগর জাতীয় পার্টির ২৩ নম্বর ওয়ার্ড নেতা মেরাজুল ইসলাম এবং জাতীয় মটর শ্রমিক পার্টির রংপুর মহানগর কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মানিক মিয়া শাহাদাত বরণ করেছেন। আমি আবারও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
জিএম কাদের বলেন, আমরা চাই, রাষ্ট্র যেন শহীদদের পরিবারের পাশে থাকে। আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করে। আন্দোলনে যারা আহত বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব সরকারের। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনরত ছাত্রদের আমরা বীর মুক্তিসেনা উপাধি দিয়েছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত স্বল্প সময়ে এতবড় আন্দোলনের নজির নেই। যৌক্তিক কোন আন্দোলনে এত গুলি, এত রক্ত আর এত জীবন দেয়াও ইতিহাসে নেই।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যাচার ছিলো নজিরবিহীন। আমরা শহীদ ছাত্রদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বীর শহীদদের শোকার্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ছাত্র-জনতার উপরে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছিলাম। বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিলাম। আমার নির্দেশে জাতীয় ছাত্র সমাজ রাজধানীতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। রংপুরে জাতীয় পার্টি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে রংপুরে ১১টি মিথ্যা মামলায় জাতীয় পার্টির অন্তত ৩৩ জন নেতাকর্মী আসামি হয়েছেন। তাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন। রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে ২১ জুলাই রংপুর জেলা ছাত্র সমাজ এর সদস্য সচিব মোঃ আরিফ আলী ও রংপুর মহানগর যুব সংহতির সভাপতি মোঃ ইউসুফ আলী গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। ২৩ জুলাই রংপুর মহানগর জাতীয় ছাত্র সমাজ এর সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন জসীম ও রংপুর মহানগর মটর শ্রমিক পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সমাজ গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। এছাড়া রাজধানীর উত্তরখান থানা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দীন ভূঁইয়ার ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান অলিদ এবং যুগ্ম সম্পাদক আবদুল হালিমের ছেলে মাশরাফি হোসেন ৫ আগস্ট সকালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা অত্যন্ত পরিষ্কার ছিল। ২০১৮ সালে যখন ছাত্ররা কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছিল, তখন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সেই বক্তব্য এখনো ইউটিউবে সংরক্ষিত আছে। ২০২৪ সালে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হল, তাতে আমরা পূর্ণ সমর্থন দিয়ে ছাত্রদের পাশে থাকতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। সংসদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বক্তৃতা করেছি, বিবৃতি দিয়েছি। সেই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আটক ৬ সমন্বয়ককে মুক্তি দিতেও দাবি জানিয়েছিলাম আমরা।
আপনার মতামত লিখুন :