গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর আক্তার কোটালীপাড়া পৌরসভা প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর পাল্টে গেছে পৌরসভার চিরচেনা চিত্র।
বেড়েছে নাগরিক সেবার মান। কাজে শৃঙ্খলা ফিরে আসায় অতিরিক্ত দায়িত্বপালনেও স্বস্তির নি:শ্বাস নিচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অফিস সূচির বাইরেও দেয়া হচ্ছে সেবা।নাগরিক সেবার পাশাপাশি বকেয়া ৬২ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধেও নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর আক্তার কোটালীপাড়া পৌরসভার দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেয়ার পর পৌরসভায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। পরিষদ পরিচালনা করতে গঠন করা হয়েছে ৭ সদস্যের একটি কমিটি। পৌরসভার পাড়া-মহল্লার অলিগলির নির্মাণকাজ পুরোদমে চলছে। জনগুরুত্ব বিবেচনায় এসব উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে। মহল্লা ও বাজারের ড্রেনেজ ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক বেশি সচল। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা পেশাদারত্ব নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। দিনের কাজ দিনেই শেষ করা হচ্ছে। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন শাখার সেবার মান বাড়াতে অফিস সময়ের পরও কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে পৌরসভার সামনে কথা হয় শিকিরবাজার এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, জরুরী প্রয়োজনে আমার নাগরিক সনদ প্রয়োজন হয়। আজ অফিস বন্ধের দিন হওয়া সত্ত্বেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অফিস খুলে আমাকে নাগরিক সনদ প্রদান করেন। পৌরসভার বর্তমান নাগরিক সেবা পেয়ে আমরা খুশি।
উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী পুতুল গাইন বলেন, বর্তমান পৌরসভার প্রশাসক পৌরসভায় যোগদানের পর থেকে সব ধরনের সেবার মান বাড়ছে। আগে যেখানে পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা অন্ধকারে থাকতো এখন সব এলাকাতে বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করছে। দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরতে প্রায়ই গভীর রাত হয়ে যায়। এখন সড়ক বাতিতে নিরাপদে চলাচল করতে পারছি।
পৌরসভার ঘাঘর বাজারের ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এখন রাত পোহানোর আগেই বাজারের সকল অলিগলি পরিস্কার করে রাখেন। যা আগে দেখা যেতনা। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিস্কার করা হচ্ছে। তাছাড়া বাজারের সকল লাইটগুলো চালু করায় রাতে দোকান বন্ধ করে নিরাপদে বাড়ি যেতে পারছি।
পৌরসভার বাগান উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধু শিপ্রা গাইন বলেন, কিছুদিন ধরে পৌরসভা থেকে নিয়মিত মশা নিধনে মশার ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। যা আগে কখনো দেখা যায়নি। পানির লাইনে সমস্যাসহ যে কোন সমস্যা সমাধানে বর্তমান পৌর কতৃপক্ষ আগের চেয়ে তৎপর।
পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা পিযুস কান্তি বিশ্বাস বলেন, পৌর প্রশাসকের সঠিক নজরদারি ও কাজের স্বাধীনতা থাকায় পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাছন্দে ও জবাবদিহিতার সহিত কাজ করতে পারছে। যার ফলে একদিকে যেমন নাগরিক সেবা বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে পৌরসভার ভাবমুর্তি অক্ষুন্ন রাখতে কাজ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিল হিসেবে পৌরসভার কাছে ৬২ লক্ষ টাকা বকেয়া ছিল পল্লী বিদ্যুত সমিতির। বর্তমান প্রশাসকের হস্তক্ষেপে দীর্ঘদিনের এই বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। গত মাসে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ পরিশোধের পাশাপাশি ১ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা বকেয়া বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এভাবে প্রতিমাসে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের পাশাপাশি বকেয়া বিল পরিশোধ করা হবে।
কোটালীপাড়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব ভক্ত জানান, বর্তমান প্রশাসক পৌরসভায় যোগ দেওয়ার পর দক্ষ অভিভাবকের নেতৃত্বে পৌরসভা পরিচালিত হচ্ছে। নাগরিকসেবার মান আরো বেশি বাড়াতে এবং পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে মনোবল বাড়াতে ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে দপ্তর প্রধানদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন পৌর প্রশাসক। যার ফলে কাজে গতি এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ৪৫০টি খুঁটির লাইটগুলো অকেজো থাকায় রাতের বেলা পুরো পৌরসভা অন্ধকারে থাকতো। বর্তমান প্রশাসকের কঠোর নির্দেশনার ফলে গত এক মাসে পৌরসভার সকল ওয়ার্ডের সবগুলো খুঁটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করা হয়েছে।
কথা হয় পৌর প্রশাসক ও কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সব সময় চেষ্টা করি মানুষের দু:খ-কষ্ট লাঘবের। পৌরবাসী যেন সঠিক সময়ে সবধরনের নাগরিক সেবা পায় সেজন্য পৌরসভার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচেষ্ট রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :