স্থানীয় প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বিগত বছরগুলোয় বিকেন্দ্রীকরণের নানাবিধ প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখেনি, আসেনি কাঙ্ক্ষিত সংস্কার। কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর স্থানীয় প্রশাসনের নির্ভরশীলতা ও মাত্রাতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রভাবে প্রকৃত সুবিধাপ্রত্যাশী জনগণের চাহিদা মোকাবিলা ও প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে স্থানীয় সরকার নানাবিধ সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হয়েছে।
গ্রাম আলাদত করা হয়েছে, কিন্তু এর কার্যকারিতা প্রশ্নের উদ্রেক করে। রাজনৈতিক প্রতিনিধির উপর সালিশের দায়িত্ব দেওয়ার যৌক্তিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, জনপ্রতিনিধিদের সালিশ অভিজ্ঞতা নেই, পক্ষান্তরে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মীকে সুবিধা প্রদানের আশংঙ্কাও থেকে যায়। কাজেই, স্থানীয় সালিশে গুরুত্বারোপ করা উচিত এবং বাস্তবিক ও কার্যকর সংস্কার প্রয়োজন। পাশাপাশি, স্বতন্ত্র ও স্বাধীন স্থানীয় সংস্কার কমিশন গঠন এবং সমন্বিত স্থানীয় সরকার নীতিমালা প্রনয়ণ প্রয়োজন।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘স্থানীয় সরকার বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ক সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
ইউএনডিপি’র আয়োজনে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন এর সহায়তায়, ইউএনডিপি’র স্ট্রেংদেনিং ইনস্টিটিউশনস পলিসিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রকল্পের আওতায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির গবেষণা সহায়তায় প্রথম আলোর সাথে যৌথভাবে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ। এ আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের নাগরিক সমাজ সংস্থা, একাডেমিক ব্যক্তিত্ব, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, তৃণমূল পর্যায়ের স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধি, যুব উন্নয়ন প্রতিনিধি এবং ইউএনডিপি’র কর্মকর্তাবৃন্দ। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চারজন সম্মানিত সদস্যও এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বিশেষজ্ঞ আলোচকবৃন্দ, স্থানীয় প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, বর্তমান বিকেন্দ্রীকরণ নীতি, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ প্রভৃতি নিয়ে কথা বলেন। জনসাধারণের জন্য সহজ ও দ্রুত পরিষেবা প্রাপ্তি, প্রশাসনের প্রতি আস্থা তৈরি, স্থানীয় জনগণ ও অংশীজনের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিসহ স্থানীয় সরকারের আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের উপর বক্তারা গুরুত্বারোপ করেন।
বক্তারা, স্থানীয় প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকারে কর্মরত কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে প্রশাসনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি প্রভৃতির বাস্তব পন্থা প্রস্তাব করেন। স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েও বক্তারা কথা বলেন।
আপনার মতামত লিখুন :