ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিমানের বিজনেস ক্লাসে সিট না পাওয়ায় যে কাণ্ড বাধিয়েছিলেন মানিক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৪, ০৩:১৩ পিএম

বিমানের বিজনেস ক্লাসে সিট না পাওয়ায় যে কাণ্ড বাধিয়েছিলেন মানিক

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শাসসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বৃহস্পতিবার রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে আটক হয়েছেন। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।

২০১২ সালের শেষের দিকে বিচারপতি থাকা অবস্থায় বিমানের বিজনেস ক্লাসে সিট না পাওয়া নিয়ে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করেছিলেন তিনি। পরে বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চারজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাইকোর্টে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বেঞ্চে গিয়ে নি:শর্ত ক্ষমতা চেয়ে নিষ্কৃতি পান।

বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও মন্তব্য করে বারবার আলোচনায় এসেছেন বিচারপতি মানিক। সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বেসকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই-এর একটি টকশো গিয়ে এক নারী উপস্থাপকের সাথে আক্রমনাত্মক আচরণ করে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন বিচারপতি মানিক। এই ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে সরকারি বাড়িভাড়া পরিশোধ না করার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। নোটিশে বলা হয়, অবসরে যাওয়ার পর এক বছরের বেশি সময় রাজধানীর গুলশানে একটি সরকারি বাড়ি দখলে রেখেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পরে ২০১৭ সালে তিনি বাড়িটি ছাড়লেও বাড়িভাড়া, গ্যাস ও  পানি বিল বাবদ সরকারের পাওনা ১৪ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা এখনও পরিশোধ করেননি তিনি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয়। তিনি শেখ মুজিব হত্যা মামলার আইনজীবী ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তাকে হাইকোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সে নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে শাসসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিচারপতি হিসেবে পুনর্বহাল হন।

বিচারপতি থাকা অবস্থায় শাসসুদ্দিন মানিককে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। যে রায়টি কেন্দ্র করে তিনি সমালোচনার কেন্দ্রে আসেন সেটি হচ্ছে, কর্নেল তাহের হত্যা মামলার রায়। সে রায়ে বিচারপতি মানিক কর্নেল তাহেরের বিচারকে ‘ঠান্ডা মাথার খুন’ এবং জিয়াউর রহমানকে ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

২০১৫ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি থাকা অবস্থায় শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রের সাথে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন । তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহা তাঁকে একটি বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অভিশংসন চেয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠিও দিয়েছিলেন মানিক। অবসরে যাবার কয়েকদিন আগে তিনি একাজ করেছিলেন।

চাকরি শেষে বাড়ি না ছেড়েও তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। ২০১২ সালে বিচারপতি থাকা অবস্থায় লন্ডনে তিনি হামলার শিকার হয়েছিলেন। এছাড়া ২০১৫ সালে অবসর গ্রহণের পরে আবারও তিনি লন্ডনে হামলার শিকার হন। শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের পাশপাশি ব্রিটেনেরও নাগরিক।

২০১২ সালের জুন মাসে তৎকালীন জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য (এমপি) শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সমালোচনা করেছিলেন। আদালতে বসে মানিক তৎকালীন সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদের (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) নজিরবিহীন সমালোচনা করেছিলেন। এরপরই মানিকের সমালোচনা করা হয় সংসদে। তাঁকে অপসারণের লক্ষ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করার জন্য তাঁরা প্রধান বিচারপতি এবং প্রেসিডেন্টকে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন।

তৎকালীন সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে ‘স্যাডিস্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তোফায়েল বলেন, ‘তিনি মানুষকে অপমান করতে পছন্দ করেন। যারা স্যাডিস্ট, অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়, আমরা তাদের ঘৃণা করি।’

তৎকালীন সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদের বলেছিলেন, ‘শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক তাঁর পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’ তোফায়ল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছাড়াও শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও রাশেদ খান মেনন শামসুদ্দিন চৌধুরীর মানিকের সমালোচনা করেছিলেন।

সংসদে এই সমালোচনার পরেও শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কোন অসুবিধা হয়নি। সংসদের সমালোচনার ছয়মাস পরেই তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে ২০১৩ সালে পদোন্নতি পান।

সূত্র: বিবিসি

আরবি/ এইচএম

Link copied!