ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, সন্তানের দায়িত্ব না নিয়ে তাদেরকে কাজে পাঠানো হয়, বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই| সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিশুদের কাজে পাঠানো হয়- এরকম হাজারও সংকটে বাড়ছে শিশুশ্রম, যা নিরসনে প্রয়োজন সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগ। পাশাপাশি শিশুশ্রম নিরসনে গণমাধ্যমকে শক্তিশালী ভূমিকা নিতে হবে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) আয়োজিত সংলাপে কথাগুলো বলেন বক্তারা। ‘শিশুশ্রম নিরসনে গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা : আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এএসডি’র নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারপার্সন শামসুন্নাহার জলী। সংলাপে আলোচনায় অংশ নেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও ডেইলি নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) প্রশিক্ষক জিলহাজ উদ্দনি নিপুন, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প কর্মকর্তা হালিমা বেগম, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহনাজ পলি, সিনিয়র সাংবাদিক আশীষ কুমার দে, এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি শারফুল আলম, এএসডি’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইউ কে এম ফারহানা সুলতানা সহ গণমাধ্যম ও এনজিওর কর্মকর্তারা।
সংলাপে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন এএসডির কো-অর্ডিনেটর সৈয়দ শাহিনুর রহমান। তিনি বলেন, আইনগত ভাবে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও দেশে ৩৫ লক্ষ শিশু শ্রমে নিয়োজিত আছে। এরমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ ৬৮ হাজার। শ্রমে নিয়োজিত শিশুরা নানাধরনের শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব শিশু শ্রমিকেরা ভয়াবহ নির্যাতন এবং ক্ষেত্র বিশেষে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। এছাড়া অসংখ্য শিশু দীর্ঘ সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করার ফলে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে। এমতাবস্থায় শিশুশ্রম নিরসনে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে গণমাধ্যমসমূহের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও টিভিসি নির্মাণ বা ফিচার প্রকাশ, শিশু সাংবাদিকতাকে উৎসাহ দেয়া, আলাদাভাবে সংবাদ তৈরি, প্রচার ও প্রকাশ, ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোকে তুলে ধরা, শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদ প্রকাশে আলাদা সেল গঠন, আইন ও নীতিমালাগুলো প্রচার, আইন অমান্যকারীদের নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করা প্রয়োজন।
শারফুল আলম বলেন, ঝুকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের জন্য সরকারের উচিত বিভিন্ন প্রণোদনার পাশাপাশি বিশেষায়িত স্কিম চালু করা প্রয়োজন। আমরা যদি একটি ওয়ার্ড বা গ্রামকে শিশুশ্রম মুক্ত করে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে পারলে এটি একটি উদাহরণ হবে।
শাহনাজ পলি বলেন, এনজিওদের কাছে নারী ও শিশুদের সব আপডেট তথ্য গণমাধ্যমকে প্রতিনিয়ত জানানো উচিত। বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেতুবন্ধন প্রয়োজন।
আশীষ কুমার দে বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
জিলহাজ উদ্দিন নিপুন বলেন, অনেক সাংবাদিকদের শিশু বা শিশুশ্রম বিষয় নিয়ে কাজ করার আগ্রহ নেই। ডেপথ রিপোর্ট পাওয়া যায় খুব কম। এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, আমাদের কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। শিশুশ্রমের কারণ চিহ্নিত; পরিবারের সহযোগিতা কীভাবে বাড়ানো যায়, তা চিহ্নিত করা; মালিকদের সাথে আলাপ-আলোচনা বাড়ানো; এনজিওদের উচিত মিডিয়ার সাথে নেটওয়ার্কিং বাড়াতে গ্রুপ খোলা ও তথ্য শেয়ার করা এবং ফেলোশীপ দেয়া; শিশু ও শিশুশ্রম নিয়ে যেসব সাংবাদিক কাজ করে, তাদেরকে পিআইবি থেকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা।
মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা উচিত। পাশাপাশি স্কুলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। এনজিওদের উচিত সাংবাদিকদের জন্য ফিল্ড ট্রিপের ব্যবস্থা করা।
সংলাপে উপস্থিত বক্তারা আরও তুলে ধরেন এনজিওদের কাছে যেসব সফলতা ও যন্ত্রণার গল্প আছে, তা গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে; নিউজের ফলোআপ করতে হবে; ছেলে শিশুদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে; সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :