ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

এনআইডির তথ্য ফাঁস, বিসিসির সঙ্গে চুক্তি বাতিল

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ০১:৫১ পিএম

এনআইডির তথ্য ফাঁস, বিসিসির সঙ্গে চুক্তি বাতিল

ছবি, সংগৃহীত

জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই-বাছাই করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সাথে চুক্তি থাকলেও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল সে শর্ত লঙ্ঘন করেছে। শর্তানুযায়ী দ্বিতীয় কমিশনের তথ্য-উপাত্ত কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো ব্যক্তি, স্বত্ত্বা, পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর, বিনিময়, বিক্রয় কিংবা অন্য কোনো পন্থায় প্রদান করতে পারবে না, তবে সংগঠনটি তা মানেনি। এ অভিযোগে কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর এ তথ্য জানান।

এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন থেকে এনআইডির তথ্য-উপাত্ত যাচাই সেবা গ্রহণকারী সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মোট ১৮৩টি। যার মধ্যে বাংলাদেশ কম্পিটার কাউন্সিল (বিসিসি) অন্যতম। গত ৪ অক্টোবর ২০২২ তারিখ নিবন্ধনের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত যাচাই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে বিসিসির দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। উক্ত চুক্তিপত্রের শর্তানুযায়ী দ্বিতীয় পক্ষ (বিসিসি) কমিশনের তথ্য-উপাত্ত কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো ব্যক্তি, স্বত্ত্বা, পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর, বিনিময়, বিক্রয় কিংবা অন্য কোনো পন্থায় প্রদান করতে পারবে না মর্মে শর্ত থাকলেও বিসিসি কর্তৃক তা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

হুমায়ুন কবীর বলেন, এ বিষয়ে ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে বিসিসির নিকট ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও বিসিসি জবাব দানে বিরত থাকে। পরবর্তীতে গত ৬ অক্টোবর তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব প্রদানের জন্য বলা হলে বিসিসি কর্তৃক যে জবাব দেওয়া হয় তা নির্বাচন কমিশনের নিকট সন্তোষজনক নয় মর্মে গণ্য হয়েছে।  অন্যদিকে, চুক্তি অনুযায়ী প্রযোজ্য ফি/চার্জসমূহ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিসিসি কর্তৃক পরিশোধ না করায় চুক্তি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের নিকট চুক্তিটি বাতিলযোগ্য মর্মে বিবেচিত হয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ থেকে জানায়, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে নিবন্ধনের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত যাচাই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে বিসিসির ৪ অক্টোবর ২০২২ তারিখে সম্পাদিত চুক্তিটি ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে বিসিসিকে দেওয়া API সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এছাড়া চিঠি দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সমুদয় বকেয়া ফি পরিশোধপূর্বক চালানের কপি দাখিল করার জন্য বিসিসিকে অনুরোধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার থেকে অন্তত ৫ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপন তথ্য বিক্রি হয়েছে। তা নিয়েছে সরকারি-বেসরকারি দেশি-বিদেশি শতাধিক প্রতিষ্ঠান। তালিকায় আছে এনজিও-ও। এসব তথ্য বিক্রি করে আসছে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতি একজন ব্যক্তির তথ্যের জন্য ৫, ১০ ও ১৫ টাকা হারে আদায় করছে প্রতিষ্ঠানটি। বেসরকারি ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘পরিচয়’। ‘সরকারি ই-সেবা’ দেওয়ার নামে নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডারের ডেডিকেটেড সংযোগ এপিআই (অ্যাপলিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস) নেয় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ওই সংযোগ ব্যবহার করেই জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বিক্রি করে আসছে পরিচয় প্ল্যাটফরম।

এদিকে নির্বাচন কমিশনও নাগরিকদের তথ্য-উপাত্তের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা করেনি। বিসিসিকে তথ্যভান্ডারের মিরর কপি দিয়েছে। ফলে নাগরিকদের সব তথ্যই সরকারের হাতে চলে যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন দুই কমিশনের সময়ে এসব তথ্য অন্যদের হাতে যায়।

এসকল প্রক্রিয়ার সঙ্গে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন, সাবেক ও বর্তমান নির্বাচন কমিশন, আইসিটি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা ও নিজস্ব অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে। 

আরবি/এস

Link copied!