ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
ফারাক্কার ১০৯ গেট খুললো ভারত

ভয়াবহ বন্যা ঝুঁকিতে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যেসব জেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৪, ০৭:৫৯ পিএম

ভয়াবহ বন্যা ঝুঁকিতে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যেসব জেলা

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত ফারাক্কা বাঁধের ১০৯ গেটই খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশের পদ্মা নদীসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। ফলে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে আরও একটি ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সোমবার (২৬ আগস্ট) এই বাঁধ খুলে দেয়ায় একদিনেই ১১ লাখ কিউসেক পানি বাংলাদেশের দিকে প্রবল বেগে ছুঁটে আসছে। ফলে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদসহ বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো। যেমন- রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারিপুর, মানিকগঞ্জ বিশেষ করে পদ্মার নদীর দুই পাড়ের জেলাগুলোতে বন্যান আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, বন্যার প্রভাবে খুলনা, যশোর, নড়াইল, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরও পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।

২০১৯ সালেও ভারত ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিয়ে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কুষ্টিয়া জেলায় বন্যা সৃষ্টি করেছিলো। সেইবার প্রথম অক্টোবর মাসেও বাংলাদেশে বন্যা দেখা দেয়।

যদিও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় গঙ্গা নদীর (বাংলাদেশ পদ্মা নামে পরিচিত) পানিস্তর বেড়ে গেছে। পানি না ছাড়লে বাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হতো। এ কারণে বাধ্য হয়েই বাঁধের মুখ খুলে দিতে হয়েছে।

ফারাক্কা ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজার আর দেশ পাণ্ডে জানিয়েছেন, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় গঙ্গা নদীর পানিস্তর বেড়ে গেছে। এর জন্য ফারাক্কার ব্যারেজের ১০৯টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। পানি না ছাড়া হলে ব্যারেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই পানি ছাড়ার ফলে ফারাক্কার ব্যারেজের আশপাশের গ্রামে পানি ঢুকছে। ফলে সেখানে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. ময়েজ উদ্দিন বলেন, ‌‘গতকাল (রোববার) পর্যন্ত ফারাক্কার ২৭টি গেট খোলা ছিল। আজ সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখলাম মোট ১০৯টি গেট খোলা হয়েছে। এভাবে হঠাৎ এতগুলো গেট খুলে দিলে পদ্মাসহ অন্যান্য শাখা নদীর পানি বেড়ে এ অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।’

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মো. আরিফুর রহমান অঙ্কুর জানান, এখনও রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি৷ তবে যেহেতু ফারাক্কার ১০৯টি গেট খুলে দেওয়ার খবর এসেছে। এ কারণে পানি দ্রুত বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে৷ এর ফলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর,  সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, পাবনা, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারিপুর মানিকগঞ্জসহ আরও কিছু জেলা প্লাবিত হতে পারে৷

এদিকে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেয়ায় ইতোমধ্যে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৭ লাখেরও বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে। সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যা আক্রান্ত ১১টি জেলা- ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারের মোট ৭৪টি উপজেলার প্রায় ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন।

নদ-নদী বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভারাইন পিপলের পরিচালক এম আনোয়ার হোসেন বলছেন, ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার খবরটি আমাদের জন্য বিপদজনক। এর ফলে দেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলো প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট বলছেন, ইতোমধ্যে ভারতের কারণে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে যদি উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা সত্যি হয়। তাহলে আমাদের একই সঙ্গে দেশের দুই অঞ্চলে দুটি বন্যা পরিস্থি এক সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। যা আমাদের অর্থনীতির ওপর একটা বড় ধরণের চাপ তৈরি করবে। তাছাড়া, কৃষি ও মৎস খাতসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালেও ভারত ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিয়ে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কুষ্টিয়া জেলায় বন্যা সৃষ্টি করেছিলো। সেইবার প্রথম অক্টোবর মাসেও বাংলাদেশে বন্যা দেখা দেয়। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে।

আরবি/ এইচএম

Link copied!