ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

‘কমিশনের মাধ্যমে পুলিশে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৪, ০৪:০৮ পিএম

‘কমিশনের মাধ্যমে পুলিশে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে’

ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ কমিশনের মাধ্যমে পুলিশে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন। শনিবার (৯ নভেম্বর) নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, কমিশন গঠনের মাধ্যমেই পুলিশ বাহিনীকে মানবিক করে তুলতে হবে। পুলিশকে সুশৃঙ্খল বাহিনীকে গড়ে তুলতে হলে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিহারের ব্যাপারেও জোর দেন তিনি।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকার পতনের পর পুলিশ কর্মবিরতিতে গিয়েছিল। তখন তারা ৯টা দাবি তুলেছিল। এরমধ্যে প্রথম দাবিই ছিল পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। কেননা তারা জানে বিদ্ধমান আইনে পুলিশকে দলীয় কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ কমিশন গঠন না হলে আবারও পুলিশ রাজনৈতিক অবয়বের মধ্যে যাবে। তাই এই দাবি পুলিশের পক্ষ থেকে এসেছে। ফলে পুলিশ কমিশন গঠন করা খুবই জরুরি।

পুলিশে তিন স্তরের নিয়োগের ফলে অনেক পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আমলাতান্ত্রিক মনোভাব তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশের নিয়োগ পক্রিয়া ‍দুটি স্তরে করা উচিত। এছাড়া অধস্তন পুলিশদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনতে প্রশিক্ষণ শেষে সহকারী পুলিশ সুপারদের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তত এক বছর থানার কাজ করার পর তাদের দায়িত্ব দেওয়ার দরকার।

বিগত সময়ে পুলিশ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে প্রতিটি সাধারণ পুলিশের পোস্টিংয়ের জন্য এক লাখ টাকা ও ওসির বদলির জন্য এক কোটি টাকা বাণিজ্য হয়েছে। এটা যদি হয়, তাহলে এই পরিস্থিতিতে আর কী আশা করা যায়। ফলে আগামীর পুলিশকে একটি আদর্শিক পুলিশের বাহিনীতে রূপান্তর করতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে পুলিশকে জনসাধারণরে সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।

সেমিনারে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম ও পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং সোশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতান পুলিশ সংস্কারের একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ এবং সম্ভাব্য পুলিশ কমিশন গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

 তারা বলেন, দেশের কমিউনিটিতে পুলিশদের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের জনমুখী পুলিশিং ব্যবস্থা তৈরি করা যায়। যা পুলিশিং এবং কমিউনিটি সেবার মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সংযোগ স্থাপন করবে।

ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন থাকা জরুরি। তা অবশ্যই সরকার এবং পুলিশ এই দুই ক্ষেত্রেই ভালো হবে। পুলিশ কমিশনের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে।

পুলিশ কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। যেখানে রাজনৈতিক প্রতিনিধি ও সাধারণ নাগরিকদের সমন্বয় থাকবে। কমিশনে বিচার বিভাগ, মানবাধিকার সংস্থা, প্রশাসন, পুলিশ কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম পার্বত্য, সাংবাদিক এবং তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা থাকবে। এছাড়াও কমিশনের মূলনীতি হবে স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং জনগণের সম্পৃক্ততা। কমিশনের অধীনে একটি ‘পুলিশ অভিযোগ শাখা’ গঠন করা হবে। যা অসদাচরণের অভিযোগগুলো সমাধানের জন্য কাজ করবে। এতে পুলিশ বাহিনীর যথাযথ কমান্ড চ্যানেল বজায় রেখেই জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এসআইপিজি পরিচালক অধ্যাপক শেখ তাওফিক এম. হকের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম জহিরুল ইসলাম, পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজি মাহবুব উল করিম সেশনের সমাপনী বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী।

আরবি/জেআই

Link copied!