বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশে প্রকৃত সংস্কার ও নির্বাচন অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে (আওয়ামী লীগ) বাদ দিয়ে বৈধ সংস্কার ও নির্বাচন করা অসম্ভব।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন জয়।
শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ব্যাপারে জয় বলেন, দেশে ফেরার বিষয়টা তার (শেখ হাসিনা) ওপর নির্ভর করবে। এই মুহূর্তে আমি আমার দলের লোকজনকে নিরাপদ রাখতে চাই। তাই আমি দলের লোকজনের ওপর চালানো নির্যাতনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বাড়াতে চাই।
জয় সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, হাসিনার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। জয়ের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা জয়ের বিবৃতির ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১৮ মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজনে অর্ন্তবর্তী সরকারকে সমর্থনের যে কথা বলেছেন, তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সাক্ষাৎকারে ১৮ মাসের সময়সীমাকে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দেরি বলে উল্লেখ করলেও তিনি এতেই খুশি বলে জানান।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশে অচলাবস্থা তৈরি হলে সেনাবাহিনী স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ শুরু করে। সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, তিনি প্রতি সপ্তাহে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপের জন্য দেখা করেন।
রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের আগে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে এই কাজ শেষ করার জন্য কোনো তারিখ নির্ধারণ করেনি।
ইউনূসের কার্যালয় জানিয়েছে, সরকারের গঠন করা ছয়টি সংস্কার প্যানেলের সুপারিশ পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সবাই সংস্কারের বিষয়ে একমত পোষণ করলে এবং ভোটার তালিকা তৈরি হলে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আমাদের অন্তত এখন একটি প্রত্যাশিত সময়সীমা (নির্বাচন আয়োজনে) আছে জেনে আমি খুশি। তবে আমরা এই নাটক আগেও দেখেছি, যেখানে একটি অসাংবিধানিক-অনির্বাচিত সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।
হাসিনার সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, তিনি নিজে অথবা অন্তর্বর্তী সরকার কেউই কারও সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে যোগাযোগ করেনি। সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে (আওয়ামী লীগ) বাদ দিয়ে বৈধ সংস্কার ও নির্বাচন করা অসম্ভব।
নির্বাচনী সংস্কার প্যানেলের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন বিষয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে কি না সেটা সরকারের ওপর নির্ভর করছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে হাসিনা নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের আরও অনেক সিনিয়র নেতাকে হয় গ্রেপ্তার করা হয়েছে অথবা তারা নিজেরাই আত্মগোপনে চলে গেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :