ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিমানবন্দরে শমী-মাহফুজের নামে আবারও লাউঞ্জ নবায়ন

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪, ০১:০৫ এএম

বিমানবন্দরে শমী-মাহফুজের নামে আবারও লাউঞ্জ নবায়ন

শমী কায়সার ও মাহফুজ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও লাউঞ্জগুলো পতিত আওয়ামী সরকারের সময় তাদের পছন্দের কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বিজ্ঞাপনী সংস্থাও লাউঞ্জগুলো নামমাত্র মূল্যে বেবিচক থেকে আওয়ামী দোসররা লিজ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চড়া দামে ভাড়া দিয়েছে। এর মধ্যে ই-ক্যাব থেকে সদ্য পদত্যাগী অভিনেত্রী শমী কায়সার তার ধানসিঁড়ির নামে মাত্র ৬০ লাখ টাকায় শাহজালালে একটি লাউঞ্জ বরাদ্দ নিয়ে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় একটি ব্যাংককে ভাড়া দিয়েছে। শমী কায়সারের মাসে নিট ইনকাম হচ্ছে ২ কোটি টাকা। শমীর এই ধানসিঁড়ি প্রতিষ্ঠানটি সদ্য সাবেক সদস্য অসপের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় বরাদ্দ বাতিল না করে পুনরায় নবায়ন করা হয়েছে। আর এটি করা হয়েছে এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গত মাসের ১৪ তারিখ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও বেবিচক নীরব।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের মেয়ের জামাই অভিনেতা মাহফুজের ‘নকশি কাঁথা’ প্রতিষ্ঠানের নামেও শাহজালালে একটি লাউঞ্জ বরাদ্দ দিয়েছে বেবিচক কর্তৃপক্ষ। এটিরও বরাদ্দ বাতিল না করে নবায়ন করা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ভাতিজা আওরঙের ‘ইননোভা’ নামের প্রতিষ্ঠানের  নামেও আরেকটি  লাউঞ্জ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বরাদ্দও বাতিল না করে নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

মেম্বার অপসের নাম ভাঙিয়ে এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন ডিডি (সম্পত্তি) সাধন কুমার মোহন্ত, কেরানি আলামিন ও মিজানুর রহমান। এই ৩ সদস্যের সিন্ডিকেট মেম্বার অপসের নেকনজরে থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে এসব লাউঞ্জ ও বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো আওয়ামী দোসরদের প্রতিষ্ঠানের নামে পুন:নবায়ন করছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

শুধু তাই নয়, থার্ড টামিনালেও ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক দোকানপাট বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই সিন্ডিকেট।

বরাদ্দপ্রত্যাশীদের বলা হচ্ছে, ‘৩ লাখ টাকা করে টাকা দিয়ে রাখেন যখন কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দেবেন তখন পেয়ে যাবেন।’ এভাবে এই সাধন কুমার মোহন্ত থার্ড টার্মিনালে শতাধিক দোকান বরাদ্দ দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছেÑ যা সুষ্ঠু তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

জানা যায়, সম্পত্তি বিভাগের দুটি অংশ একটি শাহজালাল বিমানবন্দরকেন্দ্রিক, এটি মেম্বার অপারেশনের অধীনে। আর বাইরের সম্পত্তি ইজারা, বরাদ্দ দেখভাল করেন মেম্বার এডমিন।

শাহজালাল বিমানবন্দরে  আরও যেসব লাউঞ্জ ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা গত সরকারের আমলে আওয়ামী ঘনিষ্ঠদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলোÑ ডালাস, এর মালিক আমিনুল ইসলাম, আলবেট, মালিক আমিনুল ইসলাম, হলোগ্রাম, মালিক মোহাম্মদ আলি, মোহাম্মদ এন্টারপ্রাইজ, মালিক  ফজলে রাব্বি।

এদের চুক্তি এখনো নবায়ন হয়নি। এরোস, মালিক নাঈম, ইননোভা, মালিক সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ভাতিজা আওরঙ, করপোরেট সর্ভিসেস এজেন্সি, মালিক গোলাম কিবরিয়া।

এদিকে বেবিচকের এক ঠিকাদার জানান, সাংবাদিক কোটায় বহিরাগতদের নামে বেবিচক সদর দপ্তরে একটি রেস্টুরেন্ট ভাড়ায় বরাদ্দ দিয়েছে। বেবিচকের ডেকোরেশন খরচ প্রায় কোটি টাকা। মাসে বিদ্যুৎ বিল আসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। অথচ এই রেস্টুরেন্টের ভাড়া মাত্র ৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে সাবেক চেয়ারম্যানের আত্মীয় সংশ্লিষ্ট রয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

এ ছাড়াও শাহজালাল বিমানবন্দরে ‘কনক’ নামে  একটি রেস্টুরেন্টও সাংবাদিক কোটায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শাহজালালে কার পার্কিংও সাংবাদিক কোটায় বহিরাগতদের নামে ইজারা দেওয়া হয়েছে। শোনা যায়, কয়েকটি দোকানও সাংবাদিকদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এগুলোর বরাদ্দ বাতিল না করে পুনরায় নবায়ন করা হচ্ছে। থার্ড টার্মিনালেও সাংবাদিক কোটায় রেস্টুরেন্ট বরাদ্দ দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে জানা যায়।

আরবি/জেডআর

Link copied!