ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৪ মাস

সম্ভাবনার পথে নির্বাচনি চাপ

রহিম শেখ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৪, ১২:৩৯ এএম

সম্ভাবনার পথে নির্বাচনি চাপ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বহুমুখী চ্যালেঞ্জ সামলে চার মাস পার করেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সময়ে অনেককিছু হয়েছে দৃশ্যমান, আবার অদৃশ্যমান রয়েছে অনেককিছু। তবে পূর্ণদমে দেশের মানুষ ও উন্নয়ন সহযোগীসহ বহির্বিশ্বের সমর্থন এবং স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছে সরকার। ফলে আস্থা ফিরেছে রাজনীতি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষায়। তবে এই সময়ে সম্ভাবনাও ছিল বিশাল। কিন্তু এই চার মাসে সম্ভাবনার সবটুকু কাজে লাগানো যায়নি। সেজন্য রাষ্ট্র মেরামতে আরও সময়ের কথা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন সরকারের উপদেষ্টারা।

এই মেরামত কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত মোট দশটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সংবিধান ও নির্বাচনি  সংস্কারে। ইতোমধ্যে কমিশন গঠন করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ট্রেনে যাত্রা শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছেন প্রধান উপদেষ্টা। মোটাদাগে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করলেও চাপ বাড়ছে দিনক্ষণ জানানোর। কিন্তু দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি দাঁড় করাতে পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রবাসীরা। গত চার মাসে পাঠিয়েছেন রেকর্ড পরিমাণে রেমিট্যান্স। গতি ফিরেছে রপ্তানি আয় ও আমদানিতে। কিন্তু এক ‘মূল্যস্ফীতি’ ধবলধোলাই দিয়েছে গোটা অর্থনীতিকে। মোটাদাগে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজারে যে সিন্ডিকেট রেখে গেছে, তা কোনোভাবেই দমানো যায়নি। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামে কোনোভাবেই লাগাম টানা যায়নি।

ছাত্র-জনতার ১ মাস ৪ দিনের আন্দোলনে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন হয়। তিন দিন পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়। সরকারি তথ্য অনুসারে, দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদের ১৪টি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ৬০টি। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ৪১টি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যত দ্রুত হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, সেটি গ্রহণ করার প্রস্তুতি কারও ছিল না। ফলে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ নিয়ে পথচলা শুরু হয় বর্তমান সরকারের। এই চার মাসে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ সামলে অর্জন ও ব্যর্থতা দুটোই ছিল পাশাপাশি। যদিও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক তাদের পূর্বাভাসে চলতি বছরের জন্য বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিয়েছে। তারা বলছে, প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশ হতে পারে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ছে। তবে এটি কতদিন থাকে, সেটি দেখার বিষয়। তিনি বলেন, আগামী দিনে পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটি বলা এখন কঠিন। আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৮ লাখ কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচারের তথ্য জাতির সামনে প্রকাশ করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও আর্থিক কারচুপির সেই অর্থ কীভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় সেই পথ খুঁজতে কাজ করছে সরকারের বেশকিছু সংস্থা।

সংস্কার কমিশন গঠন: হাসিনা সরকারের পতনের ১ মাস ৬ দিন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ১ মাস ৩ দিনের মাথায় ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বহুল আলোচিত ৬টি খাত সংস্কারে সুনির্দিষ্ট কমিশনের ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয় সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারকে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র সচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। আগামী তিন মাস অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দেবে ৬টি কমিশন। এরপর ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করবে সরকার। চূড়ান্ত পর্যায়ে শিক্ষার্থী, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। 

সংস্কারের অগ্রগতি: রাষ্ট্র সংস্কারে কমিশন গঠনের এক মাস পর ৪ নভেম্বর কমিশনপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময়ে সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন অগ্রগতির কথা জানানো হয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সবার মতামত সংগ্রহ শুরু করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় হচ্ছে। পুলিশ সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে ১০টি সভা করেছে। পাশাপাশি অংশীজনদের সঙ্গে আরও চারটি বৈঠক করেছে। জনসাধারণের মতামত চেয়ে একটি প্রশ্নমালা প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যা ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনি ট্রেনে যাত্রা: অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে গত ১৬ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও (রূপরেখা) পাওয়া যাবে। নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। এরপর গত ২১ নভেম্বর অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আরও চার ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কাজের সুবিধার্থে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চার নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে চারটি নতুন কমিটি গঠন করেছে। চারটি কমিটির মধ্যে ৮ সদস্যের ‘আইন ও বিধি সংস্কার কমিটি’র প্রধান করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছুউদকে। এই কমিটির অন্যতম প্রধান কাজ হবে বিদ্যমান নির্বাচনি আইনসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সব আইন ও বিধিবিধান পর্যালোচনা করা এবং সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য ও ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ করা। নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে ৯ সদস্যের আরেকটি কমিটি।

দুর্নীতি শনাক্তে শ্বেতপত্র কমিটি: ২২ আগস্ট দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র জানতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গত ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ২৮ লাখ কোটি টাকার বেশি। এই অর্থ গত ৫ বছরে দেশের জাতীয় বাজেটের চেয়ে বেশি। আলোচ্য সময়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরের পাচারের অর্থ দিয়েই ৭৮টি পদ্মা সেতু করা সম্ভব। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে দুর্নীতি হয়েছে- ব্যাংকিং খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, উন্নয়ন প্রকল্প, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে।

প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারেই অস্বাভাবিক ছিল। একই সঙ্গে দেশের প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছিল। আতঙ্ক, অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা ছিল সব প্রতিষ্ঠানে। এ সময়ে টানা এক সপ্তাহ কর্মবিরতি পালন করেছে পুলিশ। ফলে ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। থানাগুলোয় পুলিশ না থাকায় দেশব্যাপী ডাকাতের আতঙ্ক ছিল। এ সময়ে পাড়া-মহল্লায় মানুষ রাত জেগে পাহারা দিয়েছে। তবে এক সপ্তাহ পর কাজে ফিরেছে পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে সরকারি স্থাপনা ও শিল্পকারখানা আক্রান্ত হয়। পরিস্থিতি উন্নয়নে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানো হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত দ্রুত সরকারের পতন হয়েছে, যেটাকে গ্রহণ করার প্রস্তুতি কারও ছিল না। ফলে প্রশাসনে এর প্রভাব পড়ে। এ ছাড়াও পদোন্নতিবঞ্চিতদের ক্ষোভসহ চরম অস্থিরতা নেমে আসে। তবে ইতোমধ্যে অনেক সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।

সংলাপ ও রাজনীতি: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় প্রভাব পড়েছে। এর আগে একটি দল ও জোট ছাড়া অন্যদের রাজনৈতিক কর্মসূচি অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ ছিল। সরকারবিরোধী বিশেষ করে শেখ হাসিনা ও পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলা কঠিন ছিল। কিন্তু অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজ নিজ কর্মসূচি পালন করছে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। গত ৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতাদর্শ ভিন্ন হতে পারে, মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ। 

গণহত্যার বিচারে ট্রাইব্যুনাল: বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণআন্দোলনের সময় গণহত্যা চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ গণহত্যার বিচারের বিষয়টি সামনে এসেছে। এর বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়েছে। নতুন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অপরাধ তদন্তে প্রসিকিউশনের আবেদনে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৮ ডিসেম্বর আদালতের পরবর্তী শুনানি।

ব্যাংকের টাস্কফোর্স: দেশের বহুল সমালোচিত ব্যাংকিং খাত সংস্কারে ১১ সেপ্টেম্বর ৬ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এর প্রধান হলেনÑ প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। সঙ্গে আরও ৬ সদস্য রয়েছেন। এ টাস্কফোর্স প্রধানত আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি, মন্দ সম্পদ এবং প্রধান ঝুঁকিগুলো নিরূপণ করবে। এ ছাড়া দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক পর্যালোচনা, ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ, নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি নিরূপণ, তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নিট মূলধন নির্ণয়, সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মন্দ সম্পদকে পৃথককরণসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে অন্যতম আলোচিত বিষয় শেয়ারবাজার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্যান্য খাতের সঙ্গে শেয়ারবাজারেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।

অর্থনীতির সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসছে: বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে আস্থাহীনতা ছিল অর্থনীতির বিভিন্ন পরিসংখ্যানে। অর্থনীতির অবস্থা ফুলিয়ে-ফাপিয়ে দেখানো হলেও বিভিন্ন সূচকের বাস্তব পরিস্থিতি ছিল খুবই দুর্বল। এর মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প, রপ্তানি আয় সবকিছুই ছিল মিথ্যা তথ্যে ভরপুর। এ পরিসংখ্যান নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রশ্ন তৈরি হয়। কিন্তু এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা মেলেনি। এ ছাড়াও সীমাহীন অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণ এবং ঘুষ-দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল।

দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি : দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ কমছেই না। বিশেষত, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে পারছে না সরকার। গত নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে উঠেছে। শহরে এ হার ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে উঠেছে। এদিকে মজুরি বাড়ার হার একেবারেই কম। এ হার বেড়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছে। মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে বেশি। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দশমিক ৫১ শতাংশ। এর বিপরীতে মজুরি বেড়েছে দশমিক ০৩ শতাংশ। এ ছাড়া মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি অর্থাৎ ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ মানুষের জীবিকানির্বাহের ক্ষেত্রে ওই পরিমাণে ঘাটতিতে রয়েছে। ঘাটতি অর্থ ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুসারে, গত মাসে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর আগের মাসে অর্থাৎ অক্টোবরে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহের ভর মৌসুমে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের দাম বেশি বাড়ছে। ফলে খাদ্যবহির্ভূত খাতের চেয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও বেশি বেড়েছে। এদিকে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে অর্থাৎ গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় গত নভেম্বরে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এখনো শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। তবে এবার শহরের চেয়ে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন, সম্প্রতি তিন দফা বন্যার কারণে খাদ্যের উৎপাদন কমেছে। এ কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!