অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বড় রদবদল হচ্ছে প্রশাসনে। সেই ধারাবাহিকতায় দেশের ২৫ জেলা থেকে ডিসি প্রত্যাহার করা হয়েছে। যার কারণে এসব জেলায় পদগুলো এখনো শূন্য অবস্থায় রয়েছে। তবে আবারও চলতি সপ্তাহে প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদলের আভাস পাওয়া গেছে। সরিয়ে দেওয়া হতে পারে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের। বিশেষ করে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী এবং অতি উৎসাহী হয়ে বিগত সরকারের পক্ষে বিশেষ ভূমিকা রাখা সচিবদেরকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সরিয়ে দেওয়া হবে। অতিরিক্ত এবং যুগ্ম সচিব পর্যায়েও বেশ বড় ধরনের রদবদল নিয়ে কাজ চলছে। পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনে নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ চলতি সপ্তাহে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককেও প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, সরকারের প্রশাসন সংস্কারের অংশ হিসাবে শিগগিরই সচিব পর্যায়ের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া যেসব সচিবের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যায় অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাদের পদ হারাতে হবে। অতিউৎসাহী হয়ে বিগত সরকারের সময় যেসব সচিব বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তিনি আরও জানান, মাঠ প্রশাসনে ডিসি এবং কিছু এডিসিকে সরিয়ে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে। তা বাস্তবায়নে কাজ করছি। ইতোমধ্যে সরিয়ে দেওয়া ডিসিদের জায়গায় নতুন কর্মকর্তা পদায়ন চলতি সপ্তাহের মধ্যেই হবে। ফিটলিস্ট তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া কিছু এডিসিকেও পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। সব বিষয় নিয়ে ব্যস্ততম সময় পার করছেন বলে জানান জনপ্রশাসন সচিব।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। বিগত সরকারের সময়ে দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়াই পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধার কারণে উল্লেখযোগ্য কোনো কাজই করতে পারেনি মন্ত্রণালয়টি। কারণ মন্ত্রণালয়টির সিনিয়র সচিবকে তারা সবসময় সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেছেন। গত ২৯ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নতুন সিনিয়র সচিব হিসাবে যোগদান করেছেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারে ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেস উর রহমান। নতুন সচিবের যোগদানের ফলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের আস্থা ফিরে এসেছে। মন্ত্রণালয়টির কার্যক্রমে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় যারা সিনিয়র সচিব এবং সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের পর্যায়ক্রমে সরিয়ে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত অধিকাংশ সিনিয়র সচিব, সচিবের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। শুধু মন্ত্রিপরিষদ সচিব চুক্তিভিতিক কর্মে নিয়োজিত আছেন। আগামী ১৩ অক্টোবর তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার শেষ কর্ম দিবস হবে ১০ অক্টোবর। কারণ পরবর্তী তিন দিন সরকারি ছুটি। এ ছাড়া পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শিগগিরই সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবির খোন্দকার, আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন, সমাজকল্যাণ সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক ও পানিসম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, স্থানীয় সরকার সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান, ডাকা ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব কেএম আমিরুল ইসলাম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. শামসুল আরেফিনসহ প্রায় এক ডজন সচিব পদ হারাচ্ছেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জনগণের আস্থাহীনতার কারণে ২০ আগস্ট ২৫টি জেলা থেকে জেলা প্রশাসক প্রত্যাহার করা হলেও এখনো নতুন ডিসি পদায়ন করা সম্ভব হয়নি। বিগত সরকারের আমলে তৈরি করা ডিসির ফিটলিস্ট বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দাবির মুখে বাতিল করা হয়। ডিসি নিয়োগের লক্ষ্যে প্রায় ৬০০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের উদ্যোগ নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইতোমধ্যে ৪০০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। ডিসি পদে নিয়োগ পেতে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা বেশ তৎপর। বিশেষ করে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবরা (পিএস) ডিসি হওয়ার জন্য নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের পিএস সাব্বীর আহমেদ, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নওফেল চৌধুরীর পিএস মো. নাহিদ ইসলাম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরার পিএস মো. হাবিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভীর পিএস মোহাম্মদ আল আমিন, পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালামের পিএস মো. আদুল হামিদ মিয়া, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পিএস রেয়াজুল হক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক পরিচালক ও পর্তুগালের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর লায়লা মুস্তাজেরি দীনার স্বামী মো. আবু আউয়াল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর পিএস রোকন উল হাসান, বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রীর পিএস আব্দুল জলিল, প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পিএস মোহাম্মদ মিকাইল, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর পিএস নুর আলম।
আপনার মতামত লিখুন :