সংবিধান সংস্কার কমিশন বাংলাদেশের সংবিধানকে আরও সংক্ষিপ্ত এবং বোধগম্য করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এ জন্য কিছু অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়া বা প্রতিস্থাপন করতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন কমিশনের প্রধান আলী রিয়াজ।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে, তবে কিছু পরিবর্তন জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলার মানুষ ব্রিটিশসহ সব ধরনের হানাদারদের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেছে। তাহলে সে চেতনার কথা কেনো উল্লেখ করা হবে না?
তিনি আরও বলেন, আর অবশ্যই ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের কথা সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশে যথাযথভাবে উল্লেখ করে সম্মান জানানো উচিত। হাজার হোক, এ বিদ্রোহই একটি উন্নত ও নতুন বাংলাদেশের জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের সুযোগ তৈরি করেছে। আমাদের সুপারিশও সে দিকেই হবে।
আলী রিয়াজ জানান, সংস্কার কমিশনের কাজ চলাকালীন অনেক অংশীজন ও বিশেষজ্ঞ সংসদে দ্বিকক্ষ-বিশিষ্ট ব্যবস্থা, অর্থাৎ আইনসভার দুটি পৃথক কক্ষ চালুর পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করছি। চূড়ান্ত সুপারিশ সময়মতো দেওয়া হবে।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে রিয়াজ বলেন, এ অনুচ্ছেদ সংসদে ফ্লোর ক্রসিংয়ের মাধ্যমে অবাধ ভোটদানে বাধা দেয়। কোনো সদস্য দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তিনি তার আসন হারান। এতে ক্ষমতাসীন দল অনুচ্ছেদটিকে রাবার স্ট্যাম্পের মতো ব্যবহার করে। ফলে সংসদ কখনোই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট দিতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে, যাতে শাসকেরা সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রধর্মসহ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ থাকবে কি না, সে বিষয়ে রিয়াজ বলেন, বিশ্বের ২৫ শতাংশ দেশেরই রাষ্ট্রধর্ম আছে।
তিনি বলেন, এটি তাদের ধর্মনিরপেক্ষ হতে বাধা দেয় না। ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, সংবিধানের বাংলা সংস্করণে এ শব্দটির ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা একটি দর্শন। তাই শব্দ নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়াই ভালো।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বহুত্ববাদী চরিত্রকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির সঙ্গে আপস করা যাবে না। সেটিই আমাদের ভিত্তি।
সংবিধানে মৌলিক নীতিমালা সম্পর্কে রিয়াজ বলেন, এগুলো হওয়া উচিত ‘সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদা’।
আপনার মতামত লিখুন :