আসন্ন গরম মৌসুম যেন বিভীষিকাময় হতে চলেছে দেশবাসীর জন্য। কারণটাও প্রায় সবারই জানা। আর তা হচ্ছে- বিদ্যুতের হাঁসফাঁস।
বিগত সরকারের নানা দুর্নীতি ও ভুল নীতির খেসারত হিসেবেই এই বিদ্যুতের হেরফের বলে জানাচ্ছেন বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আসন্ন মৌসুমে এর চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে বড় ঘাটতি থাকতে পারে। কেননা পর্যাপ্ত বিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে জ্বালানি আমদানির জন্য যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দরকার তার সংস্থান নেই। আর শীঘ্রই এর জোগান দেওয়া যাবে বলেও কোন পূর্বাভাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় আসন্ন গরম মৌসুমে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট পরিমাণ লোডশেডিং হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে করে বাড়বে জনভোগান্তি।
বিদ্যুৎ খাতে ৪৫ হাজার কোটি টাকার দেনায় ডুবেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। যার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি। আর এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ খাতে শিগগিরই কোনো সমাধান আসবে না, যার ফলে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা আরও বাড়বে।
এছাড়া, গরম মৌসুমে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট হবে, যা কখনো কখনো এর চেয়েও বেশি হতে পারে। বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ১১ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ, ফলে লোডশেডিং অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থাকলেও জ্বালানির সংকট রয়েছে। এই সংকট কাটানোর জন্য গ্যাস কূপ সংস্কার এবং কয়লা ও এলএনজি আমদানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে তা পর্যাপ্ত হবে না। এজন্য আমদানি বাড়ানো প্রয়োজন। তবে, ডলার সংকটের কারণে এ সমস্যা সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আসন্ন রমজানে সাহরি, ইফতার ও তারাবির সময় লোডশেডিং বন্ধ রাখােই প্রথম অগ্রাধিকার বলেও জানান তিনি।
পিডিবি সূত্রে জানা যায়, আগামী মার্চ-এপ্রিলে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৮ হাজার ২৩২ মেগাওয়াট। এই চাহিদা মেটাতে গ্যাসিভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে ৬,৪০০ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৫,৫৫৮ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ৪,১৪৯ মেগাওয়াট এবং ২,১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা প্রয়োজন হতে পারে। দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু জ্বালানি সরবরাহ না থাকায় চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উত্পাদন হয়েছে গত বছরের ৩০ এপ্রিলে। ঐ দিন ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট উত্পাদিত হয়। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট উত্পাদন করা হয়েছে গত বছর।
সূত্র আরও জানায়, বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতি কিলোওয়াটে পিডিবি গড়ে প্রায় চার টাকার লোকসান করে। ঘাটতি পূরণে ভর্তুকি দেয় সরকার। অর্থসংকটে থাকায় বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি। একই সঙ্গে চাহিদামতো ডলার না পাওয়ায় বিদেশি কোম্পানির বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পিডিবির দেনার পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। বকেয়া পরিশোধে শেভরন, আদানিসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি দেশীয় বেসরকারি বিদ্যুৎ উত্পাদকদেরও চাপ রয়েছে। এ দেনা যতটুকু পরিশোধ করা সম্ভব হবে বিদ্যুৎ উত্পাদন বৃদ্ধি ততটুকু সহজ হবে।
আপনার মতামত লিখুন :