ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন শীতের ছুটি আপনজনদের সাথে কাটাতে ব্যস্ত, আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা, কিন্তু জীবিকা ও পেশাগত কারণে দায়িত্বের ভারে রাষ্ট্র ও সমাজের একাংশ মানুষের এ দিনগুলো হয় নিরানন্দ। বিভিন্ন উৎসবে ও ছুটির দিনে কর্মস্থলে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। চাইলেও যেকোনো ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই । লিখছিলাম যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের কথা।
প্রতিবারের মতো এবারও শীতকালীন ছুটিতে বাড়ি যাওয়া হবে না বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তারা পরিবারের সাথে দিন কাটাচ্ছে। তবে হাড় কাপানো শীতেও নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সবাই যখন ক্যাম্পাস ত্যাগ করে বাড়িতে অবস্থান করে তখন স্বপ্নের ক্যাম্পাসটাকে আগলে রাখার জন্য বদ্ধপরিকর তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব আনসার সদস্যদের । কেউ মামা, কেউবা ভাই আবার কেউ তাদের আংকেল সম্বোধন করে । সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে চলছেন তাঁরা। ইদ কিংবা পূজা দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস শূন্য হয়ে থাকলেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা । এ যেন একা রেখে চলে যাওয়া বিচ্ছেদ।
বিশ্ববিদ্যালে মোট আনসার সদস্য আছে ৫৪ জন। এর মধ্যে ছুটিতে আছেন মাত্র ৬/৭ জন। বাকিরা আছেন ক্যাম্পাস পাহাড়ায়। যারা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন তারা হয়তো পরিবারের সাথে নিজেদের মূহুর্তগুলো ভাগাভাগি করতে পারবে না কিন্তু সহকর্মীদের সাথেই কাটবে তাদের ছুটির মূহুর্তগুলো। এক ছুটিতে কারোর বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হলে অন্য ছুটিতে তারা যেতে পারেননা৷ একজন শীতকালীন ছুটি পেলে তিনি আবার গ্রীষ্মকালীন ছুটি পাবেন না। এ নিয়ে তাদের আফসোস হলেও অন্য সহকর্মীরা যে পরিবারের সাথে নিজেদের মূহুর্তগুলো ভাগ করতে পারছে এতেই তাদের আনন্দ।
ছুটিতে বাড়ি ফেরা নিয়ে কথা হলো তাদের সঙ্গে।
এক আনসার সদস্য মো.লিমন বলেন, বছরের বিভিন্ন ছুটিতে পরিবার সাথেই কাটাতে মন চাই, কিন্তু চাইলেও তা সম্ভব না। কারো না কারো তো এখানে থাকতেই হবে, সবাই যদি চলে যায় তাহলে ক্যাম্পাস পাহাড়া দিবে কে! এখন এগুলোর সাথেই নিজেদের মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে।
আরেক নিরাপত্তা কর্মী মো. ফারুক বলেন, আমাদেরকে ছুটি দেওয়া সাধারণত মাসিক আকারে, প্রত্যেক মাসে কয়েক জন কয়েক জন করে ছুটি দেওয়া হয় একারণে আমরা বিভিন্ন ছুটিতে বাড়ি ফিরতে পারি না। যদিও বিভিন্ন উৎসবে পরিবারের আপজনদের প্রতি একটা টান কাজ করে, কিন্তু দায়িত্বের কারণে এখানে থাকতে হয়। এগুলোর সাথে এখন আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিবস ও ধর্মীয় উৎসব পালনে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে। এই ছুটিতে প্রত্যেকেই চায় পরিবারের সাথে থাকতে। কিন্তু কাঁধে তাদের রয়েছে দায়িত্ব। এই দায়িত্বের দায়বদ্ধতা থেকেই পরিবারের সাথে থাকার আনন্দ বিসর্জন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে রাখছে নিরাপদ। তাদের এই ত্যাগই মনে করিয়ে দেয়, মানুষ একে অপরের জন্য। ত্যাগেই পাওয়া যায় সুখ। কেউ একজন সুখ পেতে হলে অপর আরেকজনকে ত্যাগ করতেই হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা এর অন্যতম উপমা।
আপনার মতামত লিখুন :