ঢাকা: স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী আলী আখতার হোসেন আগামী ১৭ অক্টোবর অবসর-পূর্ব ছুটিতে যাচ্ছেন। চাকরির মেয়াদ সম্প্রসারণ করা না হলে ওই দিনই হবে তার শেষ কর্মদিবস।
দাপ্তরিক সফরে বগুড়ায় অবস্থানরত প্রধান প্রকৌশলী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সম্প্রসারণের নজির এখানে খুব একটা নেই। আমি চেষ্টাও করছি না। তা ছাড়া আর চাকরি করার ইচ্ছে আমার নেই। এক বছর তিন মাস প্রধান প্রকৌশলী ছিলাম। আল্লাহপাক আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এমনিতেই এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী পদে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর দৃষ্টান্ত তেমন নেই। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহদিুর রহমান ও শ্যামা প্রসাদ অধিকারীর চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল বিভিন্ন কারণে।
এরপর থেকে কোনো কারণকেই আর বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ক্রমানুসারে পদোন্নতি ও পদায়ন হয়েছে বরাবর। তবে পটপরিবর্তনের কারণে এবার কী হয় বলা দুরূহ। এ নিয়ে নানামুখী সরব আলোচনা আছে সংশ্লিষ্ট মহলে। কিন্তু আলোচনা যা-ই থাকুক না কেন, দিন শেষে স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী আলী আখতার হোসেনের পর ক্রমানুসারে আছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা, ডিজাইন ও প্রযুক্তি) গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ। তিনি যদি প্রধান প্রকৌশলী হন, তাহলে তার কার্যকাল হবে ৩ মাস ১০ দিন। সে হিসাবে তিনি অবসর-পূর্ব ছুটিতে (পিআরএল) যাবেন ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি।
চাউর আছে, পতিত সরকারের আমলে নানা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। তিনি দীর্ঘদিন গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। সেই হিসাব কষলে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে তার পদোন্নতির সম্ভাবনা কতখানি, তা সহজেই অনুমেয়। রূপালী বাংলাদেশকে হতাশার সুরে তিনি বললেন, ‘আমি জানি না, মন্ত্রণালয় জানে।’
দ্বিতীয় ক্রমে আছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন, মনিটর, অডিট, প্রকিউরমেন্ট ও আইসিটি) শেখ মুজাক্কা জাহের। যত দূর জানা যায়, তিনি অত্যন্ত চৌকশ কর্মকর্তা। তবে তার সদর দপ্তরে কাজের অতীত অভিজ্ঞতা একদম নেই। তিনি যদি প্রধান প্রকৌশলী পদে পদায়িত হন, তাহলে তার চাকরির মেয়াদকাল হবে ৩ মাস ২০ দিন। সেই হিসাব অনুযায়ী তিনি অবসর-পূর্ব ছুটিতে যাবেন (পিআরএল) ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। শোনা যায়, তিনিও বিগত সরকারের সময়ে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন। কদিন আগে এ সম্পর্কে একাধিক দৈনিকে নানা মুখরোচক খবর বেরিয়েছে। একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র দাবি করেছে, এসব প্রতিবেদনের ফলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
ক্রমানুসারে এর পরের অবস্থানে আছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকশৌলী (স্থানীয় নগর হোটেল) কে এম জুলফিকার আলী। তার কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে সদর দপ্তরে কাজের অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই। তিনি পদোন্নতি পেলে তার কার্যাকাল হবে ৩ মাস ২৯ দিন। সে অনুযায়ী তার অবসর-পূর্ব ছুটিতে যাওয়ার কথা ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। তিনি আলোচনায় নেই, দৌড়েও নেই।
চতুর্থ ক্রমে আছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (জল সংস্থান) এনামুল হক। তিনি যদি পদোন্নতি পান, তাহলে তার কার্যকাল হবে ৭ মাস ২৯ দিন। হিসাব অনুযায়ী তিনি অবসর-পূর্ব ছুটিতে যাবেন ২০২৫ সালের ১৯ জুন। তার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের সঙ্গে নানাভাবে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনিক কাজে তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে সব মহলেই প্রশ্ন আছে।
সবশেষ, অর্থাৎ পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ উন্নয়ন) মো. আব্দুর রশিদ মিয়ার নাম।
তিনি যদি পদোন্নতি পান, তাহলে তার কার্যকাল হবে প্রায় ১ বছর ১০ মাস ১০ দিন। তিনি অবসর-পূর্ব ছুটিতে যাবেন ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট। তিনি একজন দক্ষ ও কর্মঠ কর্মকর্তা। প্রশাসনিক কাজে তার দক্ষতা সর্বজনবিদিত। তিনি তিন বছরের অধিককাল সদর দপ্তরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) হিসেবে সুনামের সঙ্গে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অধিষ্ঠিত হন।
প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার দৌড়ে তিনি সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। ক্রম ভেঙে চারজনকে ডিঙিয়ে শেষমেশ যদি তিনি প্রধান প্রকৌশলী হয়েই যান, তাহলে এলজিইডির ইতিহাসে তা হবে অনন্য নজির। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি আনন্দচিত্তে বললেন, ‘দোয়া করবেন ভাই, আমার সম্ভাবনা অনেক বেশি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার একটা ব্রেক থ্রো হয়েও যেতে পারে।’
আপনার মতামত লিখুন :