রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৪, ১০:০৯ পিএম

উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ নিরাপদ পানি, নিরাপদ জীবন

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৪, ১০:০৯ পিএম

উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ নিরাপদ পানি, নিরাপদ জীবন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জীবনের জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানি। বিশুদ্ধ পানিই নিরাপদ রাখে জীবন। বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্যতা মানবাধিকারের অংশ। দেশের মানুষ সে অধিকার কতটা ভোগ করছে? বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক দূষণ আক্রান্ত মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। অগ্রগতি সত্ত্বেও এক কোটি ৯৪ লাখ মানুষ এখনো সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে থাকা আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। বিশ্বজুড়েই নিরাপদ পানির সমস্যা রয়েছে। বিশ্বে প্রতি চারজন মানুষের একজন নিরাপদ পানির অভাবে ভুগছে। দেশের ৪১ শতাংশ মানুষ এখনো নিরাপদ পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাড়িতে নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধা পায় না ৬১ শতাংশ মানুষ। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, অপর্যাপ্ত বাজেট; সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার ত্রুটি; সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা ও অসচেতনতার কারণে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের সুবিধা থেকে এখনো দূরে এই মানুষেরা। 

পানি বিশুদ্ধকরণ কোম্পানিগুলো পৃথিবীজুড়ে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যবসা করছে। তারা চেষ্টা করছে পানি থেকে সবকিছু ছেঁকে নিয়ে শুধু H2O উৎপাদন করতে। কিন্তু তাদের এই চেষ্টা একটা নির্দিষ্ট সীমার পরে আর সম্ভব নয়।

যে দেশের মানুষ নিয়মিত সুপেয় পানি পান করতে পারে না, সেই দেশ কখনোই উন্নতির কাতারে আসীন হতে পারবে না। সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত ‘সায়েন্স’ ম্যাগাজিন জানায়, বিশ্বের ৮০০ কোটি জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪৪০ কোটি মানুষের কাছে নিরাপদ পানযোগ্য পানির সংস্থান নাই। তার অর্ধেক নিয়মিত যে পানি পান করেন, তাতে ই-কোলাইয়ের মতো ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। সায়েন্সের গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, ৪৪০ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকেরই বসবাস দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকায়।

নিরাপদ পানি মানুষের অধিকার। পৃথিবীর সাধারণ মানুষ তার প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছে কি না ২০১৫ সাল থেকে তার সমীক্ষা শুরু করে জাতিসংঘ। দেখা গেছে, বিশ্বের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের কাছেই পানি রয়েছে: কিন্তু সেই পানীয় জল নিরাপদ কি না তার পরিষ্কার তথ্য ছিল না। ২০১৫ সালে ঘোষিত জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম লক্ষ্য ছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে মানুষের কাছে সুলভে নিরাপদ ও পরিশ্রুত পানি পৌঁছে দেওয়া। আন্তর্জাতিক সংগঠনটি পরে তাদের লক্ষ্যমাত্রায় আরও কিছু বিষয় সংযোজন করছে। যেমন: উন্নত পানীয় জলের উৎস থাকবে, প্রতিটি মানুষের নিরাপদ পানির উৎস তার বাসস্থানের কাছে হবে এবং নিয়মিত পানির জোগান থাকবে। এই লক্ষ্যমাত্রা মাথায় রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও জাতিসংঘের শিশু-অধিকার সংস্থা ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম ফর ওয়াটার সাপ্লাই, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন’ (জেএমপি) গবেষণা শুরু করে। ২০২০ সালে তারা জানায়, আনুমানিক ২২০ কোটি মানুষের কাছে নিরাপদ পানির জোগান নেই।

বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ মানুষের আওতার মধ্যে পানির কোনো না কোনো উৎস রয়েছে: কিন্তু তা সব পানযোগ্য নয়। বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির যেসব উৎস রয়েছে সেগুলোও ক্রমশ দূষিত হয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা ৮০ শতাংশ পানিতে ক্ষতিকর জীবাণু ই-কোলাই রয়েছে। পুকুরের পানিতেও একই মাত্রায় এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি। যথাযথ স্যানিটেশন বির না থাকায় পানি দূষিত হয়ে পড়ার অন্যতম একটি কারণ বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে সুপেয় পানি সংকটের অন্যতম কারণ হলো ভূগর্ভস্থ স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ পানির চাহিদা বাড়ছে। আর যে হারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে, সেই হারে পানির স্তর পূরণ হচ্ছে না। বর্ষার মৌসুমে বাংলাদেশের অধিকাংশ জায়গায় পানির ভূগর্ভস্থ স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এলেও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল ও দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তার কারণ হলো অত্রাঞ্চলে বিপুল জনসংখ্যার বসবাস এবং পানির চাহিদাও সর্বাধিক। সেই কারণে এসব অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট বেড়েই চলছে। বহু আগেই অনেক মনীষী পূর্বাভাস দিয়েছেন, ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে পানির জন্য। এই পানির একটি অংশ চাষাবাদের জন্য, আরেকটি অংশ নিরাপদ পানির জন্য। যার ব্যত্যয় ঘটলে সুস্থভাবে জীবনধারণ করা সম্ভব নয়। 

বন্যা, বর্ষা, তীব্র তাপপ্রবাহ বা খরায় জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। নিরাপদ পানি বলতে আমরা বুঝি বিশুদ্ধ পানি, যাতে কোনো জীবাণু, সেডিমেন্ট বা ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকবে না। নিরাপদ পানি শুধু যে পানীয় হিসেবেই দরকার, তা নয়। হাত ধোয়া, কাঁচা শাক-সবজি ধোয়া, রান্নাঘরের বাসনকোসন নিরাপদ পানি দিয়ে না ধুলে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এই ঢাকা শহরেও ওয়াটার ওয়ার্কসের কাজ প্রথম শুরু হয় ১৭৭৪ সালে। এর কাজ শেষ হয় ১৮৭৮ সালে। এতে ঢাকার নবাব দান করেছিলেন প্রায় দুই লাখ টাকা। এবার ভাবুন তো, বর্তমানে সেই টাকার মূল্য কত? এখন সহজে পানি বিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়া আমাদের হাতের মুঠোয়।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির বলেছেন, দেশে পানি ব্যবস্থাপনার ঘাটতি ও নিরাপদ পানির সংকট রয়েছে। পানির সঙ্গে খরার মতো দুর্যোগ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন জড়িত। কিন্তু নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও রাজবাড়ী জেলায় ২০ শতাংশ এবং বাগেরহাট, কক্সবাজার ছাড়া পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকার ২০ থেকে ৪০ ভাগ মানুষ কম পরিমাণে নিরাপদ পানি সুবিধা পাচ্ছে। অথচ এই খাতে বরাদ্দ বাজেট ফেরত যাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও ৫০ থেকে ৬০ ভাগ বাজেট ফেরত গেছে।

দেশে খাদ্য, উৎপাদন ও স্যানিটেশন ব্যবস্থায় সরাসরি পানির ব্যবহার জড়িত থাকলেও ৪১ শতাংশ অর্থাৎ ৬ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ নিরাপদ ব্যবস্থাকৃত পানি বা সেইফলি ম্যানেজড ওয়াটার প্রাপ্তির বাইরে রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের যৌথ প্রতিবেদনের সূত্রমতে বাংলাদেশে মাত্র ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ নিরাপদ ব্যবস্থাকৃত পানি ব্যবহার করছে।

শহরাঞ্চলে বসবাসকারীদের বিপুলসংখ্যক মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে না। একইভাবে চর ও দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানি সংগ্রহে বাড়ি থেকে দূর-দূরান্তে যেতে হচ্ছে। নিরাপদ পানির অভাব ও পানি স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জ বাড়ছে।

 

সম্পাদক, রূপালী বাংলাদেশ

আরবি/জেডআর

Link copied!