ঢাকা সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪

দ্রব্যমূল্য শুধু বাড়ে, কমে না কেন

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ১০:২৯ এএম

দ্রব্যমূল্য শুধু বাড়ে, কমে না কেন

ছবি: রুপালী বাংলাদেশ

বাজারে স্থিতিশীলতা নেই। বাজারে যাওয়ার আগে কোন জিনিসের দাম কত তা ঠিক করে বসানো যাবে না। আমরা শৈশবে দেখেছি বাবা-কাকারা আমাদের মা-কাকিদের কাছে কী আছে, কী নেই সব শুনে তালিকা তৈরি করতেন। কারণ তখন বাজার এত হাতের কাছে ছিল না। তাই হাটবারে গিয়ে এক সপ্তাহের বাজার করে আসত। তালিকা করার সময় গুনে গুনে হিসাব করত কী আছে কী নেই। দাম তাদের মুখস্থ ছিল। তাই পণ্যের সামনে দাম বসিয়ে হয় টাকা অথবা ওই পরিমাণ মূল্যের সবজি বা পাট (তখনকার স্বর্ণসূত্র) নিয়ে বাজারে বিক্রি করে সপ্তাহের সাতসদাই কিনে আনত। এখন আর সেদিন নেই। বাজারে কবে কোন জিনিসের মূল্য কত হবে সেটা বাজারে না গিয়ে বলার উপায় নেই।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবার দ্রব্যমূল্যের বাজার চড়া হতে শুরু করল। সরকার বলেছিল, বাজারে কেউ বেশি দাম রাখতে পারবে না। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সে কথা শোনেনি। অর্থাৎ সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বাজারে এখন এমন কোনো পণ্য পাওয়া যাবে না, যার দাম স্থিতিশীল বা কমেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। এর মধ্যে আমদানি করা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। চাল থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা, মসলা পণ্য, মাছ-মাংস, ডিম, শিশুখাদ্যের মধ্যে গুঁড়া দুধ, চিনি এমনকি লবণের দামও বেড়েছে। পাশাপাশি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য সবধরনের পণ্যের দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতি এমন- সপ্তাহ ও মাসের ব্যবধানে এই তালিকা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে পণ্য কিনতে ভোক্তার অবস্থা নাভিশ্বাস। এতে বেশি ভোগান্তিতে আছে নিম্ন আয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মাসের ব্যবধানে এক শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বেড়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়েছিল। সারা বিশে^র মতো দেশের বাজারেও প্রভাব পড়েছে, এটাই স্বাভাবিক। এসব কথা বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন জাগে বিশ^বাজার থেকে যেসব পণ্য আনা হয় তার নয় দাম বাড়ল। তবে যেসব পণ্য দেশে উৎপাদন হয়, তার দাম কেন বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে? আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম এখন বাড়লে এই দামের এলসি করা পণ্য দেশে আসতে আরও তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। কিন্তু বিক্রেতারা তো আকাশের দিকে তাকিয়ে দাম বাড়ায়, যার কোনো ভিত্তি নেই। সেটার সুরাহা হবে কীসে? এমনকি তদারকি সংস্থা এ বিষয়টি সামনে রেখে কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায়ও আনেনি। ফলে বিক্রেতারা কারসাজি করতে সাহস পাচ্ছে। তাই বাজার তদারকি আরও জোরদার না করায় যা হওয়ার তাই হচ্ছে। আমাদের সবজিতে, চালে বিশ্ববাজারের কত প্রভাব পড়েছে? দাম কি সে অনুপাতে আছে? বাজারের দাম কমাতে আইন প্রয়োগ করার কোনো লক্ষণ নেই। ১ হাজার লিটার তেল মজুদ করার শাস্তি যদি হয় এক লাখ টাকা তাহলে মজুদদারি বন্ধ হবে কি?

সম্প্রতি গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। চোখে পড়ে রাস্তার দুপাশে পাকা ধান সোনালি বরণ হয়ে আছে। চোখ জুড়ানো মন ভুলানো সে দৃশ্য। আরও পরে যাওয়ার পথে চোখে দৃশ্যমান হলো বিলভরা ধান। কিন্তু কাটার লোক নেই। মাঝে মধ্যে ২/৪ জন কৃষকের দেখা মেলে যারা ধান কেটে নিজে ও ছোট বাচ্চাদের দিয়ে ধান বাড়িতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কথা বলে জানা গেল এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি ৫০/৬০ মণ ধান হয়েছে। প্রতি বিঘার ধান কাটতে ১০ হাজার টাকা বললেও কেউ কাটতে আসছে না। আগের মতো দক্ষিণাঞ্চল থেকেও ধান কাটতে কেউ আসে না। কারণ সড়ক উন্নয়ন ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। ধান কেটে যে টাকা পাওয়া যায়, তার চেয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশায় আয় বেশি। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সঙ্গে আলাপে জানা গেল, তারা কৃষির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

আগে সব ফসল ফলালেও দাম পেত না। ফলে ফসল চাষ করতে গিয়ে একদিকে এনজিওর লোন নিতে হতো। আর সেই কিস্তি শোধ করতে মহাজনের কাছ থেকে সুদও আনতে হতো। তারা পড়ত শাখের করাতের মধ্যে। কৃষি ঋণ কৃষকের হাতে সরাসরি দেয় না। দালাল লাগে। দালাল ও ব্যাংকে টাকা দিয়ে ঋণের সমুদয় টাকা আর ঘরে যায় না। কিন্তু সুদ ঠিকই দিতে হয়। সবদিকে সংকট। এরপর পুলিশ কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যায়। ঋণখেলাপিদের বাঁধে না, বাঁধে কৃষকদের। তা ছাড়া অন্যের জমিতে কাজ করলে কিছু বাজে কথা শুনতেই হতো। মন খারাপ হতো। সঠিক মজুরি পাওয়া যেত না। এখন গাড়ি চালাই, সম্মান আছে সুখও আছে।

কৃষকই জানে ফসল ফলানোর নিয়ম। তাই কৃষকদের সমিতি করে ছোট কোনো পরিবহন কিনে দিলে এরা বাজারজাত করলে সঠিক মূল্য পেলে কৃষি আবার প্রাণ ফিরে পেতে পারে। এমনটা হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার অর্জনটা রক্ষা পাবে। যে দেশে ধান ছিটালে ফসল ফলে থাকে সে দেশে খাদ্য আমদানির কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না। শুধু কৃষি খাতের দিকে নজর দিলে এবং এখনো যে প্রজন্ম কৃষিকাজ জানে তাদের কাজে লাগালে ফসল ফলবে। আবার দেশ হবে প্রকৃত অর্থে কৃষিপ্রধান। কৃষক তার ফসল নিজে বাজারে নিলে বাজার অস্থিতিশীল হবে না। বাকিটা সামলাতে সরকারের বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে জোরদার করতে হবে। সবাই দেশপ্রেম মাথায় নিয়ে কাজ করলে আমাদের দেশে সার্বিকভাবে সংকট হওয়ার কথা নয়।

 

আরবি/জেআই

Link copied!