ঢাকা শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হত্যা মামলার আসামিরা

মো. সাহাব উদ্দিন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৪, ০৭:০৫ পিএম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হত্যা মামলার আসামিরা

ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত মাঠে ছিলো আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কখনো লাঠি  আবার কখনো সরাসরি প্রাণঘাতি অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মাঠে থাকতে দেখা যায় তাদের। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি হয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক ও কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা। গুরুতর অপরাধে বিভিন্ন মামলার আসামি হলেও তারা সক্রিয় রয়েছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর নগরীর পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, কোতোয়ালী, বাকলিয়া থানায় দায়ের করা হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও অস্ত্র মামলায় আসামি করা হয় নুরুল আজিম রনিকে। গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশ চলে যাওয়ার সময় নুরুল আজিম রনিকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লেও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাকে সর্বশেষ ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ২ টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিতে যায়। এরপর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যমে দেখা না গেলেও ২০ সেপ্টেম্বর থেকে নিয়মিত সরকার বিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িতদের নিয়ে বিভিন্ন উস্কানিমূলক পোষ্ট দিতে দেখা যায়। এমনকি বিরোধী রাজনীতিবিদদের হুমকি দিয়েও ফেসবুকে পোষ্ট দিতে দেখা যায় এই হত্যা মামলার আসামিকে।

একই ভাবে যুবলীগের সাবেক অর্থসম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরকেও ৫ আগস্ট থেকে ফেসবুকে সক্রিয় দেখা যায়। সে হত্যা মামলাসহ অন্তত ২০টি মামলার আসামি বলে জানা গেছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে প্রতিদিন ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছে বাবর।

ফেসবুক ঘেঁটে অন্তত এমন ১০ জন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীর সন্ধান পাওয়া গেছে যারা হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৎপর রয়েছে। প্রতিদিন অন্তবর্তীকালীন সরকার ও বিরোধী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে নিয়মিত পোষ্ট দিয়ে যাচ্ছেন।

সোমবার নুরুল আজিম রনি লিখেন, ‘খাদ্য সংকট চরমে। এলসি বন্ধ। আমদানি বন্ধ। প্রতিহিংসার জেরে আমদানিকারক-দের সকল কর্মকান্ড বন্ধ করে দিয়েছে দখলদার সরকার। দেশে খাদ্য সংকট চরমে। এ কারনেই ভোগ্যপন্যের মূল্য অত্যাধিক। এখন যা বিক্রি হচ্ছে- তাও ৩/৪ মাস আগে আমদানি করা। আগামী ১ মাসের মধ্যে ভোগ্যপন্যের মূল্য ২ থেকে ৩ গুন বৃদ্ধি পাবে। দেশের মানুষের আয় এবং সঞ্চয় কম। যদি সঞ্চয় থাকতো তাহলে তারা বর্তমান দামে হলেও ভোগ্যপণ্য ক্রয় করে রাখত’।

মঙ্গলবার তিনি লিখেন, ‘আ.লীগসহ ১১টি দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ চেয়ে করা রিট প্রত্যাহার করে নিয়েছে হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও হাসিবুল ইসলাম। গতকাল তারা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ঢালাও ভাবে প্রচারনা চালালেও আজ তারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। অতঃপর ওরা বুঝে গেছে ওদের শয়তানে লারে…’

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাবেদুল আজম মাসুদ মঙ্গলবার লিখেন, ‘অন্ধকারে নিমজ্জিত গোটা দেশ কেমনে হবে লাল বিপ্লবীদের নতুন বাংলাদেশ শ্লোগান ছিলো ছিঃ ছিঃ হাসিনা এখন জনগন কই ভালোই ছিলাম হাসিনায়’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপারেশন এন্ড ক্রাইম) আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। আমাদের সাইবার টিম কারা কি পোষ্ট দিচ্ছে তাদের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অনেক সময় দেখা গেছে একজনের পেজ আরেকজন চালাচ্ছেন আমরা তাদেরকেও আইনের আওতায় আনবো।

জানতে চাইলে মানবাধিকার আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান বলেন, যারা হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সাইবার ‍যুদ্ধে নেমেছেন তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হওয়ার দরকার। তারা যেহুতু রাজনৈতিক কর্মী তারা সবসময় একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করতে তৎপর থাকবে বলে আমি মনে করি।

আরবি/জেডআর

Link copied!