সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটালেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস ছাড়ার চার বছর পর শক্তিশালী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে আবার হোয়াইট হাউসে ফিরছেন তিনি। ট্রাম্পের এই হোয়াইট হাউস জয় দেশটির ১২০ বছরের ইতিহাসেরই অনন্য ঘটনা।
এমন এক নির্বাচনের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ফিরলেন- যে নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর সময়ে দুই দফায় হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন তিনি। যে নির্বাচনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভোটের মাত্র কয়েক মাস আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ডেমোক্র্যাট শিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মতো এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করে যিনি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বেশিরভাগ জনমত জরিপেই এগিয়ে ছিলেন। তবে এসব জরিপের ফল ভোট বাক্সে প্রতিফলিত না হওয়ায় এখন এটা স্পষ্ট যে, সে জরিপগুলো হয়তো পক্ষপাতের দোষে দুষ্ট ছিল। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন হেভিওয়েট ক্যান্ডিডেটকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলতে পারায় কমলা হ্যারিসও প্রশংসা পাবেন। এসব নানা কারণে এবারের নির্বাচনটি বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে।
জনমত জরিপ সবসময় কমলাকে এগিয়ে রাখলেও এটি এমন এক নির্বাচন ছিল- যে নির্বাচনে ভোটাররা ২০১৬ সালের তুলনায় অনেক বেশি সরবেই ট্রাম্পকে সমর্থন করে বিজয়ী করেছেন। এর একটা কারণ হতে পারে, ৪ বছর সময়ে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধ এবং সংঘাতে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ভোটারদের অসন্তুষ্টি। আর এ কারণে, ৬ নভেম্বরের বিজয়ী ভাষণে বিশ্বে যেসব যুদ্ধ চলছে, তা বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি দেশটির প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি পররাষ্ট্র বিভাগ, পেন্টাগন, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিল এবং সর্বোপরি কংগ্রেসের ভূমিকার ওপর নির্ভরশীল। ফলে রাতারাতি বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ফলে বিশেষত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ আরও বেশকিছ ক্ষেত্রে মার্কিন নীতিতে বড় পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফ্লোরিডার ওয়েন্ট পাম বিচে উচ্ছ্বসিত জনতার সামনে ট্রাম্পের বিজয়ী ভাষণেও সেই নীতির প্রতিফলন দেখা গেছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কোনো যুদ্ধ ছিল না। আইএসকে পরাজিত করা ছাড়া চার বছর ধরে আমাদের কোনো যুদ্ধ হয়নি। ডেমোক্র্যাটরা বলেছিল, আমি নাকি যুদ্ধ শুরু করব। আমি যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছি না, বরং যুদ্ধ বন্ধ করতে যাচ্ছি।’
ট্রাম্পের এই ঘোষণা এবং নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় ইতোমধ্যেই ইউক্রেনজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে হতাশা। মার্কিন সামরিক সহায়তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞরাও। ২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তার মাধ্যমে ইউক্রেনকে সমর্থন করতে গিয়ে প্রকারন্তরে এই যুদ্ধকে প্রলম্বিত করেন বাইডেন। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় সেই জায়গাটায় নিশ্চিতভাবেই ছেদ পড়বে। এ কারণে সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ইউক্রেনের কাছে যে অস্ত্র মজুদ আছে তা শেষ হয়ে গেলেই যুক্তরাষ্ট্রের শর্তের কারণে ইউক্রেন হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হবে। কারণ, বিভিন্ন সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কথা বলেছেন ট্রাম্প। আর এক্ষেত্রে ট্রাম্পের ইউরোপের সমর্থন পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, কারণ তারাও এই প্রলম্বিত যুদ্ধের পক্ষপাতী নয়।
এ সম্পর্কে এবিসি নিউজের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরে আসায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি বড় রদবদল হতে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ব্যাপক সামরিক ও আর্থিক সহায়তা যাচ্ছে ইউক্রেনে। এ কারণেই রাশিয়াকে ঠেকিয়ে রাখতে পারছে জেলেনস্কির দেশ। অথচ ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যই নয়। এদিকে ন্যাটোর সবচেয়ে বড় আর্থিক জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। আর ট্রাম্প বারবার এই জোট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, জোটের অন্য দেশগুলোর যে পরিমাণ তহবিল সরবরাহ করা উচিত, তারা তা দেয় না। অর্থাৎ ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় বসার পরে ন্যাটোয় হয় মার্কিন অর্থায়ন কমবে, না হয় অন্য সদস্যরা তহবিল সরবরাহ বাড়াতে বাধ্য হবে।
ইউক্রেনের পরই ট্রাম্পের নজর থাকতে পারে ফিলিস্তিনে। গত মেয়াদে ফিলিস্তিনের কোনো সুবিধা না হলেও এবার ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারে ইউক্রেনের মতো মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি’ ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তাছাড়া, আব্রাহাম অ্যাকর্ড বাস্তবায়ন করে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে তিনি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সমর্থন পেয়েছেন। নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্প জোর দাবি করেছেন, তিনি জিতলে গাজায় ইসরায়েল-হামাস এবং লেবাননে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বন্ধ করবেন। এপ্রিলে তিনি ইসরায়েলকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘তারা যা শুরু করেছে তা শেষ করতে হবে’ এবং ‘এটি দ্রুত শেষ করে ফেলতে হবে’, কারণ গাজা পরিস্থিতির কারণে ইসরায়েল ‘যুদ্ধে জনসংযোগ হারাচ্ছে’। বিশ্লেষকরাও বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্য নীতির অন্যতম প্রধান বিষয় হবে গাজা ও লেবাননের যুদ্ধ শেষ করা। গাজা নিয়ে তিনি হয়তো নেতানিয়াহুকে বোঝাতে সক্ষম হবেন, কারণ নেতানিয়াহুও হিজবুল্লাহ এবং হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অভ্যন্তরীণভাবে সমালোচিত।
তাছাড়া, নির্বাচনের আগে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করত না। কারণ, তিনি ইরানের ওপর আরও চাপ দিতেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবার তিনি তা-ই করবেন। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে তা যুদ্ধে আরও বেশি প্রভাব ফেলবে। এতে যুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সময়ের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনা করা হয় চীনকে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সুস্পষ্ট চীনবিরোধী অবস্থান ও পদক্ষেপের আলোকে বলা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-চীনের বৈরিতা এবার আরও তীব্রতর হতে পারে। যদিও বাইডেনের মতো তাইওয়ান ইস্যুতে মার্কিন বাহিনীকে ব্যবহার করে চীনকে হুমকি না দেওয়ার কথাই বলেছেন ট্রাম্প। এ কারণে তাইওয়ান ইস্যুতে চীন হয়তো খানিকটা স্বস্তি পাবে। তবে চীনের জন্য দুঃসংবাদ হবে ট্যারিফ। এই ট্যারিফ নিয়ে যুদ্ধ এর আগেও দেখেছে বিশ্ব। নির্বাচনি প্রচারণাতেই চীনের বিরুদ্ধে আবারও বাণিজ্যযুদ্ধের সেই পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈরিতাই মূলত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছে। আর সেখানে ভারত গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ফলে বেইজিংয়ের প্রভাব রুখে দিতে নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের নিবিড় ব্যক্তিগত সম্পর্ক ‘হাউডি, মোদি!’ এবং ‘নমস্তে ট্রাম্প’-এর মতো উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে প্রতিফলিত হয়েছে। এটি চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের অংশ হিসেবে এই অঞ্চলে ভারতকে আরও প্রভাব খাটাতে ও স্বাধীনভাবে ভূমিকা রাখার সুযোগ দিতে পারে। আর এই সম্পর্ক মোদির সরকারকে আরও শক্তিশালী করবে।
তাছাড়া, কোয়াড জোটকে আরও শক্তিশালী করার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও গভীর করতে পারেন ট্রাম্প। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যদি সরাসরি সংঘাতে জড়ায় আমেরিকা, তাহলে ভারত কতটা পাশে থাকবে তা নিয়ে সংশয়ের কারণে ভারতকে বাদ দিয়েই চলতি বছর ‘স্কোয়াড’ জোট গড়ে আমেরিকা। কিন্তু বাইডেনের এই নীতিকে বিশেষ পাত্তা দেবেন না ট্রাম্প, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের বিশ্বাস, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনের প্রভাব রুখতে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সে কারণে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, ২০২৫ সালে ভারতে আয়োজিত কোয়াড জোটের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি ভারতে এলে গোটা বিশ্বের কাছে বার্তা যাবে, চীনকে রুখতে নয়াদিল্লির ওপরেই আস্থা রাখছে আমেরিকা। চীন, রাশিয়া ও ভারত মিলে ইতোমধ্যে একটি কাঠামো তৈরি করে ফেলেছে। সেই জায়গায় ট্রাম্পের বাড়তি একটা চেষ্টা থাকবে যেন ভারতকে আরও কাছে টানতে পারেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশেরই বিশেষ আগ্রহ থাকে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের কারণে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি আরও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এবার। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। সম্ভবত ভূরাজনৈতিক কারণেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ নজর থাকবে। এটা সত্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের খুব ভালো বৈশ্বিক ইমেজ আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে তার বন্ধুত্ব ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গেই বেশি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ একাধিক সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে আছে তার সুসম্পর্ক। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার গৃহীত যে কোনো কার্যক্রমে জো বাইডেনের নেতৃত্বে মার্কিন ডেমোক্র্যাট সরকারের থাকে ব্যাপক সমর্থন। অন্যদিকে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের পরাজয়ে আহত হয়ে ট্রাম্প সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর এ কারণে দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পরে বাংলাদেশি-মার্কিন একটি প্রতিনিধিদল ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘ঢাকার ক্ষুদ্র ঋণওয়ালা কোথায়?’
আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে নিয়ে বেশ সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। গত ৩১ অক্টোবর, এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দেশটিতে দলবদ্ধভাবে তাদের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিভাবে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ তিনি আরও লিখেন, ‘আমরা আপনাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করব। আমার প্রশাসনের সময় আমরা ভারত ও আমার ভালো বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আমাদের বৃহত্তর অংশীদারত্ব আরও জোরদার করব।’ এসব কারণেও ধারণা করা যেতে পারে বাংলাদেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে পারেন। কারণ, সুযোগ পেলেই ট্রাম্প বিভিন্ন মাধ্যমে জানান দেন যে, ভারত এবং নরেন্দ্র মোদি তার ভালো বন্ধু।
তাই সরকারের তরফ থেকে বাংলাদেশ-আমেরিকার সম্পর্ক প্রসঙ্গে যত পজিটিভ কথাই বলা হোক না কেন ইকুয়েশন বলছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে। ড. ইউনূস এখন হোয়াইট হাউসে যে অবাধ স্বাগত ও সমর্থন পান, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াতে তা যে ব্যাহত হবে তা এখনই বলে দেওয়া যায়। তাছাড়া, ট্রাম্প সম্পর্কে ড. ইউনূসের আগের করা ব্যক্তিগত মন্তব্যও সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত কিংবা আওয়ামী লীগ যেভাবেই হোক, বিষয়টি ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দেবেই।
তবে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন নীতি যে খুব পরিবর্তন হবে তা-ও কিন্তু নয়। এটা অনেক যদি-কিন্তুর ওপর নির্ভর করছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগেই বলেছি, ব্যক্তি মোদির দারুণ ভক্ত ট্রাম্প। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনাকে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে ভারতে আশ্রয় দিয়েছেন মোদি। তাছাড়া ভারতও আওয়ামী লীগকে নিজেদের জন্য অনুকূল মনে করে। ফলে নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়লাভে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ যে উজ্জীবিত হবে, তা ধরেই নেওয়া যায়।
হৃদত্যাপূর্ণ সম্পর্কের কারণে হলেও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মোদির পরামর্শ কিছুটা হলেও কানে তুলবেন ট্রাম্প। আর এ পরামর্শ কানে তুলে ট্রাম্প যদি ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈরিতা শুরু করেন, শেখ হাসিনা অবশ্যই তার সুযোগ নেবেন। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির রসায়ন বাংলাদেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা দেখার জন্য ২০ জানুয়ারির পর আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে।
আপনার মতামত লিখুন :