ঢাকাকে অনেকেই আদর করে ডাকেন ‘তিলোত্তমা’ ঢাকা নগরী। এটি প্রাচীন একটা শহর হলেও অপরিকল্পিত একটা শহর। মোগল আমলে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে এটি গড়ে ওঠে। বর্তমানে এর পরিধি বলা যায়, পূর্বে নারায়ণগঞ্জ, উত্তরে গাজীপুর এবং পশ্চিমে সাভার পর্যন্ত বিস্তৃত। মোগলদের আমলে এটি সুবা বাংলার রাজধানীর তকমা পেলেও তা বেশিদিন থাকেনি। কারণ, তারা সুবা বাংলার রাজধানী সরিয়ে নেয় মুর্শিদাবাদে। ব্রিটিশ আমলে এটি অবিভক্ত বাংলার ছোট একটা শহর, পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীর স্বীকৃতি পেয়েছে। বিভিন্ন দিকে সময়ের প্রয়োজনে শহরের পরিধি বাড়লেও হয়নি অবকাঠামোগত উন্নয়ন। রাখা হয়নি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। এর সঙ্গে আশপাশের শহরগুলোর নেই দ্রুত চলাচলকারী রেল যোগাযোগ। ফলে চাকরিসূত্রে অনেককেই ঢাকা থেকে যেতে হচ্ছে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ না করার কারণে সারা দেশ থেকে সবাইকে বিভিন্ন কাজে আসতে হয় এবং এই সংখ্যা ১ কোটির কম নয়।
পাবলিক পরিবহনের অবস্থা তথইবচ। পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় বাস কালো ধোঁয়া ছাড়ে। দেখার কেউ নেই। কালো ধোঁয়ায় প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং কার্বন মনোক্সাইড থাকে। এখন প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যাও অনেক। এসবের নিঃসৃত ধোঁয়া পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। ঢাকা শহরের ভেতরে ইটভাটা না থাকলেও এর আশপাশে রয়েছে প্রচুর ইটভাটা। ফলে এসব ইটভাটা নিঃসৃত সালফার ডাই-অক্সাইড মিশছে বাতাসে। ফলে বায়ুদূষণ আজ মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। একটা শহরে অন্তত ২৫ শতাংশ জায়গায় গাছপালা থাকা দরকার হলেও এ শহরে নেই তেমন গাছপালা। ফলে বায়ুদূষণ বাড়ছেই। শীতকালের শুষ্ক মৌসুমে এই মাত্রা আরও বেশি বেড়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণকাজ চলার কারণে বাতাসে প্রচুর ধুলাবালির কণা বা ডাস্ট পার্টিক্যাল ভেসে বেড়ায়। ফলে শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ যেমন- অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, ব্রংকিওলাইটিস, ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ সময়ে শিশু এবং বৃদ্ধদের নিউমোনিয়া রোগ বেড়ে যায়। তারা শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে খুব কষ্ট পায়।
এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজন ব্যাপক গণসচেতনতারও। আমাদের এ শহর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর হিসেবে নাম লিখিয়েছে বহু আগেই। বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহরের তালিকায় আমাদের এ ঢাকা। আমরা এ তকমা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। এ জন্য চাই সমন্বিত উদ্যোগ। বর্তমান সরকারের পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা অনেক আগে থেকেই গাছ লাগাও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের প্রত্যাশা তিনি তার মেয়াদকালে এ ব্যাপারে একটা কার্যকর ভূমিকা রেখে যাবেন। আমরা ঢাকাবাসী আমাদের উত্তর প্রজন্মের জন্য একটা বাসযোগ্য শহর রেখে যেতে চাই।
লেখক: চিকিৎসক, কলাম লেখক
আপনার মতামত লিখুন :