ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতি ও রাজনীতিবিদের দায়

গাজী তারেক আজিজ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ১১:৫০ এএম

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতি ও রাজনীতিবিদের দায়

বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের সংস্কার কাজ আর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব বা দাবি এখন আলোচনার ঢেউ তুলছে। এর নিরিখে সবাই বিভিন্ন দফা দিয়েছে। আর সুশীল সমাজের আলোচনায়ও সরগরম। 

এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি হচ্ছে, পিআর বা প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় একটি দল যে পরিমাণ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে সংসদে দলটির প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সংস্কার প্রস্তাবে মাঝারি ও ছোট দলগুলো বিচ্ছিন্নভাবে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।

জাসদ-সিপিবি অনেক দিন ধরেই পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি করে আসছে। অন্যান্য দলের মধ্যে রয়েছে জামায়াত, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ও সিপিবি উল্লেখযোগ্য। 

ইসলামী আন্দোলনও এই পদ্ধতিতে নির্বাচনে দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ রাজনৈতিক দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, সম্প্রতি নিবন্ধন পাওয়া গণঅধিকার পরিষদ (নুর) এবং এবি পার্টিও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। এতে করে একেবারে উপেক্ষা করারও সুযোগ নেই। যদি দাবি বাস্তবায়িত না-ও হয়ে থাকে তবে ভবিষ্যতের জন্য একটা সম্ভাবনার ছাপ রেখে যেতে পারছে।

দলগুলোর নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, সংসদে সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা শ্রেয়। এতে রাষ্ট্রে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা পাবে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমদ মন্তব্য করেছেন, এই পদ্ধতি সুশাসন নিশ্চিতেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। 

তিনি আরও বলেছেন, এখন ভোটের হিসাবে প্রধান দুই দলের মধ্যে তেমন পার্থক্য না থাকলেও সংসদে আসন সংখ্যায় ব্যাপক তারতম্য হওয়ার কারণে ক্ষমতার কাঠামোতে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। কিন্তু সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে সেটি হবে না। 

তখন আদর্শভিত্তিক ছোট দলগুলোও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তারা বড় দলগুলোকে চাপ দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে জোট হবে নির্বাচনের পরে আর বড় দলগুলো ছোটদের শর্ত মেনেই সে পথে হাঁটবে। 

গণঅধিকার পরিষদের (নুর) সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, রাষ্ট্রে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি অর্জনের জন্য সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নির্বাচন চাই। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রে যে সংস্কারের আকাক্সক্ষা তীব্র হয়েছে, তার জন্য রাজনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন জরুরি ছিল।

 রাজনীতিতে সংস্কার না আনলে অন্য কিছুতে সংস্কার করে তেমন লাভ হবে না। এর অংশ হিসেবে এই মুহূর্তে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন দরকার। সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্তির ভিত্তিতে নয়, যেসব দল যত শতাংশ ভোট পাবে সেই ভিত্তিতে আসন নির্ধারিত হলে সংসদে সঠিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

যদিও জনসমর্থনের তলানিতে থাকা দলটির অন্যদলের সঙ্গে বোল মিলিয়ে দেওয়া হলেও বক্তব্যটি বেশ প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। আবার এই দলের আরেকজন নেতা বিএনপির প্রভাবশালী নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, এখনো এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের সময় আসেনি। 

সে কথার সূত্র ধরেই বলি যদি সময় না-ও আসে তবে কথা আলোচনা এগিয়ে রাখলে এর বিভিন্ন ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক হয়তো উঠে আসবে। তখন যদি জনগণ সায় দেয়, হলেও হতে পারে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নির্বাচন। 

তবে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি এই পদ্ধতির পক্ষে নয় বলেও ধারণা করা যাচ্ছে। কারণ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ আমলে দাবি জানালেও এই পদ্ধতির পক্ষে তাদের অবস্থান ছিল না। আর বিএনপি কখনোই এই পদ্ধতির পক্ষে কোনো কথা না বলায় স্পষ্টতই ধরে নেওয়া যায় তারাও চাইবে না এই পদ্ধতি। 

রাজনীতির মাঠে তাদের যে অবস্থান সে হিসেবে এই পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটলে কিছুটা হলেও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি কোনো জোট হয় নির্বাচন উপলক্ষে দলগুলো নিজেদের প্রার্থী না দিয়ে জোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে জয়ে ভূমিকা রাখে। 

কখনো দেখা যায় একটা বড় দলের জয়ের সম্ভাবনা থাকলেও জোট প্রার্থীর জন্য সমঝোতার ভিত্তিতে ছাড় দেওয়ার ফলে নিজেদের ভোট তখন অন্য দলের ভোট বলে বিবেচিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে বড় দলগুলো এটা না মেনে নেওয়া স্বাভাবিক বিষয়। আখেরে রাজনৈতিকভাবে সবাই সবার প্রবল প্রতিপক্ষ। এক্ষেত্রে নিজেদের উজাড় করে কেউই ছাড় দিতে চাইবে না।

বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ ভোট পান তিনি জয়ী হন। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন করলে প্রতিনিধিত্বশীল হবে বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। তেমনই একটা খবর লিড হয়েছে দেশের একটি দৈনিক পত্রিকায়।

তাহলে বড় দলগুলো কেন এত বিরোধিতা করছে। আর ছোট দলগুলোর কেন এত আগ্রহ এতে? ছোট দলগুলোর অঞ্চলভেদে নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে তা সবার জানা। এমনও একাধিক দল আছে যারা প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান ও গণ ভোটের ফলাফলে আনুপাতিক হারে পিছিয়ে যায় অল্প ভোটে। 

যাতে করে জয় হাতছাড়া হয়ে যায়। অথচ যেসব জায়গায় বা আসনে জয়ী হয় সেসব জায়গায় বা আসনে অনেকটা একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ে জয় পায়। ভোট শেষে পার্সেন্টেজ হিসাবে দাঁড়ায় কেউ ৪ পার্সেন্ট কেউ ৭ পার্সেন্ট কেউ ৩ পার্সেন্ট। এমনও দেখা যায় ৭ পার্সেন্ট ভোট পেয়েও কোনো আসনই পেল না। 

আবার কেউ ৩ পার্সেন্ট ভোট পেয়েও একাধিক আসন পেয়েছে। আর এই কারণেই দাবি জানানো দলগুলো পিআর বা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চায়। আর তাদের এই চাওয়াটাও দোষের নয়। সবাই চাইবে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে। 

তবে এবার জামায়াত কর্মী-সমর্থকদের ধারণা তারা রাজনীতির মাঠে চমক উপহার দিতে পারবে। যদিও অভ্যুত্থান পরবর্তী নানা বিতর্ক তাদের পিছু ছাড়ছে না। যেমন দলের শীর্ষনেতার বক্তব্যের সঙ্গে তৃণমূলের মতান্তরহেতু একেক সময় একেক কথা বলা। আর সর্বশেষ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজায় ইসলামি গান গাওয়া নিয়ে তুমুল বিতর্ক।

জামায়াত দেশের অধিকাংশ মানুষকে বোঝাতে চাইছে সরকার পতনের যে সুবিধা সাধারণ জনগণ ভোগ করছে তা তাদেরই আন্দোলনের ফসল তাদের উপহার দেওয়া। পারতপক্ষে মানুষের মোহ ভাঙতে শুরু করেছে। মানুষ বুঝতে পারছে জামায়াত রাজনীতিতে সবসময় হঠকারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। 

সরকার পতনের পর একচেটিয়া মাঠ দখল করতে গিয়ে শক্তিশালী বিএনপির সঙ্গে টক্কর বাধে। পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে বিএনপি কৌশলগত দিক বিবেচনায় চুপসে যায়। জামায়াত যথারীতি মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর স্বপ্নে বিভোর এই বুঝি ক্ষমতায় আসীন হলো! 

একদিকে বিএনপির পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন অন্যদিকে সুসংগঠিত তবে নিছক কর্মীনির্ভর জামায়াত। বৈতরণী পার হতে গেলে সব কৌশলে সফল হলে তবে ক্ষমতা। তা-ও এককভাবে চিন্তা করার সুযোগ থাকছে না বাস্তবতার নিরিখে। কিন্তু অতীত রাজনীতি এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে দুই দলকেই।

বিশ্বের তাবৎ গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধানত দুটি ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। যার ফলে একটি নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। 

এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট। এ পদ্ধতিতে বর্তমানে বাংলাদেশে নির্বাচন হয়। অন্য পদ্ধতি হচ্ছে, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা বা ‘প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন’ (পিআর) সিস্টেম। 

এ পদ্ধতিতে একটি দল যে পরিমাণ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে সংসদে দলটির প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ হবে। ব্যক্তি নয়, দলের সার্বিক ভোটপ্রাপ্তিতে নির্ধারণ হবে সংসদে আসন। যেটা আমাদের দেশে নির্বাচন পরবর্তী সংসদে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা দল তাদের নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী সেরকম প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকে।

কথা থেকে যায় আরও, আরও যারা ছোট দল তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। সেক্ষেত্রে সংসদ যদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করা হয় তবে হয়তো ছোট দলগুলোর আরেকটু সুযোগ বাড়তে পারে। অন্যথায় অনেক ছোট দলেও মেধাবী, প্রজ্ঞাবান, বিচক্ষণ, দেশপ্রেমিক নেতার চিন্তাপ্রসূত দিকনির্দেশনা থেকেও রাষ্ট্র বঞ্চিত হতে পারে।

এ বিষয়ে ছয় সংস্কার কমিশনের অন্যতম, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদারও পিআর পদ্ধতির পক্ষে। তার সংগঠন ‘সুজন’ গত ২৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে, এর অন্যতম হলো- জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি অনুসরণ করা। 

এর আগের দিন ২৮ আগস্ট ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশও (টিআইবি) রাষ্ট্র কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে উত্থাপিত ৯টি কৌশলগত বিষয়ে সুপারিশ করে। সেখানেও অন্যতম ছিল পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। 

টিআইবি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, জাতীয় সংসদে জনরায়ের বাস্তব প্রতিফলন নিশ্চিত করতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা জরুরি। তবে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার তার আগে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ছাড়াও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। 

এতে করে তিনি কমিশনে থেকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করেন না কি একপেশে মনোভাব নিয়ে কাজ করেন সেটাও দেখার বিষয়। যিনি সব সময় নির্বাচনে সবার সমান সুযোগের দাবিতে জনমত তৈরিতে কাজ করে সরকারকে চাপে রাখতেন। অথচ তার মুখ থেকে ভিন্ন সুর জনগণেরও প্রত্যাশার বাইরে। গ্রহণযোগ্য তো নয়ই।

সম্প্রতি সংস্কার কমিশন সে আলোকে তাদের প্রস্তাবিত রূপরেখা দিয়ে ৫০৫ আসনের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। যাতে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষসহ দ্বিস্তরবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা বলা হয়েছে। যা আমাদের মতো আর্থিকভাবে স্বনির্ভর নয়, এমন দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছি। 

যেখানে নির্বাচনের নামে অহেতুক ব্যয়ের বোঝা ধনী-গরিব সবার দায় হিসেবে বর্তায়। তবে সবকিছু রাজনীতিবিদদের মতামতের প্রেক্ষিতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গ্রহণ কিংবা বর্জন হতে পারে।

শেষমেশ কোনোকিছুই চাপিয়ে দেওয়ার ফল ভালো হয় না। কোনো পদ্ধতিই স্থায়ী নয়। কিন্তু আলোচিত বিষয়টিকে ইতিবাচকই মনে হচ্ছে আমার কাছে। আলোচনা করে রাজনীতিবিদরা নিজেরাই সমাধানে এগিয়ে এলে কাউকে না কাউকে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি প্রবর্তনে ভূমিকা রাখলে দেশের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা নির্বিঘ্ন বাংলাদেশ রেখে যেতে পারব আমরা। 

তাতে করে দেশের রাজনীতি নিয়ে না যত মাথা ঘামাবে দেশের উন্নয়ন নিয়ে তত সময় ব্যয় করে রাষ্ট্রকে জনগণের জন্য স্থিতিশীল করে রাখা সময়ের প্রধানতম দাবি। আমরা সে অপেক্ষায় রইলাম। আর না হলে জনগণকে এর খেসারত দিয়ে যেতে হবে বহুকাল। আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে অসাড় করে যেতে চাই না।


লেখক : অ্যাডভোকেট, কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!