ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

সড়কে মৃত্যু কমানোর দায় সরকারের একার নয়

মীর আব্দুল আলীম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম

সড়কে মৃত্যু কমানোর দায় সরকারের একার নয়

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আমাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায় সড়ক। সেটাই এখন মৃত্যুফাঁদ। সড়ক দুর্ঘটনা একটি নিত্যদিনের বাস্তবতা, যা আমাদের সমাজের জন্য এক গভীর সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। বাংলাদেশে এ চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক। 

প্রতিদিন খবরের পাতায় সড়ক দুর্ঘটনার মর্মান্তিক পরিসংখ্যান আমাদের সামনে আসে। কিন্তু আমরা কি এ মৃত্যুগুলোকে কেবল সংখ্যা হিসাবে দেখব, না কি এর পেছনের কারণ খুঁজে সমাধানের পথে এগোব? সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু আজ আমাদের দেশে একটি স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় লাশের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কে এই মৃত্যুর দায়ভার গ্রহণকারী? রাষ্ট্র, চালক, না কি সবাই? 

বিগত ২০২৪ সালে ৬ হাজার ৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত হয়েছেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭ হাজার ৯০২। দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মৃত্যু বেড়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, আর আহতের সংখ্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। 

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এখন জাতীয় সংকটের পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাস্তাঘাটের অপরিকল্পিত নকশা, অদক্ষ চালক, ট্রাফিক আইন অমান্য, যানবাহনের নাজুক অবস্থা- সব মিলিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এটি শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং অগণিত পরিবারের কান্নার গল্প। 

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রাষ্ট্রের দায়িত্ব কি নেই? সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবে। নিরাপদ সড়কও তারই অংশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো- আমাদের সড়ক কি আদৌ নিরাপদ? 

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং ট্রাফিক বিভাগ একযোগে কাজ করছে বলে দাবি করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ট্রাফিক আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা, পর্যাপ্ত জনবল ও প্রযুক্তির অভাব এবং অনিয়মই সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এর প্রতিকার কোথায়? আগে প্রয়োজন টেকসই অবকাঠামো। রাস্তাঘাটের মানোন্নয়ন এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যানজট ও দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। আইন প্রয়োগ তথা ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। 

লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা সবকিছুতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। চালক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং প্রচারণা চালানো দরকার। সড়কে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সিসি ক্যামেরা, ট্রাফিক সিগন্যালের আধুনিকায়ন এবং মনিটরিং সিস্টেম চালু করা আবশ্যক।

সড়কে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কমানো শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। আমরা যদি আইন মেনে চলি, সচেতন থাকি এবং নিজেদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলি, তবে সড়ক দুর্ঘটনার এ ভয়াবহতা কমানো সম্ভব। সড়ককে মৃত্যুফাঁদ থেকে নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলতে রাষ্ট্রের উদ্যোগ এবং নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। 

রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু সড়ক তৈরি করা নয়, সেগুলো নিরাপদ রাখা এবং মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দেশে এই দায়িত্বে অবহেলার চিত্রই বেশি। যেসব আইন আছে, সেগুলো প্রয়োগের অভাব এবং পরিবহন খাতের অনিয়ম রাষ্ট্রের দুর্বলতার পরিচায়ক। 

সরকার বিভিন্ন সময়ে ‘নিরাপদ সড়ক’ প্রকল্পের ঘোষণা দিলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অভাব স্পষ্ট। উন্নত দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমানোর জন্য নিয়মিত গবেষণা, পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশেও একই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 

আমরা যা করতে পারি। ১. আইন মানার প্রবণতা গড়ে তুলতে হবে। 

২. চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণ এবং যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। 

৩. নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে স্কুল-কলেজ এবং গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। 

৪. সড়ক নিরাপত্তায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। 

গতি এবং দুর্ঘটনার সম্পর্ক ব্যাপক। লন্ডনসহ উন্নত বিশ্বের অনেক শহরে গতি কমিয়ে সড়কে মৃত্যু প্রায় শূন্যের কোটায় নিয়ে এসেছে। একটু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করতে চাই, গত ডিসেম্বরে যখন চিকিৎসক ছেলেমেয়ের কাছে লন্ডনে বেড়াতে যাই, তখন দেখেছি ফাঁকা সড়কেও ছেলে তার গাড়ির গতি ২০ কিলোমিটারের বেশি তোলেনি। এটাই সেখানকার সড়ক-আইন। 

তারা জানালো কেবল গতি কমানোর কারণে গত ৫ বছরে নাকি লন্ডন শহরে কোনো সড়কে মৃত্যু নেই। তারা সেন্ট্রাল লন্ডনের কুইন অ্যালিজাবেদ হাসপাতালের চিকিৎসক। তাদের হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহত মানুষ এলেও নিহতের সংখ্যা নেই। 

লন্ডনের বাইরের সড়কগুলোয় গতিসীমার বাইরে গাড়ি চালানোর কোনো সুয়োগ নেই। কোনো কোনো সড়কে এমনকি মহাসড়কেও ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার স্পিড সীমা থাকে।  সেসব সড়কে চলতে গিয়ে আমিই হোঁচট খেয়েছি। 

ফাঁকা রাস্তা কিন্তু গাড়ির গতি নেই। আমরা বাঙালিরা তো তাতে অভ্যস্ত নই। গতি এবং দুর্ঘটনার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। উচ্চগতিতে চালানো যানবাহন সহজেই চালকের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। সেকেন্ডের ভেতরেই ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যখন গতি বেশি হয়, তখন চালকের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় কমে যায়। এক জরিপে দেখা গেছে, ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে চলা একটি গাড়ি কোনো বাধা দেখলে থামতে ৭০ থেকে ৯০ মিটার জায়গা প্রয়োজন হয়। কিন্তু ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় চলা গাড়ি সেই বাধা থেকে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিটার দূরে থামতে পারে। কাজেই গতি দুর্ঘটনা রোধ করতে সক্ষম।

উন্নত দেশগুলো সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
১. সুইডেনের ভিশন জিরো: সুইডেনের ‘ভিশন জিরো’ উদ্যোগ সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর একটি অনন্য উদাহরণ। এতে গতিসীমা নির্ধারণ, রোড ডিভাইডার এবং পথচারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

২. যুক্তরাজ্যের স্পিড ক্যামেরা: যুক্তরাজ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থানে স্পিড ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো চালকদের গতিসীমা লঙ্ঘন ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।

৩. জাপানের ট্রাফিক আইন: জাপানে ট্রাফিক আইন অত্যন্ত কঠোর এবং প্রয়োগও নিখুঁত। অতিরিক্ত গতির জন্য চালকদের বড় ধরনের জরিমানা করা হয়।

বাংলাদেশে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার, পরিবহন মালিক, চালক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে। 

প্রথমত. সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। 

দ্বিতীয়ত. চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা উচিত।

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার অত্যন্ত উচ্চ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং অন্যান্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনার বেশির ভাগই ঘটে অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিং এবং বেপরোয়া চালানোর কারণে। 

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বা শহরের ভেতরের প্রধান সড়কগুলোয় একই চিত্র। অতিরিক্ত গতির কারণে চালকেরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়।

যানবাহনের গতি কমানো সড়কে নিরাপত্তা বৃদ্ধির একটি পরীক্ষিত কৌশল। উচ্চগতির তুলনায় ধীরগতিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
১. গবেষণায় দেখা গেছে, গতি ১% কমালে দুর্ঘটনার হার প্রায় ৪% কমানো সম্ভব।

২. ধীরগতির কারণে সংঘর্ষের তীব্রতা কম হয়, ফলে গুরুতর আহত বা মৃত্যুর সম্ভাবনাও কমে যায়।

৩. ধীরগতি চালক এবং পথচারী উভয়ের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। চালককে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য বেশি সময় দেয় এবং পথচারীরা রাস্তা পারাপারে সুবিধা পায়।

যানবাহনের গতি কমানোর জন্য কয়েকটি কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রতিটি সড়কের জন্য একটি নির্দিষ্ট গতিসীমা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহরের প্রধান সড়কে ৩০-৪০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং মহাসড়কে ৭০-৮০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিসীমা কার্যকর করা যেতে পারে। 

গাড়িতে স্পিড লিমিটার বা ক্রুজ কন্ট্রোলের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ। গতি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো এবং স্পিড রাডার বা ক্যামেরার মাধ্যমে গতি পর্যবেক্ষণ করা উচিত। 

রাস্তায় স্পিড ব্রেকার এবং চেকপোস্ট স্থাপন করা যেতে পারে। বিশেষ করে স্কুল, হাসপাতাল, বাজার এলাকার কাছাকাছি স্পিড ব্রেকার স্থাপন খুবই দরকার। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো যেতে পারে। 

স্কুলপর্যায়ে ট্রাফিক সচেতনতা অন্তর্ভুক্ত করা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সড়ক-নিরাপত্তা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠবে। গতি নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। গণমাধ্যম, সামাজিক প্রচারণা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।

গতি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দুর্বল আইন প্রয়োগ, ট্রাফিক পুলিশের সীমিত ক্ষমতা এবং মানুষের অসচেতনতাÑ এসব সমস্যা মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। 

উন্নত বিশ্বের অভিজ্ঞতাকে অনুসরণ করে সঠিক পরিকল্পনা ও কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকার, ট্রাফিক বিভাগ, পরিবহন সংস্থা এবং সাধারণ মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

যথাযথ উদ্যোগ নিলে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া মানুষদের সংখ্যা কমিয়ে একটি নিরাপদ সড়কব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এটি কেবল সড়কে মৃত্যুহার কমাবে না বরং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে।

এসব পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, দেশের সড়ক পরিবহনব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি বিদ্যমান। সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায়, যা দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত। চালকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ার অভাব সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। 

অনেক চালক বয়স, দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা ছাড়াই যানবাহন চালান, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। অবৈধ যানবাহন এবং সড়ক ব্যবস্থাপনা। অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য এবং সড়কগুলোর বেহাল দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। 

পণ্যবাহী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ এবং যাত্রীবাহী বাসের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণহীন সড়ক পরিবহনে আরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। অনেক যানবাহন মানহীন এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চলাচলের অনুপযুক্ত হলেও সেগুলো সড়কে চলাচল করছে। 

সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব এবং আইন প্রয়োগে শিথিলতা সড়ক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। অনেক চালক মানসিক চাপ বা মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালান, যা সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ।

পরিস্থিতি উত্তরণে করণীয় কী? সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হলো- চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে। লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি বন্ধ করে কঠোর নিয়ম মেনে লাইসেন্স প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। 

সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। সড়ক পরিকল্পনায় জননিরাপত্তা এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যানবাহনের মান পরীক্ষার জন্য একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সংস্থা গঠন করা যেতে পারে। 

নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে অযোগ্য যানবাহন সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে হবে। ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাদকাসক্ত চালকদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। 

সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি করতে গণমাধ্যম এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন সিসিটিভি, ট্রাফিক সেন্সর এবং স্বয়ংক্রিয় জরিমানা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। 

সড়ক দুর্ঘটনা এখন আমাদের জাতীয় সংকট। কিন্তু এ সংকট সমাধান করা অসম্ভব নয়। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

 এটি শুধু রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়, বরং আমাদের সবার দায়িত্ব। আমরা যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তবে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একটি প্রাণবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি। 

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু সংখ্যার হিসাবে সীমাবদ্ধ নয়; এটি অসংখ্য পরিবারে শোক, হতাশা এবং আর্থিক বিপর্যয় বয়ে আনে। উন্নত সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। 

প্রশাসন, চালক, যাত্রী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দায়িত্বশীল আচরণই পারে এ সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ শিগগিরই সড়ক নিরাপত্তায় একটি উদাহরণ সৃষ্টি করবে।


লেখক : সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব: কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।  
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!