মর্যাদার বইমেলা-২০২৫

আবুল হাসনাত মোহা. শামীম

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৬:৩৩ পিএম

মর্যাদার বইমেলা-২০২৫

বাংলাদেশে বইমেলা সর্বজনীন। আর প্রাণের এই বইমেলার উদ্দেশ্য হলো, বইয়ের সঙ্গে বইপ্রেমীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। পাঠককে বইয়ের কাছাকাছি নিয়ে আসার এক সার্থক উপায়। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’- শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে মাসব্যাপী চলছে এবারের অমর একুশে বইমেলা। 

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর জন্য এই তারিখে প্রভাতফেরি করে শহিদ মিনারে ফুল দেওয়া হয়। বাংলাদেশের গণমানুষের মননে এই ফেব্রুয়ারি মাসটি একটি গভীর আবেগ জড়িত। মাসজুড়ে বইমেলা আয়োজনে তাই বেছে নেওয়া হয় এই মাসকেই।

ঘরে বসে পৃথিবী দেখার একমাত্র মাধ্যম হলো বই। কজনের সৌভাগ্য হয়, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী কিংবা আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি দেখার? কজনের সৌভাগ্য হয় মিশরের পিরামিড বা ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার বা চীনের মহাপ্রাচীর দেখার? কজন দেখেছেন আগ্রার তাজমহল অথবা হিমালয় পর্বত? বিচিত্র এ পৃথিবীতে বহু ভাষী মানুষের বসবাস, যারা ধর্ম-বর্ণ আকৃতিতেও ভিন্ন। 

কত সভ্যতা! কত সংস্কৃতি! কত কীর্তি! কত ধ্বংস! কত ইতিহাস! কত কিংবদন্তি! কোনো মানুষের পক্ষেই সশরীরে এত কিছু দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু বই পড়ে ঘরে বসেই পৃথিবীর বহু কিছু দেখা সম্ভব, অনুভব করা সম্ভব। বইয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে বসে আমরা মহান সক্রেটিস থেকে শুরু করে প্লেটো, শেক্সপিয়ার, বার্নার্ড শ, বেন্থাম, মার্কস, আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং, বা নোয়াম চমস্কির দেখা পেতে পারি।

মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মান ও মর্যাদা এনে দিয়েছে। এই ভাষা এখন সারা বিশ্বের ভাষা। আর ভাষা কখনোই নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাই ফেব্রুয়ারির বইমেলার ভাবকে ছড়িয়ে দিতে হবে আন্তর্জাতিক পরিসরে। এদিকে ২১  ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। 

সামগ্রিক বিবেচনায় একুশের গ্রন্থমেলায় বাংলা বইয়ের হাজার স্টলের মধ্যে একটি হলেও বিদেশি বইয়ের কর্নার রাখা উচিত, যেখানে বিদেশি লেখকদের বই থাকবে, ভিন্ন সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন লোকের মিলনমেলায় পরিণত হবে। মেলায় বিদেশি বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা নিলে বইমেলার পরিসর আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। 

একুশে বইমেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, জাতীয়তাবাদী চিন্তাচেতনার বিকাশ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা। এসব ঐতিহ্য ও চেতনাকে বিদেশি পাঠকের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রয়োজন বাংলা থেকে ইংরেজি বইয়ের অনুবাদ। 

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ব্যক্তি উদ্যোগে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকমানের সৃজনশীল ও মননশীল বাংলা বই ইংরেজিতে অনূদিত হওয়ার দৃষ্টান্ত প্রায় বিরল। এজন্য লেখক-প্রকাশক ও বাংলা একাডেমির সমন্বিত ও সচেতন প্রয়াস জরুরি। 

উন্নত বিশ্বে শিশুদের জন্য আলাদাভাবে বইমেলার আয়োজন করা হয়। শিশুদের পাঠাভ্যাস বাড়াতে বাংলাদেশেও শুধু শিশুদের জন্যই আলাদাভাবে বিভাগীয় বা থানা পর্যায়ে, এমনকি স্কুল-কলেজ পর্যায়ে বিশেষ বইমেলার আয়োজন করা দরকার।

আমরা চাই শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ সবাই বই পড়ুক। মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো জ্বলে উঠুক। মানুষ প্রকৃত অর্থে মানুষ হয়ে উঠুক। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫ প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক। সফল ও সার্থক হোক- এই প্রত্যাশা।

লেখক : অধ্যাপক, গবেষক ও ট্রেজারার, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!