সেলুলয়েডে সোনালি দিন

ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫, ১০:৩১ এএম

সেলুলয়েডে সোনালি দিন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সেলুলয়েডের ফিতায় বিমূর্ত গল্প আলোক প্রক্ষেপণের মাধ্যমে পর্দায় পড়ে যখন সচল হয়, তখন ফুটে ওঠে জীবন্ত সব জীবনের গন্ধ। সেই সঙ্গে ঘটনাপ্রবাহসহ নানা বিষয় সিনেমার মাধ্যমে মূর্তরূপ ধারণ করে। সিনেমা মূলত জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। ক্যামেরা আবিষ্কারের পর তা দিয়ে ধারণকৃত চিত্র পর্দায় প্রক্ষিপ্ত হয়ে চলচ্চিত্র আবিষ্কার সম্পূর্ণতা পায় ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের দুই ভাই ওগ্যুস্ত ও লুই ল্যুমিয়েরের হাতে। 

তারাই ছিলেন চলচ্চিত্রের ইতিহাসের প্রথম দিকের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দুজন। তারা এক ধরনের উন্নতমানের চিত্রগ্রহণের প্যাটেন্ট করেছিলেন, যা টমাস এডিসনের ‘পিপশো’ কিনেটোস্কোপ থেকে ভিন্ন ছিল এবং একই সঙ্গে একাধিক লোককে দেখার সুযোগ করে দিত।

একটি গল্পের বিষয়, প্রয়োগ, কাহিনির চিত্রগ্রহণ, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ, নান্দনিকতা, রং, শব্দের বুননসহ পরিচালকের একাধিক মুন্সিয়ানায় নির্মিত হয় চলচ্চিত্র।  চলচ্চিত্র বিষয়টি আমাদের এই অঞ্চলে খুব বেশি পুরোনো নয়। পূর্ববঙ্গে চলচ্চিত্রের আবির্ভাব ১৯৩১ সালে নির্বাক ছবি ‘শেষ চুম্বন’-এর মাধ্যমে। আর বাংলা চলচ্চিত্রের অঙ্কুরপর্বে যে নামটি সবার বুকে গেঁথে আছে সে সিনেমাটি হলো ‘মুখ ও মুখোশ’। যা মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালে। 

পাকিস্তান পর্বেও চলচ্চিত্র ছিল মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের প্রধানতম বিনোদন মাধ্যম। দলবেঁধে পাড়া-মহল্লার মানুষের সিনেমা দেখার একটা চল ছিল। ভারতীয় বাংলা সিনেমার বাজার তখন তুঙ্গে। ‘সাগরিকা’, ‘পথে হল দেরি’, ‘হারানো সুর’- এ রকম অনেক সিনেমায় বাজিমাত অবস্থা। হিন্দি, উর্দু ছবির বাজারও মন্দ ছিল না। এসব সিনেমায় মানুষ যেন তাদের জীবনের গল্প খুঁজে পেত। 
১৯৭১ সালে শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে লাল-সবুজের পতাকার হাসি নিয়ে উঁকি দেয় নতুন এক দেশ। বাংলাদেশ। 

দেশ স্বাধীন হলে সিনেমার গল্প থেকে শুরু করে বদলায় সবকিছু। নব্য স্বাধীন দেশে ‘ওরা ১১ জন, ‘আবার তোরা মানুষ হ’ নামের চলচ্চিত্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের নব বার্তা দিতে থাকে। সে সময় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের পাশাপাশি  সামাজিক চলচ্চিত্রও তৈরি হয় অনেক- ‘অবুঝ মন’, ‘ময়না মতি’ ইত্যাদি ছবি বেশ আলোড়ন তৈরি করে। 

বাড়তে থাকে সিনেমা হল ও দর্শক। জেলা শহরগুলোতে সিনেমা হলের ব্যবসাও রমরমা ছিল। এমনকি হল মালিকরা শহরের শুধু টাকাওয়ালা নন, সমঝদার লোক হিসেবেও সুনাম কুড়াতে থাকেন। ঢাকার বলাকা, মধুমিতা, রাজমণি, গুলিস্তান, যশোরের মণিহার ছিল দেশখ্যাত প্রেক্ষাগৃহ।  

মূলত এই সময়টা থেকেই সিনেমার প্রতি এক ইন্দ্রজালিক মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে বাঙালি জাতি।
লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!