বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও পালিত হচ্ছে জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস। ১৯৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মানুষকে সচেতন করে তুলতেই বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি তার প্রতিষ্ঠা দিবসকে ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেয়।
দিবসটি পালনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে- ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা। ২০২৫ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিস: ঝুঁকি জানুন। শনাক্ত করুন। পদক্ষেপ নিন।’ ‘প্রতিরোধের এখনই সময়’।
‘ডায়াবেটিস স্বাস্থ্যসেবা সকলের জন্য’। ইংরেজিতে বলা হয়েছে ‘ডায়াবেটিস কেয়ার ফর এভরিওয়ান’। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ডায়াবেটিসের স্বাস্থ্যসেবা এখন পর্যন্ত এক বিরাট অংশের ডায়াবেটিস রোগীকে নিশ্চিত করা যায়নি। বিশেষত, সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় মানুষগুলোর জন্য।
সুতরাং এই বঞ্চিত অসহায় মানুষগুলোর জীবনেও ডায়াবেটিস সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ডা. মো. ইব্রাহিমের এই মূল বাণীকেই ৫০ বছর পরে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে বেঁছে নেয়। যা ছিল ডা. মো. ইব্রাহিমের সৃষ্টি। আজ তারই সৃষ্টি এই বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বাংলাদেশে অগণিত ডায়াবেটিস রোগীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছে।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা ব্যক্তি এবং তাদের পরিবার, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। নিয়ন্ত্রণে থাকলে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা যায় কিন্তু, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের জটিলতা অনেক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হার বেশি। উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ডায়াবেটিসকে মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। সুতরাং প্রতিদিন যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি, বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীদের নানা ধরনের জটিলতা।
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও শরীরচর্চা না করা, মুটিয়ে যাওয়া ও স্থূলতায় ভুগছে এমন শিশুরা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের ঝুঁকিতে আছে। বড় উদ্বেগের বিষয় আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ কোটি মানুষ তামাক, ধূমপান সেবন করে। সুতরাং বিরাট অংশের জনগোষ্ঠী ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছে।
ধূমপান, তামাক সেবনের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ধূমপান টাইপ-২ ডায়াবেটিসের একটি কারণ, প্রকৃতপক্ষে, যারা সিগারেট পান করেন তাদের ধূমপান না করা লোকদের তুলনায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যারা ধূমপান করেন, তাদের ইনসুলিন ডোজ বা মাত্রা কার্যকর করতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একজন ধূমপায়ী যত বেশি সিগারেট পান করবেন, তার টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তত বেশি। যে ধরনের ডায়াবেটিস থাকুক না কেন, ধূমপান বা তামাক গ্রহণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা আরও শক্ত করে তোলে।
যদি কারো ডায়াবেটিস হয় এবং তিনি যদি ধূমপান করেন তবে ডায়াবেটিস থেকে তার বিভিন্ন জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেমন, হৃদরোগ, কিডনি রোগ এবং পায়ে দুর্বল রক্ত প্রবাহ বা সংক্রমণ, আলসার এবং সম্ভাব্য পা কেটে ফেলার কারণ হতে পারে (পায়ের আঙুল বা পায়ের অংশ অস্ত্রোপ্রচারের মাধ্যমে শরীরের কোনো অংশ কেটে ফেলা) তা ছাড়াও রেটিনোপ্যাথি চোখের রোগ যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি হাতে ও পায়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু যা অসাড়তা, ব্যথা, দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
ধূমপান ছেড়ে দিলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলোর মধ্যে একটি, যা সব ধরনের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশেরও বেশি।
ধূমপান ত্যাগ করা কেবল টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিই হ্রাস করে না, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও অনেক সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস করে।
গবেষণা প্রমাণ করে যে, ধূমপান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। ধূমপান ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, কিডনি জটিলতা এবং অন্ধত্বের ঝুঁকিও বাড়ায়। ধূমপান ক্ষত নিরাময়ে বাধা সৃষ্টি করে এবং নিম্ন অঙ্গ পঙ্গুত্বের ঝুঁকি বাড়ায়, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর একটি উল্লেযোগ্য বোঝা তৈরি করে।
ধূমপান ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং এবং ধূমপান সেটাকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। যেহেতু নিকোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি যারা ধূমপান করেন তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ধূমপান ত্যাগ জরুরি
আপনি কতবার ধূমপান করেছেন বা কখন ছেড়ে দিলে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। আপনি যখন ধূমপান বন্ধ করবেন সেই সময় থেকে আপনার শরীর নিজেই নিরাময় শুরু করবে। যেমন- ১২ ঘণ্টার মধ্যে, আপনার রক্তে কার্বন মনোক্সাইড (সিগারেটের ধোঁয়া থেকে একটি বিষাক্ত গ্যাস) স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
২ সপ্তাহ থেকে ৩ মাসের মধ্যে, আপনার রক্ত সঞ্চালন এবং ফুসফুস আগের চাইতে উন্নত হবে। এক বছরের মধ্যে, আপনার রক্ত সঞ্চালন অনেক বেশি স্বাভাবিক হবে। এক বছরের মধ্যে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি যারা এখনো ধূমপান করেন এমন ব্যক্তির চেয়ে অর্ধেক নেমে আসবে।
ধূমপান ত্যাগ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা আরও সহজ করতে সহায়তা করে। শরীর ধূমপানমুক্ত হওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য না হওয়া পর্যন্ত রক্তে শর্করার পরিমাণ ঘন ঘন পরীক্ষা করতে হবে।
ধূমপান ছাড়তে সাহায্য প্রয়োজন
নিকোটিন পণ্য যেমন নিকোটিন প্যাচ এবং লজেন্স ধূমপন বন্ধ করতে সহায়তা করতে পারে। এগুলো সরঞ্জাম ব্যবহারে ছাড়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে নিকোটিনযুক্ত পণ্যগুলো রক্তে শর্করাকে বাড়িয়ে তোলে, তাই যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে সেগুলো ব্যবহার সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন।
প্রথম চেষ্টায় ছাড়তে সক্ষম না হলেও হাল ছাড়া ঠিক হবে না। পিছলে গেলেও মন খারাপ করার দরকার নেই, ভালোর জন্য ধূমপান মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এটি বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা নিতে হতে পারে (যদিও কিছু লোক তাদের প্রথমবারই ছেড়ে দেয়)।
যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং আপনি ধূমপান করেন তবে ধূমপান ত্যাগ করা এখনই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকার আনবে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি যারা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ছেড়ে দেন তারা রক্তে শর্করার মাত্রা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন।
নিকোটিন রক্তে শর্করা প্রভাবিত করে
নিকোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা উপরে বা নিচে ওঠাতে/নামাতে পারে। নিকোটিন জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ দেহের গ্লুকোজ ব্যবহার করার কার্যকারিতাকে পরিবর্তন করে, রক্তে চিনি যা কোষগুলোকে শক্তি দেয়।
এটি অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে, এটি ডায়াবেটিসকে আরও খারাপ করতে পারে। অন্যদিকে নিকোটিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ইনসুলিন গ্রহণকারী ব্যক্তিদের জন্য মারাত্মক লো ব্লাড গ্লুকোজ (হাইপোগ্লাইসোমিয়া) সৃষ্টি করতে পারে।
নিকোটিন কোষগুলোতে রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলো পরিবর্তন করে। যাতে তারা ইনসুলিনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। কোষগুলোর প্রয়োজন যাতে তারা রক্ত থেকে গ্লুকোজ নিতে পারে এবং এটি শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। যখন তারা পারে না, তখন গ্লুকোজ রক্তে থাকে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
নিকোটিন শরীরকে আরও ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি করতে ট্রিগার করতে পারে, যা হচ্ছে ইনসুলিন প্রতিরোধের সঙ্গে যুক্ত এক ধরনের ফ্যাট। অন্যদিকে নিকোটিন হরমোনের মাত্রা বাড়ায়। যা ইনসুলিনের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ধূমপান কোষের ইনসুলিন ব্যবহারের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে বেশি সময় নেয় না। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের ডায়াবেটিস এবং যারা ধূমপায়ী তাদর রক্তের গ্লুকোজের নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিনের বেশি ডোজ প্রয়োজন হয়।
ধূমপায়ীদের যখন রক্তের গ্লুকোজ কয়েক বছরের জন্য নিয়মিত খুব বেশি থাকে, তখন এটি হৃদরোগ এবং কিডনি, স্নায়ু এবং চোখের ক্ষতি সাধন করতে পারে। ধূমপায়ী যত বেশি সিগারেট পান করবেন তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। যারা ধূমপান করেন তাদের সম্ভাবনা ৩০-৪০ শতাংশ বেশি।
দিনে ২০টির বেশি সিগারেট খেলে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। নিকোটিন শরীরে প্রবেশ করার পর থেকে রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেমন- পরোক্ষ ধূমপানের ধোঁয়া যিনি ধূমপান করছেন না তাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে (অন্য ব্যক্তির সিগারেট থেকে ধোঁয়ার মাধ্যমে শ্বাস ফেলা) তামাক চিবানো (জর্দা, গুল, দোক্তা, সাদাপাতা)।
ই-সিগারেট, ভ্যাপিং ব্যবহারকারীও ঝুঁকিতে
ধূমপায়ীদের যদি ইতোমধ্যে ডায়াবেটিস না থাকে তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। প্রথম ২ বছর এটি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এটি অনেক ক্ষেত্রে ওজন বাড়ার কারণেও হতে পারে তাই ওজন কমাতে উপায় সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন।
ধূমপানের কারণে আপনার ডায়াবেটিস থাকুক বা না থাকুক রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদি কারো ডায়াবেটিস হয় তবে ধূমপানের কারণে ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে হৃদরোগের ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রযোজ্য।
অনেকে সিগারেটের কম ক্ষতিকারক বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেট ব্যবহার করেন তবে এই পণ্যগুলো রক্তে শর্করাকেও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। সিগারেটের মধ্যে থাকা রাসায়নিক নিকোটিন রক্তে শর্করাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সিগারেটের রাসায়নিক পদার্থগুলো কোষগুলোকে আঘাত করে, পরবর্তী সময়ে এটি প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। তখনই শরীর নিজেকে সুস্থ করার চেষ্টা করে। এই ধরনের ক্ষতি দেহের পক্ষে সঠিক উপায়ে ইনসুলিন ব্যবহার করাকে জটিল করে তোলে।
ঘন ঘন সিগারেট গ্রহণকারী ধূমপায়ীদের আরও ওজন বাড়তে পারে। এমনকি যদি ওজন বেশি না হয় তবুও পেটের ফ্যাট ইনসুলিন প্রতিরোধের এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ধূমপানের কারণে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন- ‘খারাপ এলডিএল’ কোলেস্টেরল বাড়তে পারে। একইভাবে ‘ভালো এইচডিএল’ কোলেস্টেরল হ্রাস পেতে পারে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ট্রাইগ্লিসারাইডও বাড়ায়। এগুলো রক্তের মধ্যে এক ধরনের চর্বি।
সুতরাং, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য যেমন- জর্দা, গুল, সাদাপাতা অথবা বর্তমান সময়ে নতুন আমদানি ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট সবই ডায়াবেটিস রোগের যেমন কারণ হতে পারে, তেমনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সেই সঙ্গে অন্যান্য জটিল রোগ যেমন- হৃদরোগ, অন্ধত্ব ও নার্ভের সমস্যাসহ পায়ের পচনশীল রোগ গ্যাংগ্রিন হতে পারে।
অতএব, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে যেমন নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও জীবন যাপন পরিবর্তন করতে হবে তেমনি ধূমপান ও তামাক জাতীয় সব বস্তু জর্দা, গুল, সাদাপাতা জীবন থেকে বর্জন করতে হবে। এভাবেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
ডায়াবেটিস যেভাবে প্রতিরোধ করা যায়
তামাক জাতীয় দ্রব্য বিশেষত ধূমপান, জর্দা, গুল, সাদাপাতা ডায়াবেটিসের বড় কারণ হতে পারে। ধূমপান আপনার টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়, ওজন বেশি হলে ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অনেক জরুরি।
ধূমপান ছেড়ে দিতে নিজের ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট, তবে অনেক ক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন হতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করলে নিজেকে যেমন- মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যাবে, তেমনি পরিবার ও পারিপার্শ্বিক জনসাধারণের জীবন ঝুঁকিমুক্ত থাকবে।
সর্বোপরি, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিমের অমর বাণী- ‘প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগী যদি তিনটি ডি-ডায়েট, ড্রাগ, ডিসিপ্লিন অর্থাৎ- পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ এবং রক্ত পরীক্ষা ও নিয়মিত ব্যায়াম এই তিনটি নীতিকে নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিদিন মেনে চলেন তাহলে, তারা অবশ্যই স্বাভাবিকের কাছাকাছি, সামাজিকভাবে উপযোগী, সৃজনশীল কাজে সক্ষম ও সম্মানজনক জীবননির্বাহ করতে পারবেন।’ প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধই শ্রেয়, সস্তা ও নিরাপদ।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা (একুশে পদকপ্রাপ্ত এবং শব্দসৈনিক), অধ্যাপক-চিকিৎসক