ভারতে গণমাধ্যমের মুমূর্ষু অবস্থা

সরকার জারিফ

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ০৯:৫২ এএম

ভারতে গণমাধ্যমের মুমূর্ষু অবস্থা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলো ক্রমেই সুস্পষ্ট হচ্ছে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ভারত ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স’-এ ১৪০তম অবস্থান থেকে নিচে নামতে শুরু করে। 

বর্তমানে দেশটির অবস্থান ১৫৯তম। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবনমনে এর আগে এত নিচে নামেনি ভারত।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে বসে আছেন হাত-পায়ে শিকল পরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 

এমন একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করায় তামিল ভাষার গণমাধ্যম ‘ভিকাতান’-এর ওয়েবসাইট বন্ধের অভিযোগ উঠেছে। 

বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এ ব্যঙ্গচিত্রটি নিয়ে আপত্তি জানানোর পর থেকে ওয়েবসাইটটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

ভিকাতান নামের এই ওয়েবসাইটটি অভিযোগ করেছে কেন্দ্র থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল ম্যাগাজিনে কার্টুনটি ছাপার পরপরই বিজেপির তামিলনাড়ু শাখা আপত্তি জানায়।

যা ছিল কার্টুনে 
আলোচ্য কার্টুনটিতে দেখানো হয়,  প্রধানমন্ত্রী মোদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে বসে ছিলেন। তবে মোদিকে শিকল পরা অবস্থায় দেখানো হয়েছে কার্টুনে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি এ কার্টুন প্রকাশের পর থেকেই বিজেপি বিষয়টি নিয়ে অনভিপ্রেত উত্তেজনা দেখায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) অনেক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, তারা ভিকাতানের ওয়েবসাইট খুলতে পারছেন না।

 আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ভিকাতান জানায়, তাদের অনেক পাঠক ভিকাতানের ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা বিবৃতি দিয়ে তাদের জানানো হয়নি যে, ওয়েবসাইটটি সত্যিই সরকারিভাবে বন্ধ করা হয়েছে কি না!

ভিকাতান নিজেদের ভাষ্যে আরও বলেছে, প্রায় এক শতকেরও বেশি সময় ভিকাতান মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে আসছে। আমরা সবসময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম এবং আসন্ন সময়েও থাকব। 

আমরা এখনো ওয়েবসাইট বন্ধের বিষয়টি কেন ঘটল তা জানার চেষ্টা করছি। আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের কাছে জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কারণে গণমাধ্যমকে বন্ধ করা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর! 

এটি বিজেপির ফ্যাসিবাদী মানসিকতার আরেকটি উদাহরণ। আমি অবিলম্বে বিকটনের ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানাই।

প্রধানমন্ত্রী মোদির কার্টুন ছাপানোর পর ওয়েবসাইট বন্ধের ঘটনাটি ইতোমধ্যেই বেশ আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। 

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কারণে গণমাধ্যমকে বন্ধ করা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর! এটি বিজেপির ফ্যাসিবাদী মানসিকতার আরেকটি উদাহরণ। আমি অবিলম্বে বিকটনের ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানাই।

গণমাধ্যমের প্রতি রক্তচক্ষু
এর আগে ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ‘বিতর্কিত’ তথ্যচিত্র নির্মাণের পর দিল্লিতে বিবিসির কার্যালয়ে পুলিশ ও কর কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। 

এ সময় তারা বিবিসির সংবাদকর্মীদের কম্পিউটার থেকে সরে যেতে বলেন এবং ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন তাদের হাতে তুলে দিতে বলেন। উল্লেখ্য, গুজরাট দাঙ্গায় মোদির ভূমিকা নিয়ে ওই তথ্যচিত্রে সংবাদ প্রকাশ হয়।

করোনার সময়ে ভারতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সংকুচিত হয়েছে বলে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। দ্য ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হিমাচলে অভিবাসন ও খাবার সংকট নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করায় ১০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

২০২০ সালের মে মাসের ১১ তারিখে গুজরাটি নিউজ পোর্টাল ফেস অব নেশনের সম্পাদককে আটক করা হয়। গুজরাটে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উচ্চহার কীভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তন আনছে তা নিয়ে রিপোর্ট করায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। 

সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ডিফেন্ডার্স নেটওয়ার্ক (এসএএমডিইএন) এক রিপোর্টে জানায়, উত্তর প্রদেশের প্রশাসন টুডে-২৪ পত্রিকার সাংবাদিক রবীন্দ্র সাক্সেনার বিরুদ্ধে মামলা করে। করোনায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের অনিয়ম এবং অবহেলা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তার বিরুদ্ধ এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজলন্ড্রির খবর অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে রাহুল জোরি নামের টিভি৯ মারাঠির এক সাংবাদিককে সতর্ক করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ঢুলে এলাকার অভিবাসন রিলিফ ফান্ডের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদনের কারণে পুলিশ এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

এসএএমডিইএনের প্রতিবেদনে রোজানা পেহেরেদার নামের আরেক সাংবাদিকের নাম উঠে আসে যাকে দুই পুলিশ কর্মকর্তা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সাংবাদিককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। অভিযোগ প্রমাণের পর ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়।

এখনো ভারতে সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ একটি পেশা হিসেবেই বিবেচিত। দেশটি সাংবাদিকতার ঝুঁকির দিক থেকে ১৩তম অবস্থানে আছে। ‘প্রটেক্ট জার্নালিস্টস গ্লোবাল ইম্পিউনিটি’ ইনডেক্স অনুযায়ী ভারত এমন একটি দেশ যেখানে সাংবাদিকদের হত্যা করা হয় এবং খুনিরা অবলীলায় ঘুরে বেড়ায়। উল্লিখিত এ ইনডেক্সে গত ১২ বছর ধরে ভারতের নাম রয়েছে বলে জানায় দ্য ডিপ্লোম্যাট।

ভারতের নারী সাংবাদিকদের স্বাধীনতার অবস্থাও করুণ বলে জানানো হয় ডিপ্লোম্যাটের রিপোর্টে। দ্য কোয়ালিশন অব ওমেন নামের একটি সংগঠন ১৪৫টি হুমকির ঘটনার তালিকা প্রকাশ করেছে। নারী সাংবাদিকদের ভয়ভীতি দেখানো বা হুমকি দেওয়াতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

২০২০ সালের এপ্রিলে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে রিপোর্ট করায় তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৪৮ ঘণ্টার ভেতর অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর ভেতর ডয়েচে ভ্যালের একজন সাংবাদিক, দ্য হিন্দুর একজন সিনিয়র রিপোর্টার এবং আরেকজন ফ্রিল্যান্স ফটোজার্নালিস্ট ছিলেন। 

এডিটর গিল্ডস অব ইন্ডিয়া ঘটনাটিকে ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহার হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় মামলা দায়েরের ঘটনাকে সংস্থাটি সাংবাদিকদের ভেতর  ‘ভয় সৃষ্টির চেষ্টা’ বলে মন্তব্য করে সংস্থাটি।

ডয়েচে ভ্যালে এক প্রতিবেদনে জানায়, গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপক হ্রাস ঘটেছে ভারতে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার (আরএসএফ) -এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯ সালে ১০৫তম অবস্থান থেকে নিচে নেমে ২০২৪ সালে ভারত ১৫৯তম অবস্থানে এসেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বর্তমানে ভারত পাকিস্তানেরও নিচে অবস্থান করছে।

আরএসএফের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়কপ্রধান সেলিয়া মার্সিয়ার ভারতে গণমাধ্যমের মুখ চেপে ধরা এবং সমালোচকদের থামিয়ে দেওয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তিকে একনায়কতান্ত্রিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি এ অবদমনকে শিহরণ জাগানোর মতো বলেছেন।
এ প্রতিবেদনে প্রাণ হারানো সাংবাদিকদের কথা উঠে আসে। 

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে চন্দ্রকার নামের এক সাংবাদিক, ২০১৭ সালে গৌরি লঙ্কেশ এবং  ২০২৩ শশীকান্ত ওয়ারিশিলে নামের আরেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। লঙ্কেশ ব্যাঙ্গালুরুতে একটি আইপি হাবের স্থানীয় সাংবাদিক ছিলেন। এ পোর্টালটি ডানপন্থি উগ্রবাদী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে রিপোর্ট করত। 

২০১৭ সালে নিজ বাসার সামনে তাকে হত্যা করা হয়। ওয়ারিশিকে মহারাষ্ট্রের রত্নাগিরি নামের একটি স্থানে হাইওয়েতে গাড়িচাপায় হত্যা করা হয়। ধারণা করা হয় একজন ভূমির দালালকে নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য তাকে হত্যা করা হয়। এ সমস্ত ঘটনার একটিতেও হত্যাকারীদের সাজা হয়নি।

সরকারের কাছে সমালোচনা গ্রহণযোগ্য নয়
মোদির সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে করা সব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মূল্যায়নের পদ্ধতিকে অবিশ্বাসের চোখে দেখেছে। গত বছর ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছিলেন, এসব মূল্যায়ন খুব ছোট নমুনার ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। 

এতে ভারতের বর্ণাঢ্য গণতন্ত্র সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা ছাড়াই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। জুলাই মাসে আইনপ্রণেতাদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি জানান, সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভারতের সংবাদমাধ্যমকে  ‘মজবুত ও সমৃদ্ধিশীল’ বলে প্রশংসা করেন। 

তবে বড় শহরের বাইরে কাজ করা অনেক সাংবাদিক ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অপছন্দের বিষয়বস্তু  নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার সময় তারা  নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

শেষ পেরেক
রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) মুখপাত্র মের্সিয়ার জানান, ভারতের সাংবাদিকরা সরাসরি আক্রমণ, কর তদন্ত, আইনি প্রক্রিয়া এমনকি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে আটক হওয়ার হুমকির সম্মুখীন হন। 

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে (যেমন ইউএপিএড বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন), সাংবাদিকদের কারাবন্দি করার জন্য অপব্যবহার করা হয়।

মের্সিয়ার আরও উল্লেখ করেন যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাইবার হয়রানির প্রচারণা চালানো হয়। এসব পোস্টে তাদের ‘দেশদ্রোহী’ বা ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ বলে অভিহিত করে তাদের কাজকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করা হয়। 

এ সময় উদাহরণ হিসেবে গৌরী লঙ্কেশ হত্যার কথা তুলে ধরেন তিনি। কয়েক বছর আগে গৌরী লঙ্কেশকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হলে প্রধানমন্ত্রীর অনুসরণ করা কিছু টুইটার হ্যান্ডেলে তার হত্যার উদযাপন করা হয়েছিল। এই ঘটনাটি ভারতের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি কতটা নাজুক, তা স্পষ্ট করে তোলে।

এডিটর্স গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার মহাসচিব রুবেন ব্যানার্জি বলেছেন, দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পড়তির সঙ্গে ভারতে বাড়তে থাকা অসহিষ্ণুতার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। 

অভিজ্ঞ এই সম্পাদক জানান, আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং যারা সরকারি মতের বিরোধিতা করে তাদের চুপ করাতে ও শাস্তি দিতে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে।

ছত্তিশগড় রাজ্যে, যেখানে চন্দ্রাকরকে হত্যা করা হয়, সেখানে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য একটি আইন প্রণয়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে উদ্যোগটি থমকে গেছে। জাতীয়পর্যায়ে ভারতের হুইসেল ব্লোয়ার সুরক্ষা আইনের বাস্তবায়নেও বড় ধরনের বিলম্ব দেখা গেছে।

ভারতের আদালত ব্যবস্থায় একটি মামলার রায় পেতে বহু বছর লেগে যায়। যার ফলে অভিযুক্তরা প্রায়শই জামিনে মুক্তি পায়। গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডের আট বছর পরেও অভিযুক্ত ১৮ জনের মধ্যে ১৭ জন জামিনে রয়েছে এবং একজন পলাতক।

তার বন্ধু ও সহকর্মী সাংবাদিক শিভহারে বলেন, লঙ্কেশের মৃত্যু হলো সেই চূড়ান্ত ধাপ, যা শেষ পেরেকটি ঠুকে দিতে আর বাকি নেই। আমরা এখন ভয়ে আছি। আমাদের কোনো সুরক্ষা নেই। এমন পরিস্থিতিতে সংবেদনশীল বিষয়ে রিপোর্টিং চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন।

কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) জানিয়েছে, ১৯৯২ সাল থেকে ভারতে নিহত ৬০ জন সাংবাদিকের বেশিরভাগই ছিলেন ছোট শহরের স্থানীয় প্রতিবেদক। 

সিপিজের এশিয়া প্রধান বেহ লিহ ইয়ি বলেন, দ্রুত বিচার না হলে এ ধরনের আক্রমণগুলো প্রমাণ করে যে, এমন হত্যাকাণ্ডগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, একজন সাংবাদিককে হত্যা করা মানে হলো চূড়ান্ত মাত্রার সেন্সরশিপ প্রয়োগ করা।

গুজব কারখানা
উল্লেখ্য, ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তিনি পালানোর পরপরই বাংলাদেশ নিয়ে গুজব ছড়ানো শুরু করে ভারতের সংবাদমাধ্যম ও দেশটির রাজনীতিবিদরা। সর্বপ্রথম গুজবটি ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের দলবেঁধে ভারতে যাওয়ার চেষ্টার বিষয়টি।

গত ৩১ জানুয়ারি কলকাতাভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার চটকদার শিরোনাম দিয়ে খবর করে, ‘সেনা অভ্যুত্থান ঢাকায়? নজর দিল্লির। তাদের এমন খবর প্রকাশের পর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

ওপার বাংলার উপস্থাপক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ বাংলাদেশে বেশ আলোচিত এক নাম। উদ্ভট উপস্থাপনায় তিনি কখনো চট্টগ্রামকে কেটে ফেলছেন কখনো বা নির্বিচারে সংখ্যালঘুদের নিয়ে বানোয়াট গল্প সাজাচ্ছেন। 

ভারতীয় মূলধারার বেশিভাগ গণমাধ্যমের দশাও ময়ূখের মতোই। সাংবাদিক অর্ক ভাদুরী বা প্রথিতযশা গায়ক কবীর সুমনসহ অনেক ভারতীয়ও এসব বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। উসকানিমূলক এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে।

শুধু আনন্দবাজারই নয় হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো সংবাদমাধ্যমও মেতে ওঠে গুজব প্রকাশের উৎসবে। এসব খবর প্রকাশের পর একাধিকবার প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। 

ভারতের গণমাধ্যমের মিথ্যাচার রোধে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোলা হয় সিএপ্রেস উইং ফ্যাক্টস নামের একটি পেজ। এখানে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন গুজব ও মিথ্যাচার নিয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার্স, দ্য ডিপ্লোম্যাট, ডয়েচে ভ্যালে, দ্য ইন্টারপ্রেটর 
লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক-অনুবাদক

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!