কৃষিজমি হ্রাসে খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে    

রেজাউল করিম খোকন

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম

কৃষিজমি হ্রাসে খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে                           

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশে দ্রুত হারে কমছে ফসলি জমির পরিমাণ। যা অচিরেই অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। গত কয়েক দশকে আগের তুলনায় দ্রুত হারে কমেছে ফসলি জমির পরিমাণ, এটাকে খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় একটি হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা নির্মাণে ব্যবহারের কারণে প্রতিদিনই কমছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। 

বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা যায়, দিনে দুই হাজার বিঘা জমি কৃষি থেকে অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। একইভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন ৯৬ বিঘা জলাভূমি। সেসব জলাভূমিও ভরাট করে ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তামাক ও চিংড়ি চাষের ফলেও প্রতিবছর ২৪ হাজার বিঘা জমি কৃষি কাজের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। 

শহরতলী কিংবা গ্রামে অপরিকল্পিত বাড়ি-ঘর নির্মাণ, নগরায়ণ, শিল্প কারখানা নির্মাণ, ইটভাটা তৈরি, পুকুর-দীঘি খনন, মাছ চাষ ও নদীভাঙনের ফলে ক্রমাগতভাবে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। আবার আর্থিক অসঙ্গতি ও দুরবস্থার কারণে জমি বিক্রি করে বাস্তুহারা হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। প্রতিনিয়ত অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে তৈরি হচ্ছে বাসগৃহ, দালান কোঠা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, দীর্ঘ সেতু ইত্যাদি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫-২০ বছরে কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ায় অনেক কমে গেছে ধান চাষ। বর্তমানে দেশে মোট ভূমির মধ্যে ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ জমিকৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়, আশঙ্কার বিষয় হলো, দেশে কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে। 

শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে তা কিন্তু নয়, সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণেও কমছে কৃষিজমি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও এলএনজি টার্মিনাল, এলএনজি-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, সাগরে ভাসমান জ¦ালানি তেলের ডিপো ও পাইপলাইন স্থাপন বাবদ আরও প্রায় ছয় হাজার একর জমি অধিগ্রহণের সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে। 

কৃষিজমি যে কেউ যে কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারেন। এটা নিয়ন্ত্রণের কোনো আইনি ব্যবস্থা নেই। এ জন্য আইন পরিবর্তন করে উর্বর ও কৃষি উপযোগী জমির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা বার বার বলা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো বিধি-বিধান করা হয়নি এখন পর্যন্ত।

জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০ এবং কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০ অনুযায়ী কৃষিজমি কৃষিকাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোনো কৃষিজমি ভরাট করে বাড়ি-ঘর, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো অকৃষি স্থাপনা কোনোভাবেই নির্মাণ করা যাবে না উল্লেখ করে একটি নামমাত্র আইন থাকলেও এর শাস্তির বিষয়টি স্পষ্ট নয়। 

পরিকল্পনাহীন নগরায়ণের ছোবলে বৈচিত্র্যও হারাচ্ছে কৃষি। ইটভাটার জন্যও প্রতিবছর হাজার হাজার একর আবাদি জমি অনাবাদিতে পরিণত হচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকায় ধানের জমিতে বাঁধ দিয়ে লোনা পানি প্রবেশ করিয়ে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। কোথাও হচ্ছে লবণের উৎপাদন। নানাভাবে কৃষিজমি অনুৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যবহার চলছে। 

এ ধরনের অবস্থা ক্রমাগতভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে দেশে কৃষি জমির ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হবে সহজেই ধারণা করা যায়। জনসংখ্যা অনুপাতে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত কৃষিজমি না থাকলে স্বাভাবিকভাবে দেশে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে। তখন দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য বিদেশ থেকে খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। 

ফলে অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে। কৃষিজমি সুরক্ষার জন্য সরকারিভাবে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের অর্থনীতিতে নানা পালাবদল ঘটেছে গত কয়েক দশকে। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দাপট অনেকটা কমে গেছে। এখন শিল্প ও সেবাভিত্তিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে আমাদের অর্থনীতি নতুন ঠিকানা খুঁজছে। 

কিন্তু দেশের খাদ্যচাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি জমির ব্যবস্থা না করে শিল্প ও সেবাভিত্তিক অর্থনীতি টেকসই হবে না- এটা সবাইকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। বর্তমানে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি এবং আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির অনুসরণের কারণে খাদ্য উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে বটে। বর্তমানে দেশে কোনো খাদ্য সংকট নেই। তবে এ অবস্থা একটানা দীর্ঘদিন বজায় থাকবে না। ক্রমাগত কৃষিজমি ব্যবহারের ফলে এক সময় জমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়, এ কথা মনে রাখতে হবে সবাইকে।

উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ার পর আমাদের কৃষি উৎপাদন তথা খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দেশের কৃষি উৎপাদন কমে গিয়ে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পেলে বাধ্য হয়ে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে হবে। যা আমাদের অর্থনীতিতে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। অতএব, কৃষিজমি সুরক্ষার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এখনই সঠিক পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

করোনার অভিঘাতের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে খাবার ও জ্বালানির দাম বেড়েছে। বাড়তি মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক দেশই হিমশিম খাচ্ছে। এই সংকটের মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম যেন আরও বেশি অস্থির না হয়, সেজন্যই খাদ্য মজুত ঠিক রাখার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার।

এই মুহূর্তে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, সুদান, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, হাইতি, নাইজার, কেনিয়া, মালাউ, বুর্কিনা ফাসো, জিম্বাবুয়ে, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, আফ্রিকান রিপাবলিক, চাদ, মাদাগাস্কার ও মালি। আগামীতে এসব দেশের অনেক মানুষ খাদ্য নিরাপত্তায় ভুগবে। 

এরমধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষই তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকবে। এর প্রভাবে দারিদ্র্য বাড়বে সারাবিশ্বে। খাদ্য দুষ্পাপ্য হওয়ায় অপুষ্টিজনিত রোগব্যাধি যেমন বাড়বে, তেমনি মানুষের মধ্যে পুষ্টিহীনতাও বাড়বে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৯টি দেশেরও নাম রয়েছে ওই তালিকায়। তবে চালসহ মৌলিক খাদ্যের বেশিরভাগই দেশীয় জোগাননির্ভর হওয়ায় সরবরাহ নিয়ে আগামী কিছুদিন বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা কিছুটা কম। 

স্বাভাবিক সময়ে দেশের চাহিদার ৯৫ শতাংশ ধান-চালের জোগান দেশীয় কৃষিক্ষেত্র থেকেই আসে। আর কিছুটা সংকট দেখা দিলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ চাল আমদানি করতে হয়।

১৯৮৮ সালে প্রণীত সরকারের বর্তমান খাদ্যনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, কৃষকদের অধিক খাদ্য ফলনে উৎসাহ প্রদান, ফসল তোলার সময় কৃষকদের কাছ থেকে ভর্তুকি মূল্যে বা উৎসাহব্যঞ্জক মূল্যে শস্য ক্রয়, দেশে উৎপাদিত শস্যের সুষ্ঠু সরবরাহ এবং বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, নিম্ন আয়ের ব্যক্তির কাছে খাদ্যপ্রাপ্তি সহজ করা, শস্যের উৎপাদন খরচ এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সংগতি রেখে খাদ্যমূল্য স্থির রাখা, উৎপাদিত কিংবা অন্য কোনো উৎস থেকে সংগৃহীত খাদ্যের যথাযথ সংরক্ষণ, দুর্যোগকালীন অবস্থা মোকাবিলার জন্য ‘খাদ্য মজুত’ ব্যবস্থা অথবা দুঃসময়ে ব্যবহৃত শস্যভান্ডার গড়ে তোলা, খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিকে শক্তিশালী করে ক্রমান্বয়ে খাদ্যে ভর্তুকি কমিয়ে আনা ইত্যাদি। 

এগুলো অর্জনের জন্য ২০টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে ৩২টি নির্দেশমালা প্রস্তুত করা হয়। খাদ্য নীতিমালা কখনো কখনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্ভরযোগ্য কার্যক্রম গ্রহণ করারও পরামর্শ দেয়। নীতিমালার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে ধীরে ধীরে খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং জনপ্রতি খাদ্য গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে প্রতিদিন তা জনপ্রতি ১৬ আউন্সে উন্নীত করা। 

সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় গত অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশে চাল-আটার বাজার ঊর্ধ্বমুখী। অবশ্য এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাকে অযৌক্তিক বলেই মনে করছে সবাই। সম্প্রতি চাল-আটার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের বাজারেও চালের মূল্য প্রতিনিয়ত বেড়েছে। কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, পৃথিবীজুড়ে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ও যুদ্ধাবস্থায় উৎপাদন কমে যাওয়া এবং সরবরাহ চেইন সঠিকভাবে কাজ না করা। 

এ অবস্থায় সবার মাঝে ভীতি কাজ করছে। চাল উৎপাদনকারী দেশ দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে কোনো কোনো দেশ আবার অতিরিক্ত মজুতের পথে হাঁটছে। ফলে নিত্য ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট আগামীতে আরও বাড়বে। বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ ইউরিয়া সার ইউরোপ থেকে সরবরাহ করা হয়। 

গ্যাসের সংকটে একদিকে সারের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সারের দামসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের দামও বাড়ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। এতে কৃষিপণ্যের দামও বাড়বে। কয়েকটি দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে খাদ্য দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে।

খাদ্যনিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য দরকার মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজির পর্যাপ্ত প্রাপ্তি। আর পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য উল্লিখিত পণ্যগুলো সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ ও সরবরাহের ব্যবস্থা করা বড় প্রয়োজন। বাংলাদেশে সবজি, মাছ ও ধান উৎপাদন যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, তা ঠিকমতো এগিয়ে গেলে সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ হতে পারে বাংলাদেশ। 

পুষ্টি নিরাপত্তায় চালের বাইরে অন্যান্য খাবার গ্রহণ বাড়াতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের খাদ্যগ্রহণের চিত্রে একমাত্র চালের পর্যাপ্ততা আছে। দিনে জনপ্রতি সাড়ে ৩০০ গ্রাম ভাত দরকার। সেই জায়গায় বাংলাদেশের মানুষ গড়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ গ্রাম ভাত খায়। 

বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বের তৃতীয় দেশ। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশে প্রতিদিনই কৃষিজমি কমছে। সেখানে আমাদের প্রধান পণ্য চাল উৎপাদনের ধারাবাহিক যে সফলতা আসছে, তার বড় অবদান আমাদের কৃষকদের। সেই সঙ্গে কৃষি বিজ্ঞানীদের সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া নীতি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

দেশের ভেতরে যেটা করতে হবে, যাতে এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। কারণ, অভিঘাতটা তাদের ওপরই সব থেকে বেশি হয়। মূল্যস্ফীতি হোক, কর্মসংস্থান হারানো হোক তাদের ওপরই অভিঘাত বেশি। সুতরাং তাদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনতে হবে। 

বিশেষত দরকারি পণ্য তাদের পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। একই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন করতে হবে। যেন আমাদের বাজেটের ওপর চাপ কম থাকে। সাধারণ মানুষকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। সরকারের যা যা করণীয় সবই করছে। সবাইকে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়সংকোচন করতে হবে। সাধারণ মানুষকে আয় বুঝে ব্যয় করতে হবে। 

খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে সারা দেশের কৃষিজমিকে ভাগ করে চাষাবাদ তদারকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের মানুষকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে শস্য আবাদের ব্যবস্থা করতে হবে।

সামনে আরও কঠিন সময় আসতে পারে, তাই জনগণকে মিতব্যয়ী হতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম যেন আরও বেশি অস্থির না হয়, সেজন্যই খাদ্য মজুত ঠিক রাখার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার।  খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর আসলে বিকল্প নেই। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে খাদ্যশস্যসহ মাছ, পল্ট্রি, তরিতরকারি, শাক-সবজি ও ফলফলালির উৎপাদন বাড়াতে হবে। 

মনে রাখতে হবে, খাদ্যপণ্য বলতে শুধু চাল ও গমকেই বুঝায় না, আরও অনেক কিছুই খাদ্যপণ্যের অন্তর্গত। কাজেই, কৃষিতে উৎপাদনের একটা জোয়ার তৈরি করতে হবে। কৃষি, খাদ্য, বাণিজ্য ইত্যাদি মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে বসে একটা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও উপায় নির্ধারণ করতে হবে এবং কাজে নেমে পড়তে হবে। 

এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে জনগণ উদ্বুদ্ধ হয়ে উৎপাদন বিপ্লবে শরিক হতে পারে। একইসঙ্গে গণমুখী কর্মসূচি, উৎপাদনমুখী প্রকল্প, বিনিময়মূলক কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 


লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক
 

আরবি/এসএম

Link copied!