ঢাকা সোমবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কে দেশের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

মর্তুজা হাসান সৈকত
প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আগ্রাসী শুল্কনীতি ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কমানো এবং মার্কিন শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপ করেছেন তি নি। 

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপরে যে শুল্কের আঘাত আসবে, তা অনুমেয় ছিল কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশি পণ্যের ওপরও যে এমনভাবে শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হবে, সেটা হয়তো ভাবনাতেই ছিল না কারো। 
এত দিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল। সেটা এখন এক ধাক্কাতে ৩৭ শতাংশ হয়ে গেল! অর্থাৎ এখন থেকে বাংলাদেশকে আমেরিকাতে কোনো পণ্য পাঠালে ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফে বাংলাদেশ যে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। এর মধ্যেই রপ্তানিকারকরা তাদের শঙ্কার কথা জানাতে শুরু করেছেন। সরকারও উদ্বিগ্ন, কারণ একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। 
তাই এ ট্যারিফ ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে শুল্ক ইস্যুর ইতিবাচক সমাধান করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’ গত বৃহস্পতিবার ব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন।

বিশাল শুল্কের কারণে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশি পোশাকের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের মোট বৈশ্বিক রপ্তানির ১৭ থেকে ১৮ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশের পণ্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ, যার ভেতরে তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলার। ফলে ট্রাম্পের এ শুল্কারোপের কারণে বাংলাদেশ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হলোÑ এ শুল্কনীতি বাংলাদেশকে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে তার প্রতিযোগীদের তুলনায় উচ্চ শুল্ক কাঠামোর সম্মুখীন করবে। কারণ, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি খরচ এখন চীন, ভারত এমনকি পাকিস্তানের তুলনায়ও বেশি হবে। 
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ধরা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। এ বাজারে ভারতের ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ২৯ শতাংশ, চীনের ৩৪ শতাংশ শুল্কের পরিবর্তে বাংলাদেশকে ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে পণ্য রপ্তানিতে। আফ্রিকার অনেক দেশ যেখানে আমাদের মতো সস্তা শ্রমে শ্রমিক পাওয়া যায়, সেখানের অনেক দেশকেও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম শুল্ক দিতে হবে। এ হিসাব-নিকাশ বলছে, যদি আমাদের তৈরি পোশাককে ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে হয়, তাহলে আফ্রিকা এবং এশিয়ার অনেক দেশেই আমাদের অর্ডারগুলো চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের অধিক রপ্তানির মূল কারণই হচ্ছে কম দাম। 
তা ছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য চীন থেকে বাংলাদেশে শিল্প স্থানান্তরের বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়বে। কারণ, ট্রাম্পের চীনবিরোধী ভূমিকার কারণে আমরা ভেবেছিলাম, এবারও ট্রাম্প যত চীনবিরোধী হবেন, ততই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। কারণ, ট্রাম্প চীনা পণ্যে অধিক হারে শুল্ক বসাতে পারেন ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো চীন থেকে ক্রয়াদেশ সস্তা শ্রমের দেশগুলোতে সরিয়ে নিয়ে আসবে। ফলে বাংলাদেশের সামনে বাড়তি ক্রয়াদেশ বা অর্ডার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এমনকি বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে কারখানা সরিয়ে অন্য কোনো দেশে নিতেও আগ্রহী হতে পারেন। সেই বিনিয়োগও বাংলাদেশে আসতে পারে। তবে নতুন এ শুল্কনীতি আমাদের সে আশার পালে জল ঢেলে দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি খরচ এখন চীনের তুলনায় বেশি হবে। তা ছাড়া, বাংলাদেশ যখন একটি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তখন উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতিতে এ উত্তরণ মসৃণ হবে না। 
গত আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এর প্রভাব পড়ে পোশাকশিল্পেও। তখন ঢাকার আশপাশের প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলোয় ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। চলে অক্টোবর পর্যন্ত। বিভিন্ন দাবিদাওয়াকে সামনে রেখে আন্দোলন করতে থাকে পোশাকশ্রমিকরা। আর এ শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বন্ধ হতে থাকে কারখানাগুলো। মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে অনেক বিদেশি ক্রেতা। যদিও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সবাই আশা করছিলÑ তার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে পোশাকশিল্পে বড় একটি জাম্পিং আসবে। কিন্তু প্রত্যাশিত সেই জাম্পিং আসা তো পরের কথা, অস্থিরতার কারণে উলটো পোশাকশিল্প পড়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষের মতো কারণগুলো এর জন্য দায়ী ছিল। 
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, গত বছরে তৈরি পোশাক নিটওয়্যার ও টেক্সটাইল শিল্পের ১৪০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ৯৪ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছে। পোশাকশিল্প অত্যন্ত শ্রমঘন একটি খাত হওয়ায় একের পর এক কারখানা বন্ধ হওয়ায় ওই সময়ে হাজার হাজার শ্রমিকের বেকার হয়ে যাওয়া। তা ছাড়া এটি দেশের প্রধানতম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের খাত হওয়ায় বৈদিশিক মুদ্রা অর্জনও ব্যাহত হতে থাকে। বলা হয়ে থাকে তৈরি পোশাকশিল্প হচ্ছেÑ ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি একটি ব্যবসায়িক সম্পর্কের ফল। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে সুনাম অর্জন করেছে এবং বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে, এটা মূলত বিগত তিন দশকের ফল। এ সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র বহুদিন ধরেই সক্রিয়। আগস্টে সরকার পতনের পর সৃষ্ট আন্দোলনেও এই ষড়যন্ত্রকারীরা ইন্ধন দেয়। অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা, হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে শিল্পকে বিপর্যস্ত করে লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মপরিধি সংকুচিত করাটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। আর এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে রপ্তানি বাজারে ভাগ বসাতে চায়। 
এর কারণ হচ্ছে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাকপণ্যের খ্যাতি যে উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল, তা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশ- ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও কম্বোডিয়ার পোশাকপণ্য পৌঁছাতে পারেনি। তা ছাড়া পোশাকশিল্পে দীর্ঘ সময় ধরে বৈশ্বিক বাজারে শীর্ষে থাকা চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানটিই বাংলাদেশের। ফলে দেশি-বিদেশি অপশক্তি, যারা বাংলাদেশের বাজার ধরতে চায় তারা বিভিন্ন উপলক্ষ সৃষ্টি করে শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে তোলে। তাদের বোঝানো হয়, বাংলাদেশের শ্রমিকরা শোষিত, তাদের ঠকানো হচ্ছে। তাদের অধিকার নিজেদেরই আদায় করতে হবে। ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি এই দেশি-বিদেশি অপশক্তিÑযারা বাংলাদেশের বাজার ধরতে চায় তাদের সামনেও নতুন করে সুয়োগ সৃষ্টি করবে। 
শিল্পমালিকরাও গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বারবার বলেছেন, ‘একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এ শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দিতে শ্রমিক অসন্তোষের পুরোনো নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে।’ বাংলাদেশের শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির মাধ্যমে পোশাকশিল্প কারখানা বন্ধ রাখা গেলে নিশ্চিতভাবেই অনেক ক্রয়াদেশ এখান থেকে অন্য দেশে চলে যাবে। আর এসব ক্রয়াদেশ স্বভাবতই প্রতিযোগী দেশগুলোই পাবে। 
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৭-১৮ শতাংশের গন্তব্যও দেশটি। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি ০.৭৩ শতাংশ বেড়ে ৭৩৪ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এ ছাড়া রপ্তানির পরিমাণও বেড়েছে ৪.৮৬ শতাংশ। মার্কিন পোশাক আমদানির সর্বশেষ তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম ৩.৮ থেকে ৭.৭ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর কারণে রপ্তানি প্রায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পরও আশানুরূপ পরিমাণে আয় বাড়েনি। 
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের অগ্রযাত্রা প্রায় চার দশকের। তবে প্রথম দিকে যেনতেনভাবে কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল। তখন কাজের মান নিয়েও অনেক প্রশ্ন ছিল। তা ছাড়া শ্রমিকের মজুরি, নিরাপত্তা, পৃথক গার্মেন্টেস ভিলেজ এবং প্রযুক্তি উন্নয়নের মতো বিষয়গুলো তেমন একটা গুরুত্ব পায়নি। তবে রানা-প্লাজা ট্রাজেডির পর তৎকালীন সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে বাংলাদেশের পোশাক ও বস্ত্র খাত। এর মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন হলো- পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপন। বিশ্বে পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনার শীর্ষে থাকা অর্ধেকই বাংলাদেশের পোশাক কারখানা। বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে বর্তমানে লিড সনদ পাওয়া পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে ২১৮। তার মধ্যে লিড প্লাটিনাম সনদধারী ৮৪টি, গোল্ড ১২০টি, সিলভার ১০টি ও ৪টি কারখানা সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে। এর পাশাপাশি, বিশ্বের ১০০টি পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার মধ্যে ৫৬টি অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি কারখানা বাংলাদেশের। এসব অর্জন জাতিকে বিশ্বজুড়ে গর্বের স্থানে নিয়ে গেছে। ফলে ‘মেড ইন বাংলাদেশ লেখা’ পোশাক সারা বিশ্বের নামিদামি ফ্যাশন হাউসগুলোয় বহু আগে থেকে স্থান করে নিয়ে এখন পর্যন্ত অবস্থান ধরে রেখেছে গৌরবের সঙ্গে।
দেশকে গর্বের জায়গায় নিয়ে যাওয়া এ পোশাক খাত যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপে কারণে বড় রকমের ঝুঁকির মুখে পড়েছে নিশ্চিতভাবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রতিযোগীদের মধ্যে ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ৪৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ ও কম্বোডিয়ার ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা করেছেন ট্রাম্প। অর্থাৎ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার শুল্ক বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হবে। তবে, ভারত, পাকিস্তান ও তুরস্কের ওপর শুল্ক আমাদের চেয়ে কম। ফলে তারা লাভবান হবে। বাংলাদেশের অনেক অর্ডার তাদের কাছে চলে যাবে। কারণ, ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েই যে পণ্য রপ্তানি করে, সেগুলো মোটামুটি বাংলাদেশের রেঞ্জের মতোই; এবং তাদের শ্রমও বাংলাদেশের মতোই সস্তা। ফলে দামের তারতম্যের কারণে তাদের ক্রেতা বাংলাদেশের পরিবর্তে প্রাধান্য দেবে ভারত ও পাকিস্তানকে। পাশাপাশি, হন্ডুরাসের মতো কাছাকাছি দেশগুলোর কাছেও যাবেন মার্কিন ক্রেতারা। 
ক্রেতারা কিন্তু যেখানে সস্তা পাবে সেখানেই যাবে, কারণ এটা তাদের ব্যবসা। বাংলাদেশে এসেছে তারা সস্তা শ্রমের জন্য, সস্তায় পণ্য কিনতে। এ অবস্থায়, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এগোতে হবে বাংলাদেশকে। এখন আমেরিকার বাজারে যা হলো অন্য কোনো বড় বাজারেও যদি এমন হয়, সেটার পরিণাম আমাদের জন্য হবে খুবই ভয়াবহ। তাই আমাদের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এর জন্য অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যনীতি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। ভারত যেমন আগে থেকেই বুঝতে পেরে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্কের হার কমিয়ে এনেছিল। আমাদের এখনো সে সুযোগ আছে। তা ছাড়া এ শুল্কারোপের চাপ কমাতে রপ্তানিকে কীভাবে আরও বহুমুখীকরণ করা যায়, সেটা নিয়েও গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে। 
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক