বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


অলোক আচার্য

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম

বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধের খড়গ

অলোক আচার্য

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম

বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধের খড়গ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের যে নীতি গ্রহণ করেছেন এবং তার বিপরীতে যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে এটাই বিশ্বকে একটি বাণিজ্যযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 

ট্রাম্পের ক্ষমতার প্রথম মেয়াদকালে অবশ্য পরিস্থিতি একটু ভিন্ন ছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও ছিল আলাদা। এই বাণিজ্যযুদ্ধ চলে মূলত চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের। এটাই তখন বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল। 

এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের সুবাদে এই শব্দটি আজ বেশ আলোচিত। এটা যে নতুন করে শুরু হতে যাচ্ছে সেটাও অনুমেয় ছিল। 

এবার ট্রাম্প শুল্ক আরোপ কেবল চীনের ওপর নয় বরং যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর যত ভাগ শুল্ক নেয় সেই পরিমাণই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্র সেই দেশের পণ্যের উপর আরোপ করবে এমন নীতিতেই যুক্তরাষ্ট্র অগ্রসর হচ্ছে। ফলে অনেক দেশই যে বিপাকে পরতে পারে তা বলাইবাহুল্য।

যুক্তরাষ্ট্র এই সময়ের সুপার পাওয়ার এবং বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। সুতরাং মিত্র দেশগুলোতে অন্তত যুক্তরাষ্ট্র এতদিনও কিছু ছাড় দিয়ে এসেছে। যেমন-ভারত। 

এবার ভারতও ছাড় পাচ্ছে না। ট্রাম্পের কথায় অন্তত এসব বিষয় বেশ স্পষ্ট। এখানে ট্রাম্পনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের যে একক আধিপত্য সেখানে প্রভাব ফেলতে পারে। 

কারণ যদি অন্য দেশ থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা পায় তখন দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রবিমুখ হবে কেবলমাত্র নিজেদের অর্থনীতি বাঁচাতে। এর ফলে বিশ্বে একটি নতুন বলয় তৈরিও হতে পারে। 

যেখানে কাছাকাছি দেশগুলো নিজেদের সুরক্ষিত করতে একজোট হতে পারে। অর্থনীতিই তো দেশগুলোর সামর্থ্যরে মূল চালিকাশক্তি। সেখান যদি আঘাত আসে তখন বিকল্প ভাবা ছাড়া কোনো উপায় নেই। 

অন্যদিকে আধিপত্যবাদের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেটি ধরে রাখতে হলে মিত্র দেশগুলোকে একটু ছাড় দিতেই হবে। এতদিন এটাই নীতি ছিল।

গিভ অ্যান্ড টেক নীতি হলেও সেখানে কিছুটা শিথিলতা ছিল। এখন যা অনেক বেশি কঠিন বলে মনে হচ্ছে। ট্রাম্পের এই নীতি মূলত দুটি ঘটনার জন্ম দিতে পারে। 

প্রথমত, কিছু মিত্র দেশকে বাধ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মিত্রতা গড়ে তুলতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষিত মিত্রদের সঙ্গে পরোক্ষ দূরত্ব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চীন ইতোমধ্যেই মার্কিন শুল্কের প্রভাব অনুভব করেছে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও অন্যান্য চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। 

আগামী ৩ এপ্রিলে থেকে গাড়ি আমদানির ওপরেও নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। এদিকে ট্রাম্পের শীর্ষ বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো দাবি করেছেন, ‘শুধু গাড়ি আমদানির শুল্ক থেকেই বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার আদায় করা সম্ভব। 

আর সব দেশের ওপর শুল্ক বসালে বছরে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আসবে, ১০ বছরে যা হবে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার।’ এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আপাত চাঙা হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। 

অর্থনীতিবিদরা এই ঘটনার উপর সর্বদা তীক্ষè নজর রেখে চলেছেন এই যুদ্ধের ফলে কী ঘটে তা দেখার জন্য। এর ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা ঘনীভূত হতে পারে। 

কারণ এর সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বাণিজ্যযুদ্ধ আসলে কী? সহজ ভাষায়, বাণিজ্যযুদ্ধ হলো কোনো দেশ প্রথমে কোনো দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা এবং একই রকম ব্যবস্থা যখন অপর দেশটিও নেয় তখন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়। 

মোট কথা এটি ইটের জবাবে পাটকেল ছোড়ার মতো অবস্থা। বাণিজ্যযুদ্ধ একটি কৌশল যা কোনো দেশের অগ্রগতিকে স্বল্প সময়ের জন্য দুর্বল করে দেয় বা সাময়িক সমস্যার মধ্যে ফেলে দেয়। সরাসরি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ অনেক ঝামেলার বিষয় এবং এতে ব্যাপক প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে। বাণিজ্যযুদ্ধ তাই আর একটি কৌশল। 

এতে যুদ্ধের মতোই উভয় দেশকেই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। সেই সঙ্গে আরও অনেক দেশকেই ভুগতে হয়। দুই দেশের বাণিজ্যযুদ্ধ তাদের নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তার প্রভাব সংশ্লিষ্ট অন্য দেশের ওপরও প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। 

শেষটায় এর পরিণতি কী হবে বা এর সমাপ্তি হবে কীভাবে তা এখনই বলা সম্ভব না। বাণিজ্যযুদ্ধ প্রাণঘাতী না হলেও দুশ্চিন্তা তো বটেই। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভয়াবহ মন্দা ধেয়ে আসছে এমনটাই আশঙ্কা আর্থিক খাতসংশ্লিষ্টদের। 

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একটু ওলটপালট হতে চলেছে। ইতোমধ্যেই চীন, কানাডা ও মেক্সিকোতে এর কাজ শুরু হয়েছে। এতে মাঝে মধ্যেই টালমাটাল হচ্ছে শেয়ারবাজার। 

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ গোটা বিশ্ববাণিজ্যকেই অস্থির করে তুলেছে। আস্থার অভাব প্রকট হওয়ায় সম্ভাব্য মন্দা থেকে রেহাই পাওয়া সহজ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এ থেকে উত্তরণের জন্য কোনো কার্যকরী প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে না। 

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তা এই মুহূর্তে পুরোপুরি অনুমান করা সম্ভব না। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দাবস্থা তৈরি করতেও পারে বিশ্লেষকদের অনুমান এটাই। 

কেন সে কথায় পরে আসা যাক। যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা এক দীর্ঘকালব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক অবনতির অবস্থা, যা সাধারণত বেকারত্ব বৃদ্ধি ও আয় কমে যাওয়ার মাধ্যমে বোঝা যায়। 

একদল অর্থনৈতিক বিশ্লেষক সম্প্রতি সতর্ক করেছে, মন্দার পরিস্থিতির ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে যদি অন্য কোনো দেশ তুলনামূলক কম শুল্কে অধিক সুবিধা দেয় তখন সেই দেশের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য শুরু হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক প্রবাহের গতি কমে আসতে পারে। 

একই সঙ্গে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মসংস্থান সংকুচিত হবে। কারণ ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই নতুন কর্মসংস্থানে চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

অ্যাস্টন ইউনিভার্সিটি বিজনেস স্কুলের একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে বিশ্বব্যাপী ক্ষতি হতে পারে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার (১.১ ট্রিলিয়ন পাউন্ড)। 

কারণ, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে বাণিজ্যের পথ পরিবর্তিত হবে এবং পরিবহন ব্যয় বাড়বে, তখন স্বাভাবিকভাবে যেকোনো পণ্যের দাম বাড়বে। 

বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলোর সঙ্গে ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর সম্পর্কে অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক লেনদের সঙ্গে যেসব দেশ বড় দেশগুলোর ওপর নির্ভর করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন বাণিজ্যঘাটতি মেটাতে। এটি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির একটি ছিল। 

ইতিহাসে দেখা যায়, ১৯৩০ সালে অর্থনৈতিক মন্দা সামাল দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২০,০০০ পণ্য রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ করে স্মুট এন্ড হউলি অ্যাক্ট ১৯৩০ প্রয়োগের মাধ্যমে।

 যার ফলে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও পাল্টা আক্রমণের শিকার হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবশেষে এই আইনটি বাতিল হয়ে যায়।

বর্তমান শুরু হওয়া বাণিজ্যযুদ্ধে অনেক দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ট্রাম্পের ভাষায় এই শুল্ক আরোপ হবে পারস্পরিক ও ন্যায্য। এখন এই ন্যায্যতার ভিত্তিতে শুল্ক আরোপ শুরু হলে অনেক দেশের জন্যই বাণিজ্যে বড় ধরনের ঘাটতির মুখোমুখি হবে। 

এই মুহূর্তে যাদের পণ্য কম শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবে এখন সেটি সম্ভব হবে না। ফলে এর প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে বাধ্য। ফলে বিশ্বজুড়ে শুরু হতে যাওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের ক্ষতি থেকে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রও মুক্ত থাকতে পারবে না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!