বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ১২:২৯ পিএম

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পৃথিবীর ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ১২:২৯ পিএম

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পৃথিবীর ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অবরুদ্ধ এই উপত্যকাজুড়ে দখলদার বাহিনীর বর্বর হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং এর মধ্যেই একদিনে আরও অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। 

টানা প্রায় ১৮ মাস ধরে চালানো এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫০ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে গত ২০ দিনেই গাজায় প্রায় ৫০০ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এতে এই সময়ের মধ্যে মোট শহিদের সংখ্যা ১৩৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। 

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, দেইর আল-বালাহের পাঁচটি এলাকার বাসিন্দাদের তাদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর ইসরায়েল গাজার মধ্যাঞ্চলে নতুন করে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে। 

সর্বশেষ এই হামলার ফলে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যার মধ্যে সাংবাদিকও রয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের একদিন পর নতুন করে এই হামলা চালানো হলো। 

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। 

অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল। গাজা ভূমধ্যসাগর বরাবর ১৪০ বর্গমাইল (৩৬৩ বর্গকিলোমিটার) এলাকা নিয়ে অবস্থিত। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে মিশর এবং পূর্ব ও উত্তরে ইসরায়েল রয়েছে। সহজভাবে গাজা দুটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের মধ্যে একটি ছোট অংশ। অন্যটি হচ্ছে পশ্চিমতীর।

গাজার সঙ্গে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অদ্ভুত মিল আছে। যেমন- বাংলাদেশের আড়াই দিক ঘিরে আছে ভারত, সামান্য কিছুটা মিয়ানমার আর দক্ষিণে সাগর। গাজার অবস্থাও তাই। তবে গাজা আয়তনে আমাদের বর্তমান ঢাকা মহানগরীর কাছাকাছি ৩০৬ বর্গকিলোমিটার।

গাজার সরকারি ভাষা আরবি। জাতিগোষ্ঠী ফিলিস্তিনি আরব। ধর্ম ৯৯ শতাংশ সুন্নি ইসলাম, ১ শতাংশ খ্রিষ্টধর্ম। জনসংখ্যা আনুমানিক ২,৩৭৫,২৫৯ (২০২২)। জনঘনত্ব ৬,৫০৭/বর্গকিলোমিটার গাজার জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘের ১৩৮ সদস্য দ্বারা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।

গাজা সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের কেন্দ্র: গাজার ইতিহাস প্রায় ৪,০০০ বছরের। গাজা বিভিন্ন রাজবংশ, সাম্রাজ্য দ্বারা শাসিত হয়েছে আবার অনেকের মাধ্যমে ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং পুনরুদ্ধার হয়েছিল। এটি ফিলিস্তিনের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে একটি। 

এর আগে গাজা প্রায় ৩৫০ বছর ধরে প্রাচীন মিশরীয়দের নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। গাজা ৭৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট শহরটি অবরোধ ও দখল করেন। তার আক্রমণের সময় বেশির ভাগ বাসিন্দা নিহত হয়। অতঃপর শহরটি হেলেনিস্টিক শিক্ষা ও দর্শনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে এবং আরব বেদুইনদের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়। 

ইসলামের এক প্রাণকেন্দ্র : ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি আমর ইবনে আল-আস গাজা জয় করেন। সে সময় অধিকাংশ গাজাবাসী প্রাথমিক মুসলিম শাসনামলেই ইসলাম গ্রহণ করে। তারপর শহরটি সমৃদ্ধির শীর্ষে আরোহণ করে। 

১১০০ সালে ক্রুসেডাররা ফাতেমিদের কাছ থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়, কিন্তু সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী তাদের বিতাড়িত করেন। ১৩ শতকের শেষের দিকে গাজা মামলুকের হাতে ছিল এবং সিনাই উপদ্বীপ থেকে সিজারিয়া পর্যন্ত বিস্তৃৃত একটি প্রদেশের রাজধানী হয়ে ওঠে। এটি ১৬ শতকে অটোমান নিযুক্ত রিদওয়ান রাজবংশের অধীনে একটি স্বর্ণযুগের সাক্ষী ছিল।

ষড়যন্ত্রের সূচনা : ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বাহিনী শহরটি দখল করে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল সৃষ্টির পর মিশর প্রায় দুই দশক ধরে গাজা নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনিদের নির্বাসনের ফলে শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। 

১৯৬৭ সালে আরবদের বিরুদ্ধে ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের বিজয়ের পর ইসরায়েল গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিমতীরের নিয়ন্ত্রণ কব্জা করে নেয়। পরবর্তী ৩৮ বছর ধরে, সে গাজাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ২১টি ইহুদি বসতি নির্মাণ করে। ২০০৫ সালে, আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে, ইসরায়েল গাজাকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে দিতে বাধ্য হয়।

সার্বিক পর্যালোচনা ও তথ্য-প্রমাণ বলছে, ফিলিস্তিনের মাটিতে ইসরায়েল যুদ্ধ নয়, পরিকল্পিত গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে। সেখানে সৈনিকে সৈনিকে লড়াই হচ্ছে না, সাধারণ নাগরিক, নারী এবং শিশু তথা গোটা জাতিকে টার্গেট করে যুদ্ধ করছে ইসরায়েল। আক্রমণ পরিচালিত হচ্ছে সব ফিলিস্তিনির বিরুদ্ধে এবং প্রতিটি ফিলিস্তিনি সংস্থার বিরুদ্ধে। 

বসতবাড়ি, ধর্মস্থান, অর্থনীতি, সংস্কৃতি রক্ষা পাচ্ছে না। পশ্চিমা দেশ ও মিডিয়া পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রচারণা করে ইসরায়েলের মানবাধিকারবিরোধী কার্যক্রমকে মদত দিচ্ছে। গাজায় একটি ‘মিথ্যা’ ও ‘সাজানো’ যুদ্ধের খবর প্রচার করে ‘আসল’ গণহত্যাকে আড়াল করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের ওপর চালানো বর্বর গণহত্যা বিশ্ব মানবতার জন্য কলঙ্ক। 

শুধু আরব বিশ্ব নয়, মানবতার পৃথিবী তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। কিন্তু আফসোস, মুসলিম বিশ্বও আজকে গতানুগতিক মৌখিক প্রতিবাদ করে বসে রয়েছে। তাই মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। 

পৃথিবীর মানবতাকে গলাটিপে হত্যা করছে। আর গাজার মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে দেখে অনেকেই আমরা অস্বাভাবিক অবস্থায় আছি। সবাই যে যার জায়গা থেকে মজলুমের পাশে দাঁড়ানো দরকার।

লেখক: গবেষক, সমাজচিন্তক ও কলাম লেখক

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!