দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, আর্থিক চাপ ও খাদ্য সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)। বাউবির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ উচ্চশিক্ষা এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জন করে, যা তাদের কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হয়। বাউবি বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগণের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন দিক থেকে অবদান রাখতে পারে। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির সূত্র ধরে মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
অন্য বিশ্ববিদ্যালয় যা করতে পারে না তার বিপরীতে বাউবি বিভিন্ন পেশাগত কোর্স ও ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। এর মাধ্যমে সরবরাহকৃত ধারণা ও জ্ঞান যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তারা তাদের এই দক্ষতা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কাজে লাগায় যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণে সাহায্য করে এবং নতুন শিল্পে কর্মসংস্থান তৈরি হয়। যেমন, কম্পিউটার সায়েন্স, গ্রাফিক ডিজাইন, ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনা, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য প্রফেশনাল কোর্সের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয়, যা বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি নানা কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা বাউবির মাধ্যমে নতুন করে শিক্ষার আলোয় আসতে পেরেছেন যারা দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পেরেছিলেন।
নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাউবির ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হতে প্রেরণা জোগায়। বিশেষ করে, বাউবিতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কোর্স এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন ব্যবসা শুরু করতে সক্ষম হয়। উদ্যোক্তারা নতুন ব্যবসা তৈরি করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে। উদ্যোক্তা তৈরি হওয়া এবং ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসা গড়ে ওঠা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বৈচিত্র্য নিয়ে আসে এবং স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটায়। এতে করে একাধারে নতুন কর্মসংস্থান যেমন হয়েছে তেমনি তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেশের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতিতেও উপযুক্ত ভূমিকা রেখে চলেছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা মেটাতে গিয়ে প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। বর্তমান যুগে তথ্যপ্রযুক্তি এবং ডিজিটাল দক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাউবি আইসিটি বিষয়ক কোর্স যেমন ওয়েব ডিজাইন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, এবং গ্রাফিক ডিজাইন প্রদান করে, যা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এই দক্ষতার মাধ্যমে তারা ডিজিটাল পেশায় অংশগ্রহণ করতে পারে, যা তাদের আয় এবং জীবিকা উন্নত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, প্রযুক্তিগত দক্ষতার বিস্তার দেশের উন্নত প্রযুক্তি খাতে শ্রমশক্তি সরবরাহ করে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে। এর মাধ্যমে মূলত অদক্ষ জনশক্তি শিক্ষিত ও দক্ষ হয়ে ওঠে যারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি দেশের মানুষের শিক্ষার সমতা ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ জরুরি। আর সেক্ষেত্রে বাউবি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ প্রদান করে, যা দেশের সমগ্র জনগণের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। শিক্ষার সমতা এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগণের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরি হওয়ায়, এটি দীর্ঘমেয়াদে কর্মক্ষম জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে করে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান যেমন দারিদ্র্য হ্রাস, সামাজিক অশান্তি কমানো, এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন সম্ভব হয়, যা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সক্ষমতা দেশের মানুষের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে উপযুক্ত ভূমিকা রাখে।
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন পুরো বিশ্বকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়। এর ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে না পারলে সবাইকে পিছিয়ে পড়তে হয়। বিভিন্ন কারিগরি এবং জীবনমুখী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এখান থেকে অর্জিত দক্ষতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু দেশের অভ্যন্তরে, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থান, বৈদেশিক বাণিজ্যিক, এবং বিদেশে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী হতে পারে। বাউবি শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের দক্ষতায় প্রশিক্ষিত করে, যা বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হয়।
শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান দুটিকে সমান্তরালে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বাউবির শিক্ষার নমনীয়তা এবং সময়োপযোগিতা বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। বাউবি শিক্ষার নমনীয় পদ্ধতি এবং দূরশিক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণ করে, যা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত, কর্মরত বা গৃহস্থালি কাজে ব্যস্ত মানুষের জন্য উপযুক্ত। এসব মানুষ, যারা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারতেন না, এখন পেশাগত দক্ষতা অর্জন এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে, দেশের জনগণের পেশাগত দক্ষতা ও শিক্ষার স্তর উন্নত হচ্ছে, যা দেশের উৎপাদনশীলতা এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে সহায়তা করে। যা একটি পর্যায়ে সরাসরি মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিকব উন্নয়ন অনেকাংশে তার মানবসম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ দেশের আর্থিক পরিকাঠামো অনেকাংশেই রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। বাউবি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে সহায়তা করে, যা দেশের মোট উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সক্ষম। বাউবির মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অর্জনকারী মানুষেরা দেশের বিভিন্ন সেক্টরে (যেমন শিক্ষা-স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি-ব্যবসা, কৃষি ইত্যাদি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখে আসছে বহুদিন ধরে।
বাংলাদেশের বেকারত্ব হ্রাস করার ক্ষেত্রে বাউবির ভূমিকা সর্বজনবিদিত। বাউবি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ প্রদান করে, যা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে। এর ফলে, বেকারত্ব কমানোর পাশাপাশি কর্মক্ষম জনগণের আয়ের সুযোগও বৃদ্ধি পায়। চাকরির সুযোগ বাড়ানো এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে সাহায্য করে। বাস্তবে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার, দক্ষতা বৃদ্ধি, উদ্যোক্তা সৃষ্টি, এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার মানবসম্পদকে শক্তিশালী করতে পারছে। এর ফলে, বাউবি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক উন্নয়ন, এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখে চলেছে তা অনস্বীকার্য।
আপনার মতামত লিখুন :