জলবায়ু যোগাযোগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন কৌশল এবং মাধ্যম ব্যবহার করে জনগণকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতন করা এবং তাদের কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করা জরুরি। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।
ল্যাটিন ভাষায় যোগাযোগ’ বা কমিউনিকেশন শব্দের মূল হলো কমিউনিকেয়ার, যার অর্থ ভাগ করা বা একই মতে আসা। পিয়ারসন এন্ড নেলসনের সংজ্ঞামতে, যোগাযোগ অর্থ বোঝার এবং ভাগ করে নেওয়ার প্রক্রিয়া। উৎস, তথ্য/বার্তা, চ্যানেল, রিসিভার, প্রতিক্রিয়া, পরিবেশ, প্রসঙ্গ, হস্তক্ষেপ, এই কয়েকটি বিষয় যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মোদ্দা কথা, যোগাযোগ একটি প্রক্রিয়া যা মৌখিক এবং অ-মৌখিক পদ্ধতির মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ এবং গ্রহণের সঙ্গে জড়িত। যোগাযোগ হলো একটি বোঝাপড়া তৈরির উদ্দেশ্যে নিজের বা দুই বা তার অধিক ব্যক্তির মধ্যে চিন্তা, মতামত এবং ধারণার আকারে তথ্য আদান-প্রদানের একটি দ্বিমুখী মাধ্যম। শুধু মৌখিক বা অ-মৌখিক নয়; যোগাযোগ হতে পারে লিখিত বা দৃশ্যসংবলিত। ইন্টার-পারসোনাল কমিউনিকেশন বা আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক লোকের মধ্যে মৌখিক বা অ-মৌখিকভাবে আদান-প্রদান করা তথ্য, ধারণা এবং অনুভূতি জড়িত।
মুখোমুখি যোগাযোগ প্রায়ই শোনা, দেখা এবং অনুভব করার নিমিত্ত শারীরিক ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি এবং অঙ্গভঙ্গি জড়িত। এ ধরনের যোগাযোগের ব্যবহার সবসময়ই বেশি। তবে আরও একটি যোগাযোগ রয়েছে, যা অনেক শক্তিশালী। তা হচ্ছে ইন্ট্রা-পারসোনাল কমিউনিকেশন বা নিজের সঙ্গে যোগাযোগ বা স্ব-যোগাযোগ। নিজের সঙ্গে কথা বলা, মনে মনে কথা বলা বা কল্পনা করা বা কোনো দৃশ্য চিন্তা করা, নিজেকে নিজে পরামর্শ দেওয়া বা বোঝানো, স্মৃতিচারণ-এই বিষয়গুলো নিয়ে স্ব-যোগাযোগকে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে। অনেকেই কোনো ভুল করার পর নিজেকে নিজে বলে ফেলেন, ‘পরেরবার আরও ভালো করব’ বা ‘আমি পারব না’। ইতিবাচক বা নেতিবাচক-সব ধরনের কথার মধ্য দিয়ে নিজেকে নিজে অনুপ্রাণিত বা নিরুৎসাহিত করেন। সফল স্ব-যোগাযোগের ভিত্তি হলো নিজেকে সচেতন করা, উপলব্ধি হওয়া এবং প্রত্যাশা তৈরি ও যাচাই করা। পরিকল্পনা থেকে সমস্যা সমাধান, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সমাধান, নিজের ও অন্যদের মূল্যায়ন এবং বিচার- এ সবকিছুই স্ব-যোগাযোগের মাধ্যমে চমৎকারভাবে করা সম্ভব।
বাংলাদেশ একসময় ছিল ষড়ঋতুর দেশ। বর্তমানে গ্রীষ্ম, বর্ষা আর অল্পবিস্তর শীতের দেখা মেলে। অর্থাৎ দুটি ঋতুপূর্ণভাবে এবং অপরটির আংশিক দেখা মেলে। বাকি শরৎ, হেমন্ত, বসন্ত ঋতু যেন হারিয়ে গেছে বৈশ্বিক উষ্ণতার কবলে। শীতেও আজকাল গরম লাগে। গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। বৃষ্টি কখনো অতিবৃষ্টি আবার কখনো অনাবৃষ্টি! খরায় শুকিয়ে যায় হাওর-বাঁওর, খালবিল, নদী-নালা। অন্যদিকে মাঠঘাট ও ক্ষেতের ফসল পুড়ে যায়। অতিরিক্ত জোয়ার এবং জলোচ্ছ্বাসের লবণাক্ত পানি ভূখণ্ডে ঢুকে কমিয়ে দেয় ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা। ঋতুচক্রের অস্বাভাবিকতা মানুষ, পশুপাখি ও বৃক্ষের ওপর প্রভাব ফেলে। বিনষ্ট করে প্রাণ-প্রকৃতি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অসময়ে প্রবল বন্যা, মরুময়তা, ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ, খরা যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ুর এই পরিবর্তন এখন এত দ্রুততার সঙ্গে ঘটছে যে অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার ঝুঁকিতে আছে; যেমন, বরফ গলতে থাকায় উত্তর মেরুর শ্বেত ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছ বিপন্ন হওয়ার পর্যায়ে আছে, কারণ যেসব নদীতে ঢুকে তারা ডিম পেড়ে বাচ্চার জন্ম দেয়, সেগুলোর পানি গরম হয়ে যাচ্ছে।
ট্রপিক্যাল অঞ্চলের কোরাল রিফ বা প্রবাল-প্রাচীর উধাও হয়ে যেতে পারে, কারণ বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের পানিতে মিশে পানিতে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হচ্ছে, তবে যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে তার জন্য মানুষের কর্মকাণ্ডই প্রধানত দায়ী। মানুষ যখন থেকে কলকারখানা এবং যানবাহন চালাতে বা শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করেছে, সেই সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বায়ুমণ্ডলের অন্যতম একটি গ্রিনহাউজ গ্যাস। কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ঊনবিংশ শতকের তুলনায় এখন ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়। তার সঙ্গে রয়েছে পুকুর-নদী-খালবিল দূষণ, বায়ুদূষণ, মাটি দূষণ; সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বিলহাওর, দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা, উত্তরাঞ্চলের খরাপ্রবণ এলাকা, পাহাড়ি অঞ্চলসহ অতিরিক্ত তাপপ্রবণ ঢাকা শহর তথা প্রায় সমগ্র বাংলাদেশ।
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে যোগাযোগের বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে শ্রোতাদের শিক্ষিত এবং সংগঠিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রয়োজন স্বযোগাযোগ ও আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের সংমিশ্রণ ঘটানো। প্রত্যেকে যদি তাদের বক্তব্য উত্থাপন করে, সমাধানগুলো ভাগ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ভুল তথ্য দেওয়া বা কোনো তথ্য না দেওয়া অনেক বড় বাধা। এভাবে কোনো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রতারণামূলক বা বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তু জলবায়ু বিজ্ঞানবিষয়ক সমস্যা সমাধানের ধারণাকে বিকৃত করে, বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে এবং প্রায়ই কাজে বিলম্ব করে বা ক্ষতিকর পদক্ষেপের দিকে নিয়ে যায়। অন্যদিকে তথ্য ও পরিসংখ্যান শেয়ার করার সময় নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে, সেগুলো একটি নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে এসেছে, যা বিজ্ঞানভিত্তিক। পাশাপাশি এটিও খেয়াল রাখতে হয় যে উদ্দেশ্যটি পক্ষপাতদুষ্ট নয় এবং আর্থিক বা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত নয়। এদিকে কোনো তথ্য অনলাইনে পোস্ট করলে তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিছু শেয়ার করার আগে চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন। কে এটি তৈরি করেছে, কোন উৎসের উপর ভিত্তি করে কারা এটির জন্য অর্থ প্রদান করেছে এবং কারা এটি থেকে লাভবান হতে পারে তা খুঁজে বের করা জরুরি।
কোনো কোম্পানি বা পণ্যকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করার আগে সেটা আসল না নকল সেটা যাচাই করা জরুরি। কোম্পানি তাদের কার্বন পদচিহ্ন কমাতে এবং জলবায়ু প্রতিশ্রুতি প্রদান করতে সত্যিই কি করছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। আর্থিক বিষয়গুলোকেও সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে। একজন উপযুক্ত বার্তাবাহক জনগণকে সংযুক্ত করতে পারে। মেধাবী, তথ্যবহুল ও বিশ্বস্ত বৈজ্ঞানিক, গবেষক, আবহাওয়াবিদ, চিকিৎসক, কনটেন্ট ক্রিয়েটর অবশ্যই দর্শক-শ্রোতাদের জন্য উপযুক্ত বার্তাবাহক। জলবায়ু যোগাযোগের ক্ষেত্রে যারা জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার এবং নিজের যত্নসম্পর্কে জানে, তারাও বার্তাবাহক হতে পারে। কারণ তারা বলতে পারে, মানুষ আমার মতোই জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার। আমরা যদি এখনই কাজ শুরু করি, তাহলে সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলো এখনো এড়ানো যেতে পারে। তাই সংকট নিয়ে শুধু বসে না থেকে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা ও সমাধানের পথ বের করে আশাব্যঞ্জক বার্তা প্রকাশ এবং সবাইকে ক্ষমতায়িত ও জড়িত থাকতে অনুপ্রাণিত করা প্রয়োজন। শুধু তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করলেই মানুষ আকর্ষিত হবে না। কনটেক্সট অনুযায়ী মানুষের নিজের মতো একটি গল্প উপস্থপন করতে হবে। ব্যক্তিগত গল্প একটি আবেগপূর্ণ সংযোগ তৈরি করতে পারে। দর্শক-শ্রোতাদের সতর্ক করতে পারে এবং শেয়ার করা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোকে কম কঠিন বলে মনে করতে পারে।
এমনকি জলবায়ু শব্দটি দিয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার দরকার নেই। দর্শকদের নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্কিত সমস্যা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। জনগণকে জানানো প্রয়োজন যে, তাদের পরিবর্তন করার ক্ষমতা আছে। কারণ নিজে সমাধানের উদ্যোগ নিলে সিস্টেমও পরিবর্তিত হয়। নিজেরা যদি তাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ করে, অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং সরকার ও বেসরকারি পদক্ষেপের বিষয়ে দাবি তুলে ধরে তাহলে পরিবর্তন সম্ভব। ইতিহাস বলে, অনেকের ছোট ছোট পদক্ষেপের ফলে নেতাদের মাধ্যমে বড় পরিবর্তন ঘটে। পরিবর্তনের জন্য ‘বলতে হবে’ এবং ‘এখনই করতে হবে’−এই উদ্যোগের ফলে নেতারাও কাজ করার বিষয়ে ভাববে। জলবায়ু সংকট সমাধানের অর্থ হলো, অন্যায় ও অবিচারের সমাধান করা, যা সবার জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। দরিদ্র দেশ এবং অনুন্নত সম্প্রদায়, আদিবাসীসহ যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পরিবেশ রক্ষা করেছে তারা প্রায়ই জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়।
একই ঘটনা নারী ও মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে সর্বস্তরের ও সম্প্রদায়ের মানুষের বক্তব্য, মতামত, দক্ষতা, উদ্ভাবন, ইতিবাচক পদক্ষেপ, ঐতিহ্যগত বৈজ্ঞানিক কৌশল, প্রযুক্তিগত জ্ঞানসহ সমাধানগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সমীক্ষা থেকে জানা যায়, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ চায় তাদের সরকার পদক্ষেপ নেবে। এদিকে উন্নত অর্থনীতির বেশিরভাগ মানুষ তাদের নিজেদের জীবনের পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক। এমতাবস্থায় আমাদের একত্র হওয়া উচিত। জলবায়ু সংকট সমাধানের জন্য এখনই কী ঘটতে পারে, তা জনগণকে জানানো প্রয়োজন। কারণ সময় ফুরিয়ে গেলে কাজ করার কোনো মূল্য থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনে জরুরি পদক্ষেপের জন্য জনসমর্থন বাড়ানো প্রয়োজন এবং তা এই মুহূর্তে। একটি টেকসই বিশ্বের সম্ভাবনা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করলে প্রচুর সুযোগ আসবে; যেমন সবুজ ও টেকসই চাকরি, পরিষ্কার বায়ু, পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা, বসবাসযোগ্য উপকূলীয় শহর এবং উন্নত স্বাস্থ্য। ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা’ই বাক্যটি অনেকে নাও বুঝতে পারে। তাই সহজভাবে এই ইস্যুটিকে তুলে ধরতে হবে। পরিবার, প্রকৃতি, সম্প্রদায়, সংস্কৃতি, স্থানীয় অবস্থা ও অবস্থান এবং ধর্মের সঙ্গে মূল্যবোধকে যুক্ত করা যেতে পারে। জরুরি পরিস্থিতি বোঝাতে নিরাপত্তা ও টেকসই অবস্থার কথা বিবেচনায় আনা যেতে পারে। সারা বিশ্বের অনেক যুব ও নারী জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট সমাধানে কাজ করছে। তাই যুব ও নারীদের একত্র করা এখনই প্রয়োজন।
জলবায়ু যোগাযোগ হলো জলবায়ু পরিবর্তনের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ এবং বোধগম্য ভাষায় সাধারণ মানুষ, নীতি নির্ধারক এবং সরকারের কাছে তুলে ধরার একটি প্রক্রিয়া। এটি কেবল তথ্য দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মানুষের মনোভাব পরিবর্তন করে, তাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং জলবায়ু সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে। জলবায়ু যোগাযোগের চ্যালেঞ্জ অনেক। সামাজিক মিডিয়া এবং অন্য মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। জলবায়ু যোগাযোগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ এবং মানবসম্পদ থাকে না। শহরে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলেও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা কম। অনেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নেয় না। অন্যদিকে অনেকে মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তন একটি জটিল বিষয় এবং এটি সবার কাছে সহজে বোধগম্য হতে পারে না।
জলবায়ু যোগাযোগের উপায় হিসেবে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে। স্কুল-কলেজে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে তথ্য প্রচার করলে অনেকেই সচেতন হওয়ার পথ খুঁজে পাবে। বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করে মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আরও জানার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। কবিতা, গান, নাটক, চিত্র প্রদর্শনী, কনসার্ট ইত্যাদির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে মানুষের মনে স্পর্শ করা যেতে পারে। নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত নীতি গ্রহণের জন্য চাপ প্রয়োগ করার সুযোগ অনেক উপযোগী কৌশল।
স্থানীয় ভাষায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে সহজ করে বোঝানো যেতে পারে। কৃষক এবং সামাজিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং তার সঙ্গে মানিয়ে চলার উপায় বোঝানো। শিক্ষাক্রমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করা। সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জলবায়ু আন্দোলন গড়ে তোলা। স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় সমাধান খুঁজে বের করা এবং তা প্রচার করা। উদাহরণস্বরূপ, একটি গ্রামে জলোচ্ছ্বাসের পরের পরিস্থিতির ছবি দেখিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে। একটি গ্রামের একটি জলাশয়ের আগে এবং পরের ছবি তুলনা করে জলের স্তরের পরিবর্তন দেখানো যেতে পারে। একজন কৃষকের জীবনযাপন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তার ফসলের ক্ষতির গল্প শেয়ার করা যায়। বিশেষজ্ঞ, কৃষক, বা অন্য প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়ে তাদের মতামত এবং অভিজ্ঞতা জনগণের কাছে তুলে ধরে যায়।
সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় ভিডিওর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং জটিল তথ্যকে সহজ এবং দৃষ্টিনন্দন ইনফোগ্রাফিক্সের মাধ্যমে উপস্থাপন। জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আলোচনা তৈরি করা যায়। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত শিক্ষা প্রোগ্রাম চালু করা যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা করা এবং সমাধান খুঁজে বের করা। নিজের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাজ করার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা।
জলবায়ু যোগাযোগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন কৌশল এবং মাধ্যম ব্যবহার করে জনগণকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতন করা এবং তাদেরকে কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করা জরুরি। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :