নলেজ ইজ পাওয়ার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেলায় কথাটি শতভাগ প্রমাণিত। কারণ বিশ্বকে যেসব প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে তার প্রায় সবই মার্কিনিদের হাতে। বিশেষ করে বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো আমেরিকার দখলে। এ কারণে বিশে^র ‘মোড়ল’ রাষ্ট্র ধরা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। আর তারা এটি সম্ভব করেছে তাদের মেধা আর যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে। তরবারির দিন শেষ হয়েছে অনেক আগে। জ্ঞান আর তথ্য-প্রযুক্তিতে যারা এগিয়ে তারাই এখন দুনিয়ার নেতৃত্ব দেবে। শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে বিশ্বে যত নিত্যনতুন প্রযুক্তি আর অস্ত্র তৈরি হচ্ছে- সেক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে দেশটি। এসব নানা কারণেই আজও এক চেটিয়া দুনিয়া শাসন করছে আমেরিকা।
আমেরিকা যেহেতু ‘বিশ্ব মোড়ল’ তাই তাদের নির্বাচন নিয়ে বিশ^বাসীর আগ্রহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া মার্কিনিদের ওপর বিশ্ব শান্তির বিষয়টি খানিকটা নির্ভরও করে। কোন দল ক্ষমতায় এসে যুদ্ধের পথে বেশি হাঁটবে। আর কে প্রেসিডেন্ট হলে কার লাভ, কার ক্ষতি তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে বিশ্বজুড়ে। আর কোন দল জিতলে কার কপাল পুড়বে তাও নির্ভর করে খানিক ভোটের ওপর।
এই মুহূর্তে বিশ্বে বড় দুটি যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন আর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। এ যুদ্ধ দুটিতে অস্ত্র বিক্রিতে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয়ে থাকে বিশ্বে যুদ্ধ যত বাড়ে মার্কিনিদের অস্ত্র ব্যবসা ততই বেশি জমে ওঠে। তাই মার্কিন নির্বাচন নিয়ে বিশ্বজুড়ে এত বেশি আলোচনা।
চার বছর পর আসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবারের নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব্ব জুড়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নভেম্বরে হবে এ নির্বাচন। এবারের ভোটে রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে। কেননা, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে এবারের নির্বাচনে।
নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা। ব্যস্ত দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। প্রধান দুই প্রার্থীর মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে বিশ্ব গণমাধ্যম। বিশেষ করে ইসরায়েলের সন্ত্রাসী হামলার কারণে ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যখন ব্যাপক যুদ্ধের আশঙ্কা, ঠিক সেই সময়ের এ নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসী গুরুত্ব দিয়ে নজর রাখছে।
আন্তর্জাতিক নানা গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন এখন শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করে ইহুদি বংশোদ্ভূত মার্কিনিরা। সে কারণে ইসরায়েলের সব বর্বর কাজকে অন্ধভাবে সমর্থন দিতে থাকে মার্কিন প্রশাসন। তাছাড়া মার্কিন নির্বাচন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনেও বড় ভূমিকা রাখে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে বিশ্ব রাজনীতি আবর্তিত। তাই মধ্যপ্রাচ্য অশান্ত থাকবে কি না তা খানিকটা নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সদিচ্ছার ওপর।
এজন্য নির্বাচন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে কিন্ত এর হিসাব মেলাচ্ছে ইসরায়েলের ইহুদিরা। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে ভোটে জিততে ইহুদিদের কাছে টানছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে হারলে তার দায় ইহুদি আমেরিকানদের ওপর বর্তাবে। ট্রাম্প বলছেন, কমলা হ্যারিস জিতলে দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েল অস্তিত্বের সংকটে পড়বে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের তুলনায় কমলা হ্যারিসের পক্ষে আমেরিকান ইহুদিদের সমর্থন বেশি। এ জরিপে হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন ৬৫ শতাংশ ইহুদি এবং ৩৪ শতাংশ ইহুদি সমর্থন দিয়েছেন ট্রাম্পকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, ইহুদিদের ভোট পাল্টে দিতে পারে নির্বাচনের ফলাফল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দোদুল্যমান রাজ্য পেনসিলভেনিয়ায় ৪ লাখেরও বেশি ইহুদি রয়েছে। ওই রাজ্যে ২০২০ সালে ৮১ হাজার ভোটে জিতেছিলেন বাইডেন।
ভোটে কে জিতবেন তা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গবেষণা চালিয়েছে। বেশিরভাগ ফলাফল বলছে, জরিপে এগিয়ে আছে কমলা হেরিস। হার্ভার্ডের জরিপ বলছে, কমলা ২ পয়েন্টে এগিয়ে। এবিসি ও ইপসসের জরিপও একই কথা বলছে। তারাও এগিয়ে রাখছে কমলাকে। এবিসি নিউজের ফাইভথার্ট এইটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কমলার সমর্থন ৪৮ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৬ শতাংশ।
ওয়াশিংটন পোস্টের জরিপ বলছে, ৭টি রাজ্যের মধ্যে চারটিতে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। ট্রাম্প এগিয়ে আছেন দুটি রাজ্যে। অনলাইন দ্য হিল বলছে, জর্জিয়াতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করছেন শতকরা ৫১ ভাগ ভোটার আর ট্রাম্পের পক্ষে আছে ৪৭ ভাগ।
এসব পরিসংখ্যান বলছে, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট পেতে পারে মার্কিনিরা। এই যখন পরিসংখ্যান তখন মাথা গরম ডোনাল্ড ট্রাম্পের। নির্বাচনে জিততে ধর্মের ব্যবহার শুরু করেছেন তিনি। বিভিন্ন ধর্মের ভোটারদের কাছে টানতে নানা কৌশল নিচ্ছেন ট্রাম্প। এতে সুফলও পাচ্ছেন তিনি।
সৌদি সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ ও ব্রিটিশ জরিপ সংস্থা ইউগভ পরিচালিত জরিপ সুসংবাদ দিয়েছে ট্রাম্পকে। তারা বলছে, বেশির ভাগ আরব-আমেরিকান ভোটার নতুন করে ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছেন।
খ্রিস্টান ভোটারদেরকেও কাছে টানছেন ট্রাম্প। ২০ অক্টোবর নর্থ ক্যারোলাইনায় এক অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান ভোটারদের সমর্থন চান ট্রাম্প। নিজেকে খ্রিস্টানদের রক্ষাকারী দাবি করেন তিনি। অভিযোগ করেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস ক্ষমতায় এলে ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে না।
আরব নিউজ ও ব্রিটিশ জরিপ সংস্থা ইউগভ পরিচালিত পৃথক জরিপ বলছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলার কারণে সমর্থন কমেছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির। তাই আরব-আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ ভোটার ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। সমর্থন কমেছে কমলা হ্যারিসের। তবে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম নিষ্ঠুর ইসরায়েলি হামলাকে কেন্দ্র করে মুসলিম ভোটারদের কাছে টানতে চাইছেন ট্রাম্প।
আপনার মতামত লিখুন :